অবশেষে নির্বাচনমুখী বিএনপি-খালেদার নির্দেশ প্রস্তুতি নিন!
এস রহমান : অবশেষে নির্বাচনমুখী বিএনপি খালেদা জিয়া নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন-মিটিং মিছিল শুরু করুন! নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে প্রশ্ন তুললেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যেই ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে দলটি। এ লক্ষ্য সামনে রেখে দলের সিনিয়র নেতাদের দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে নিজ-নিজ নির্বাচনি এলাকায় সভা-সমাবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শনিবার রাতে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলটির ভাইস-চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া সিনিয়র নেতারা এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভাইস চেয়ারম্যানরা জানান, শনিবার রাতের বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একে এম নুরুল হুদার নিরপেক্ষতা, বিগত দিনের কার্যক্রম, সিইসি হওয়ার পর ফুলেল শুভেচ্ছাপ্রাপ্তির বিষয়টি নিয়ে অংশগ্রহণকারী প্রায় প্রত্যেকেই কথা বলেন। বৈঠকে বিএনপির অন্তত ২০জন ভাইস চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলোচনার মুখ্য বিষয়গুলো নোট করেন।
দলটির একজন ভাইস চেয়ারম্যান জানান, বৈঠকে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যানরা বলেছেন, নতুন সিইসির নিরপেক্ষতার প্রশ্নটি ইতোমধ্যে উঠেছে। নতুন সিইসির অভিজ্ঞতার স্বল্পতা, করপোরেট একটি গ্রুপে চাকরি করা, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকরাসহ বিভিন্ন বিষয়েও কথা বলেছেন তারা।
সূত্র জানায়, বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনের মধ্য দিয়েই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে যে আলোচনা চলছে, তা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় বলে বৈঠকে মত দেন কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে, এটি খুব সাধারণ বিষয়। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচনই চূড়ান্ত। কিন্তু ইসির নিরপেক্ষতা, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার হবে কিনা, হলে ধরন কী হবে—এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’
ওই নেতারা আরও জানান, প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে সবার প্রতিক্রিয়া শোনেন খালেদা জিয়া। এরপর তিনি সময় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে যার যার নির্বাচনি এলাকায় যেতে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রত্যেক ভাইস চেয়ারম্যানকেই তাদের নিজ নিজ জেলায় সভা ও সমাবেশ করার পরামর্শ দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নতুন ইসি, সহায়ক সরকারসহ নানা বিষয়েই আলোচনা করা হয়েছে। তবে কমিটি ঘোষণার পর এটাই প্রথম বৈঠক করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এটি পুরো কমিটির সঙ্গে সিরিজ বৈঠকের অংশ হিসেবেই হয়েছে। কী আলোচনা হয়েছে—সম্পর্কে আযম খান বলেন, দলের চেয়ারপারসন প্রত্যেককেই যার যার এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
শনিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে কথা হয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে। তিনি জানান, তিনি সাংগঠনিক ও পারিবারিক একটি কাজে চট্টগ্রামে থাকায় বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি। তবে তার ভাষ্য, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়েই আলোচনা হতে পারে।
যতদূর জানি, বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সংগঠন গোছানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত নির্বাচন ও আন্দোলন সংগ্রামের অংশগ্রহণের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। আর বিএনপি নির্বাচনমুখী দল, সে কারণে সরকার চাইলেও অপ্রস্তুত করে দিয়ে নির্বাচন দেবে, এ নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই।’ তিনি মনে করেন, ‘সরকার চাইলেও আরেকটা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না।’
বিএনপি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চে কাউন্সিলের পর নতুন কমিটি হয় একই বছরের ৬ আগস্ট। ওই দিনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে করে পুরো কমিটির নাম জানিয়েছিলেন। মোট ৬০২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে ১৭ জন স্থায়ী কমিটিতে, ৭৩ জন উপদেষ্টা, ৩৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম-মহাসচিব, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক মিলে ১৭৪ জন এবং সদস্য রাখা হয়েছে ২৯৩ জনকে। সদস্যদের মধ্যে ১১৩ জন নতুন। এছাড়া ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয় ওইদিনে।
দলটির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, ‘নতুন কমিটি ঘোষণার পর এটাই ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার প্রথম বৈঠক। ধারাবাহিকভাবে দলের অন্যান্য স্তরের নেতার সঙ্গেও বৈঠক করবেন দলীয় চেয়ারপারসন। ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দলের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া।