অবশেষে নিখোঁজ সাবেক রাষ্ট্রদূত ফিরেছেন
স্টাফ রিপোর্টার : অবশেষে নিখোঁজ হওয়ার সাড়ে ১৫ মাস পর পরিবারের কাছে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান।তার এক স্বজনের বরাত দিয়ে ধানমন্ডি থানার ওসি আবদুল লতিফ শনিবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়েছেন।বিদেশ ফেরত মেয়েকে বিমানবন্দর থেকে এগিয়ে আনতে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ধানমণ্ডির বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন মারুফ জামান।মারুফ জামান এতদিন কোথায় ছিলেন, কে বা কারা তাকে নিয়ে গিয়েছিল-সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।
ওসি লতিফ জাতিরকন্ঠ কে বলেন, তার মেয়ে বলেছে, গতরাতে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তার শরীর ভালো না। তিনি কারো সাথে কথা বলার অবস্থায় নেই।পরে পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. আব্দুল্লাহেল কাফি বলেন, গতকাল রাত ১টার দিকে উনি ধানমণ্ডি ৯/এ সড়কে তার বাসার কাছে উদভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করছিলেন। বাসার নিরাপত্তা কর্মীরা দেখে তার মেয়েকে খবর দেয়। এরপরে মেয়ে এসে তাকে বাসায় নিয়ে যান।
মারুফ জামান সর্বশেষ ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকায় রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীসহ ডজনখানেক মানুষ নিখোঁজ হন। তাদের মধ্যে ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়সহ কয়েকজন কিছু দিনের মধ্যেই পরিবারের কাছে ফিরে আসেন। মারুফ জামান নিখোঁজের পরদিন ধানমণ্ডি থানায় একটি জিডি করা হলেও এতদিন তার কোনো খবর দিতে পারেনি পুলিশ।
নিখোঁজ হওয়ার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মারুফ জামান ধানমণ্ডির বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বেরোনোর ঘণ্টাখানেক পর তিনি বাসায় ফোন করে কয়েকজন লোক গেলে তাদের কাছে তার ল্যাপটপ দিতে বলেন বলে সে সময় জানিয়েছিলেন তার ভাই রিফাত জামান।পরে তিনজন ‘সুঠামদেহী’ লোক বাসায় আসে, যাদের দুজন ইয়াং। তারা একটি ল্যাপটপ, কম্পিউটারের সিপিইউ, ক্যামেরা ও একটি স্মার্টফোন নিয়ে যায়, উনার ঘরে তল্লাশিও করে, বলেছিলেন তিনি।পরে ওই রাতে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলমুখী তিনশ ফুট সড়কে মারুফ জামানের গাড়িটি পাওয়া গিয়েছিল।
তার ভাই রিফাত জানান, ২০১২ সালের এপ্রিলে তাদের মা মারা যান। এরপর ওই বছর ডিসেম্বরে ভাইয়ের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। পরের বছর বাবা মারা যান।এসব কারণে ভাই (মারুফ জামান) মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।ধানমণ্ডিতে পৈত্রিক জমিতে করা ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলায় থাকেন মারুফ জামান।রিফাতের ভাষ্য অনুযায়ী, মারুফ জামান ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীতে সিগন্যাল কোরের ‘ষষ্ঠ শর্ট কোর্সে’ ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দেন। পরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ওই চাকরি থেকে চলে আসেন।
১৯৮২ সালে আর্মি থেকেই ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। প্রথম দিকে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি ছিলেন। পরে ২০০৭ সালের পর থেকে কাতারে এবং তারপর ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন মারুফ জামান।পরে মারুফ জামান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্ট্যাডিজে (বিআইএসএস) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ছিলেন। ২০১৩ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি।