• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

অশান্ত পাহাড়ি-বাঙালি


প্রকাশিত: ৩:২২ এএম, ২ অক্টোবর ২৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৭ বার

 

00 খাগড়াছড়িতে শিক্ষককে পিটিয়ে খুন- 00 মবে মুখোমুখি দু’পক্ষ১৪৪ ধারা

খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা : পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে মব জাস্টিজ যেন ছাড়িছে না। ইতিমধ্যে মব জাস্টিজে পৃথক ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হলেও এখনো মুখোমুখি পাহাড়ি ও বাঙালিরা। এবার ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পর পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার ১ অক্টোবর দুপুরে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর পাহাড়ি ও বাঙালিরা খাগড়াছড়ি সদরে আবার মুখোমুখি অবস্থান নেন। দুই পক্ষই পৃথক মিছিল বের করে। সদরের মহাজনপাড়ার কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি–বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে উত্তেজনা দেখা দেয়। ধর্ষণের অভিযোগে তাঁকে পিটুনি দেওয়া হয়। এরপর বেলা ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই শিক্ষক সোহেল রানাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীরা। বেশ কয়েক বছর আগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। ওই ছাত্রী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেয় তিনি কোনো ধর্ষণের শিকার হননি। পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে যোগদান করেন। সোহেল রানা চাকরিতে যোগদানের পর থেকে পাহাড়ি ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ এনে প্রত্যাহার দাবি করে আসছিল। আজ ওই শিক্ষক বিদ্যালয় এলে ত্রিপুরা এক ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ এনে শিক্ষককে বেদম মারধর করতে থাকে।

সরেজমিনে জানা গেছে, পাহাড়িদের প্রতিবাদের মুখে আজ বিদ্যালয় থেকে রিলিজ অর্ডার নিতে এসেছিলেন আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হলো না। এ ঘটনায় স্কুলটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে সোহেল রানাকে অধ্যক্ষের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে ১০–১৫ জন পাহাড়ি তরুণ অভিযুক্ত শিক্ষক সোহেল রানাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এ সময় তাঁকে পুলিশসহ কয়েকজন রক্ষা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।

ঘটনার জের ধরে শিক্ষককে হত্যার প্রতিবাদে পাহাড়ি ও বাঙালি ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর হয়েছে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন কক্ষ ও আসবাবপত্র। আহত হয়েছেন ১৫-২০ জন। ঘটনার পর দুই পক্ষের উত্তেজিত লোকজন খণ্ড খণ্ড পক্ষে বিভক্ত হয়ে সদরে মহড়া দিতে শুরু করেন। দুই পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়। এখন ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাকর। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করলেও পুরো শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

এর আগে নিহত শিক্ষক সোহেল রানা প্রতিষ্ঠানটির বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ও সেফটি বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি সদরের খেজুরবাগান এলাকায়। এর আগে ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি কিছুদিন কারাগারে ছিলেন। এরপর একই প্রতিষ্ঠানে তিনি যেন আবার যোগদান না করেন, সে জন্য শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছিল। মঙ্গলবার আবার তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠানো হয়।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে মো. মামুন নামে এক যুবককে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মামুনের স্ত্রী হত্যা মামলা করেন পলাতক তিন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। তবে মামুনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি–বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে আগুন দেওয়া হয় দোকানপাটে। সংঘাতে দীঘিনালায় ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি মারা যান। ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি সদরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে রুবেল ত্রিপুরা ও জুনান চাকমা নামের দুজন মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর এ ঘটনার জের ধরে রাঙামাটিতে সংঘর্ষ হয়। সেখানে দোকানপাট ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। অনিক কুমার চাকমা নামের একজন মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। পরে তা তুলে নেওয়া হয়। এসব ঘটনায় দুই জেলায় পাঁচটি মামলা হয়েছে।