অবশেষে খালেদা জিয়ার বোধোদয়-তরুণ নেতৃত্বে বদলে যাচ্ছে বিএনপি
নীপা খন্দকার .ঢাকা: অবশেষে খালেদা জিয়ার বোধোদয়-তরুণ নেতৃত্বে বদলে যাচ্ছে বিএনপি ।ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব নিয়েও আলোচনা চলছে। চেয়ারপারসন চাইছেন মহানগরে তরুণ নেতৃত্ব। শুধু মহানগরেই নয়, কেন্দ্রীয় বিএনপিতেও আগামীতে তরুণ নেতৃত্বকে সর্বাধিক বিবেচনায় নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বিগত ৫ জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে টানা তিন মাসের আন্দোলনে মাঠে নামতে পারেননি মির্জা আব্বাস নেতৃত্বাধীন ৫২ সদস্যের হাইপ্রোফাইলের আহ্বায়ক কমিটি। অবশ্য মাঝেমধ্যে হরতাল-অবরোধে মাঠে নামতে দেখা গেছে কমিটির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে।
মামলায় পর্যুদস্ত থাকা ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাচ্ছেন মির্জা আব্বাস। তার এ অবস্থান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কানেও পৌঁছেছে। তাই দল গোছানোর অংশ হিসেবে ঈদুল ফিতরের পর ঢাকা মহানগরকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর চিন্তাভাবনা করছেন বিএনপি-প্রধান।
সাংগঠনিক ও আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তা কাটাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণে দুই ভাগে সাংগঠনিক কাঠামো করার নীতিগত সিদ্ধান্তও রয়েছে। বিভক্ত দুই মহানগরীতে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব আনারও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বেগম জিয়ার।
দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পরপরই মামলার খড়গ নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান মির্জা আব্বাস। এর আগে অবশ্য ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কমিটিই খালেদা জিয়ার অনুমোদন করাতে পারেননি। বিগত ৫ জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে টানা তিন মাসের আন্দোলনে মাঠে নামতে পারেননি মির্জা আব্বাস নেতৃত্বাধীন ৫২ সদস্যের হাইপ্রোফাইলের আহ্বায়ক কমিটি। অবশ্য মাঝেমধ্যে হরতাল-অবরোধে মাঠে নামতে দেখা গেছে কমিটির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে।
জানা যায়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগরে তরুণ নেতৃত্ব আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ে দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলেন বিএনপি-প্রধান। এ সময় আলোচনায় আসে সদ্য সমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ বিগত তিন মাসে রাজপথের আন্দোলনে ঢাকা মহানগরে সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের আৎদগোপনে থাকার বিষয়ও তুলে ধরেন কেউ কেউ। এ সময় বেগম জিয়া তরুণ নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর কমিটি করার কথা জানান।
মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা বলেন, সব কিছুই নির্ভর করছে বিএনপি চেয়ারপারসনের ওপর। ঈদের পর নতুন কমিটি করার কথা আলোচনায় রয়েছে। নতুন কমিটি হলে আগের সব কমিটিই ভেঙে দেওয়া হবে। ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে নতুনভাবে কাউন্সিল করে কমিটি করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
গত বছরের ১৮ জুলাই মির্জা আব্বাসকে মহানগর আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে ৫২ সদস্যের হাইপ্রোফাইলের ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই মাসে কাউন্সিল করে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কয়েক দফায় উদ্যোগ নিয়েও থানা-ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি দলটি। অবশ্য কয়েক মাস ধরেই মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে দায়িত্ব পাওয়া নেতারা আৎদগোপনে। এখন পর্যন্ত তারা প্রকাশ্যে আসতে পারেননি।
জানা যায়, প্রাথমিকভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও উত্তরে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নাম আলোচনায় রয়েছে। সোহেল বর্তমানে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব এবং আলাল যুবদলের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। দক্ষিণের কমিটিতে মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাসও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। উত্তরে কেউ কেউ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের কথা তুলে ধরলেও বেগম জিয়া স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘তাবিথ রাজনীতিতে না এসেও তরুণদের নিয়ে আলাদা প্লাটফরম গড়ে তুলতে পারে। তার মধ্যে সেই সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া তার স্ত্রীও উচ্চশিক্ষিত। আমি তাদের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের নিয়ে কাজ করতে বলেছি।’
মহানগরের কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, তিন সিটি নির্বাচনের পর বিএনপিকে পুনর্গঠন করার চিন্তাভাবনা চলছে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব নিয়েও আলোচনা চলছে। চেয়ারপারসন চাইছেন মহানগরে তরুণ নেতৃত্ব। শুধু মহানগরেই নয়, কেন্দ্রীয় বিএনপিতেও আগামীতে তরুণ নেতৃত্বকে সর্বাধিক বিবেচনায় নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে শিগগিরই মহানগর বিএনপি দুই ভাগ হতে পারে। মামলায় পর্যুদস্ত হয়ে আত্মগোপনে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নিজে থেকেই মহানগরের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তিনি এমনটাই আভাস দিয়ে বলেছেন, মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে নিজেকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেবেন। দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়েই ছিল। কিন্তু তিন মাসের টানা আন্দোলনের কারণে শেষ পর্যায়ে এসে ওই কমিটি খালেদা জিয়ার কাছে জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণেই কমিটিও ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।তবে মহানগরের নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেও থানা-ওয়ার্ডের গঠিত কমিটিগুলোকে কাজে লাগাতে পারবে নতুন নেতৃত্ব।