• শুক্রবার , ১৫ নভেম্বর ২০২৪

‘অবৈধ রাষ্ট্রপতিরা পেনশন পাবেন না’


প্রকাশিত: ৮:৫৮ পিএম, ৪ অক্টোবর ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০২ বার

সংসদ রিপোর্টার  :  অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারী রাষ্ট্রপতিদের অবসর সুবিধার পথ বন্ধের বিধান রেখে 12সংসদে বিল পাস হয়েছে। সংসদের কাজে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী মঙ্গলবার ‘রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা বিল-২০১৬’ সংসদে উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

এর ‍আগে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বিলটি জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করলে তা নাকচ হয়। জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করেন তাদের দলীয় চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে বঞ্চিত করতেই এ বিলটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

১৯৭৯ সালের ‘প্রেসিডেন্টস পেনশন অর্ডিনেন্স’ বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়নের জন্য বিলটি সংসদে তোলা হয়েছে।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, অসাংবিধানিক পন্থায় বা অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বা হয়েছিলেন বলে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ঘোষিত হলে তিনি অবসর ভাতা পাবেন না।

সামরিক শাসনামলের জারি করা প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশগুলো আইনে পরিণত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর ‘রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা, আনুতোষিক  ও অন্যান্য সুবিধা আইন’ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করে।

প্রসঙ্গত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন। এরপর ১৫ আগস্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আর নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণাকারী মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ নিহত হওয়ার পর মোশতাকই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করে যান। ওই বছরই ৩ ও ৬ নভেম্বর সামরিক অভ্যুত্থানের পর বিচারপতি সায়েমকে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন; জিয়া হন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক।  ১৯৭৭ এর ২১ এপ্রিল স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ালে জিয়া ওই দায়িত্বও নেন। পরে ১৯৭৮ সালের ৩ জুন নির্বাচন দিয়ে রাষ্ট্রপতি হন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন।

জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল এইচ এম এরশাদ। তিনি নিজে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হয়ে রাষ্ট্রপতির আসনে বসান বিচারপতি এ এফ এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীকে। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর বিচারপতি আহসানুদ্দিনকে সরিয়ে এরশাদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন।

জিয়ার মতোই গণভোটের মাধ্যমে নিজের কর্তৃত্বকে বৈধ রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ ওই গণভোটে তিনি পান ৯৪.৫ শতাংশ ভোট। পরে ১৯৮৬ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেন এবং নির্বাচিত হন। ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ হারে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতা পাবেন বলে বিলে বলা হয়েছে।বিলে আরও বলা হয়েছে, যদি কোনও রাষ্ট্রপতি নৈতিক স্খলন বা অন্য কোনও অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হন তাহলে অবসর ভাতা পাবেন না। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি যদি এমন কোনও দফতর, আসনে বা মর্যাদায় দায়িত্ব পালন করেন যার জন্য তিনি সংযুক্ত তহবিল হতে বেতন বা অন্য কোন সুবিধা পাচ্ছেন তবে তিনি অবসর ভাতা পাবেন না।

এছাড়াও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিরা একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেড্যান্ট এবং দাফতরিক ব্যয় পরিচালনার খরচ পাবেন। এছাড়া তিনি একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধা, সরকারি অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বিনামূল্যে যানবাহন ব্যবহার, বাড়িতে টেলিফোন, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের ভেতরে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্ট হাউজে বিনা ভাড়ায় থাকতে পারবেন।

বিলে বলা হয়েছে, কোনও রাষ্ট্রপতি তার জীবদ্দশায় নিজে অথবা মৃত্যুবরণ করলে তার মনোনীত ব্যক্তি বা মনোনীত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার উত্তরাধিকারীরা এর আগে আনুতোষিক না নিলে তারা তা নিতে পারবেন।

মন্ত্রিসভায় বিলটি ওঠার দিন তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভুঁইয়া এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার কখনও পেনশন নেননি, কারণ ওই আইনটিই হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। তবে নতুন আইন পাস হলে বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারীরা তা পাবেন।’

বিলে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি অন্যূন ছয় মাস রাষ্ট্রপতির পদে থাকলে বা মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদে না থাকলে তিনি আমৃত্যু অবসর ভাতা পাবেন।

এদিকে বিলটি জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব তোলার সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, জেনারেল জিয়া ও আমাদের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যেভাবে ক্ষমতায় এসেছেন; সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের পর আর এভাবে ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। কিন্তু একজন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে আইন করা ঠিক হবে না। শুধু এরশাদকে লক্ষ্য করে, এক ব্যক্তির জন্য আইন করা ঠিক নয়। আমরা তিনবার ক্ষমতায় এসেছি, মহাজোটেও আছি।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আদালতের রায়ে ১৯৮৬ সাল থেকে এরশাদের শাসনামলকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এরপরও তার সুবিধাদি কেড়ে নেওয়া ঠিক হবে না। বিষয়টি আইনি এবং আইনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট শেষ করেছে। এটা তার জন্যে প্রযোজ্য করা উচিৎ হবে না।

নুরুল ইসলাম মিলন বিলটি জনমত যাচাইয়ের জন্য পাঠানোর অনুরোধ করে বলেন, কেউ যদি ছয় মাসের জন্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন উনি ভাতাসহ সুবিধাদি পাবেন। আর ১৯৮৬ সাল থেকে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এরশাদ। সেক্ষেত্রে তিনিও আদালতের রায় অনুযায়ী আনুতোষিক ভাতাসহ সব সুবিধা পাবেন।

এর জবাব দিতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জাতীয় পার্টির সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, নিজেরাই কেন নিজেদের দুর্বলতার দিক টেনে আনলেন। বিলে তো কারও নাম লেখা নেই। নিজেরাই প্রকারন্তরে স্বীকার করলেন যে জেনারেল এরশাদ মার্শাল ল’ দিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। চুপ করে থাকলেই তো হতো। তবে এরশাদ সুবিধার আওতায় থাকছেন নাকি বঞ্চিত হচ্ছেন তা তিনি স্পষ্ট করেননি।