অভিনেত্রী হিমুর রহস্যজনক মৃত্যু-বয়ফ্রেন্ড লাশ রেখে চম্পট
বিনোদন রিপোর্টার : অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার লাশ রাখা হয়েছে উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে। অভিনয় শ্ল্পিীরা বলেছেন, তাঁর মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা রহস্য। কেউ বলছেন আত্মহত্যা, কেউ বলছেন হত্যা। কিন্তু এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঘটনার পর হিমুর বয়ফ্রেন্ড পালিয়ে গেছে হিমুর মোবাইল ফোন নিয়ে।
বৃহস্পতিবার হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৩ টার দিকে হিমুকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাকে একটি ছেলে উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেল নিয়ে যায়। তখন ডাক্তাররা হিমুকে দেখে বলেন, নিয়ে আসার আগের তিনি মারা গেছেন। তখন হাসপাতাল থেকে পুলিশকে খবর দেয়া হয়, এরই মধ্যে হাসপাতালে পুলিশ পৌঁছালে সেই ছেলেটি তার (হিমুর) ফোন নিয়ে সটকে পড়ে।
এদিকে পুলিশ বলছে, তদন্ত চলছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল যায়। হিমু উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ২ নং রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। তার সঙ্গে থাকত হিমুর এলাকার মিহির (৩৮) নামে একজন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার ২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৭টায় উত্তরা পশ্চিম থানার এস আই সাব্বির দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তিনি হোমায়রা হিমুর মরদেহ দেখতে উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে যাচ্ছেন। ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে নানা সন্দেহ রয়েছে। হিমুর এক বয়ফ্রেন্ডকে সন্দেহ করা হচ্ছে। লাশ সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত’র পর বলা যাবে আসলে কি ঘটেছে।
অভিনেতা নাসিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘হুমায়রা হিমু আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তার ছোট বোন মিহির ও প্রেমিক।নাসিম আরও জানিয়েছেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর কর্তব্যরত চিকিৎসক পুলিশে খবর দিলে হিমুর বয়ফ্রেন্ড তার ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন হোমায়রা হিমু। তবে কয়েক বছর ধরে অভিনয়ে খুব একটা নিয়মিত ছিলেন না। এ নিয়ে তাঁর মধ্যে একরকম অভিমানও কাজ করেছিল। বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ভিউ না থাকার কারণে তাঁকে সেভাবে অভিনয়ে সুযোগ দিতেন না পরিচালক ও প্রযোজকেরা। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে হিমুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। হোমায়রা হিমুর মৃত্যুর খবরটি আরো নিশ্চিত করেন অভিনয়শিল্পী উর্মিলা শ্রাবন্তী কর ।এ সম্পর্কে উর্মিলা জানান, হোমায়রা হিমুর মরদেহ এখন উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তাঁর মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। কেউ বলছেন আত্মহত্যা, কেউ বলছেন হত্যা। কিন্তু এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা গেছে, হোমায়রা হিমু ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। লক্ষ্মীপুরে ছোটবেলা কেটেছে হোমায়রা হিমুর। ক্লাস টুতে পড়ার সময় থেকেই কাজ করতেন মঞ্চে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল দেশ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিমু নিজেই বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকেই স্থানীয় হাইফাই কৌতুক শিল্পগোষ্ঠী ও ফ্রেন্ডস নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতেন তিনি।
১৯৯৯ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর ঢাকায় আসেন হিমু। প্রথমে ভর্তি হন নাগরিক নাট্যাঙ্গনে। এরপর কাজ করেন আরও কয়েকটি নাটকের দলে। এরপর এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ফটোশুট করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থায় মডেলিংয়ের জন্য জমা দেন। তখন এইডস নিয়ে সচেতনতামূলক একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। পরে দেখা যায় আরও কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে। একটি চায়ের বিজ্ঞাপনচিত্রে তাঁকে দেখার পর প্রথম হিমুকে নাটকে সুযোগ দেন নির্মাতা তাহের শিপন। নাটকের নাম ছিল ‘পি আই’। তাঁর প্রথম সহশিল্পী ছিলেন প্রয়াত দিলীপ চক্রবর্তী।
অভিনয় শ্ল্পিীরা জানান, ২০০৫ সালে বিনোদন দুনিয়ায় কাজ শুরু করেন হুমায়রা হিমু। এই সময়ে তাঁর আসল নাম হুমায়রা নুসরাত হিমু থেকে হোমায়রা হিমু হয়। তাঁর এই নাম বদলের পেছনে রয়েছে অভিনেতা টনি ডায়েসের ভূমিকা। এ প্রসঙ্গে দেশ টিভিকে দেওয়া একই সাক্ষাৎকারে হিমু বলেছিলেন, ‘টনি ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম একটা টেলিফিল্ম করি। উনি তখন আমাকে বলেন, “তুমি দুই অক্ষরের নাম দাও।” এর আগে আমি কেবল “হিমু” বলে পরিচয় দিতাম। তখন টনি ভাই বলেন, “পৃথিবীর যত বিখ্যাত মানুষ আছে সবার নাম দুই অক্ষরের।” এর পর থেকেই আমি হোমায়রা হিমু হয়ে যাই।’
হিমু যখন স্কুলের ছাত্রী, তখন তাঁর স্কুলের এক বড় বোন শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন করেন। ঢাকা থেকে শুটিং করে স্কুলে ফেরার পর সবাই তাঁকে দেখতে আসেন। তখন তাঁকে দেখেই টিভিতে কাজ করার ইচ্ছা হয়। তবে ছোটবেলায় হিমুর ইচ্ছা ছিল এয়ার হোস্টেজ হওয়ার। কিন্তু ঘটনাচক্রে হয়ে ওঠেন অভিনেত্রী।
টিভি নাটকে অভিনয় শুরুর পর নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় তাঁর অভিনয় দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। ‘সোনাঘাট’, ‘চেয়ারম্যান বাড়ি’, ‘বাটিঘর’, ‘শোনে না সে শোনে না’, ‘কমেডি-৪২০’, ‘চাপাবাজ’, ‘অ্যাকশান গোয়েন্দা’, ‘ছায়াবিবি’, ‘এক কাপ চা’, ‘এ কেমন প্রতিদান’, ‘হুলো বিড়াল’, ‘ছন্নছাড়া ৪২০’, ‘অ্যাম্বুলেন্স ডাক্তার’, ‘পাগলা প্রেমিক’ ইত্যাদি নাটকে দেখা গেছে তাঁকে।২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় হিমুর। সিনেমাটিতে তরু আপা চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।