• মঙ্গলবার , ২৬ নভেম্বর ২০২৪

অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬ চার জেএমবি খতম যেভাবে-


প্রকাশিত: ৭:১৩ পিএম, ১৬ মার্চ ১৭ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৫ বার

oparation assalt-16-www.jatirkhantha.com.bd
চট্টগ্রাম থেকে বিশেষ প্রতিনিধি  :  অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬ অভিযানে চার জেএমবি খতম হয়েছে। রাতভর মুহুর্মুহু গুলি চলেছে। স্বজনদের কেটেছে উৎকণ্ঠিত বিনিদ্র রাত। ভোরের আগে কিছুটা শান্ত। চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসতেই বিকট শব্দে কেঁপে উঠে চারদিক। ছায়ানীড়ের আকাশে আগুনের হলকা। এভাবে শেষ হয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চৌধুরীপাড়ার ছায়ানীড়ে জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৮ ঘণ্টার দুঃসাহসিক অভিযান অ্যাসল্ট-১৬।

oparation assalt-16-www.jatirkhantha.com.bd.1বুধবার বিকেল ৪টা থেকে শুরু হওয়া অভিযান শেষ হয় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায়। অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন নারী-শিশুসহ ২১ জন। তাদের মধ্যে একবৃদ্ধকে ২৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়। মিলেছে নারীসহ চার জঙ্গির লাশ। তাদের মধ্যে দুই জঙ্গি গুলিতে ও অপর দুই জঙ্গি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন।

দেশের ইতিহাসে আত্মহননে এত শক্তিশালী বোমা আর ব্যবহার হয়নি। এর আগে অভিযান চলাকালে আহত হয়েছেন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্য। বাড়িটি থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
oparation assalt-16-www.jatirkhantha.com.bd.2
অভিযানের বর্ণনা দিয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ মহাপরিদর্শক(ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘ভবনটিতে আটকে পড়া সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদে বের করে আনতে বুধবার থেকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়েছি। রাতেও কয়েকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি।

বৃহস্পতিবার সকালে ৬টা থেকে অপারেশন শুরু করি। পাশের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে আমাদের সোয়াতের সদস্যরা মূল ভবনে যায়। সঙ্গে সঙ্গে দু’জন ভবনের ভেতরে নিচ থেকে আল্লাহু আকবর ধ্বণি দিয়ে উপরের দিকে উঠে আসে। তাদের শরীরে সুইসাইডাল ভেস্ট বাঁধা ছিল। তা বিস্ফোরণের চেষ্টা করে। সোয়াতের সদস্যরা গুলি করলে একজন পড়ে যায়। আরেকজনেরটি বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় ভবনের বিভিন্ন দিকে জানালাগুলো খুলে মানুষজনকে বের করে আনি।’gongi-www.jatirkhantha.com.bd.--------------

বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িটির কাছাকাছি গিয়ে দেখা গেছে ছায়ানীড় ভবনটির দেওয়ালে গুলির দাগ। ছাদে পড়ে আছে নিহত জঙ্গিদের শরীরের বিভিন্ন অংশ। ছড়িয়ে আছে বিস্ফোরণের চিহ্ন। বিস্ফোরণে উড়ে গেছে ভবনটির সিঁড়ি ঘর। ভবনটি থেকে প্রায় একশ গজ দূরে আরেকটি ভবনের ছাদে দেহের একাংশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ভবনটির প্রায় পাঁচশ গজ দূরে কৃষি জমিতেও দেহের বিচ্ছিন্ন অংশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। শক্তিশালী আত্মঘাতি বোমার বিস্ফোরণে জঙ্গিদের দেহের বিভিন্ন অংশ উড়ে গেছে বলে জানান পুলিশের কর্মকর্তারা।

বাড়ির মালিকের ছেলে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমি শহরে থাকি। মা  ও ভাই বাসায় থাকেন। প্রায় দেড়মাস আগে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ছয় হাজার টাকায় স্বামী-স্ত্রী বাসা ভাড়া নেয়। তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রও নেওয়া হয়। তারা যে জঙ্গি তা গতকালের আগে কেউ বুঝতেও পারেনি।’

রাতভর থেমে থেমে বোমা বিস্ফোরণ চলতে থাকে ওই ভবন থেকে। পুরো এলাকাজুড়ে ছিল আতঙ্ক। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে পুরো এলাকার লোকজন। জঙ্গিরা রাতে নয়টি ও সকালে তিনটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটনায় বলে জানান কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সকালে ছয়টার দিকে অভিযান শুরু করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস(সোয়াত), বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল, ক্রাইম টেরোরিজম ইউনিট ও জেলা পুলিশের সদস্যরা।

প্রায় তিনঘণ্টা দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে বের করে আনা হয় আটকে পড়া বাসিন্দাদের। এরপর বাসায় প্রবেশ করে সোয়াতের সদস্য ও পুলিশে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তবে ভবনের সিঁড়িতে নারী জঙ্গির পড়ে থাকা মরদেহে সুইসাইডাল ভেস্ট ও গ্রেনেড থাকায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

জঙ্গিরা আত্মহননের আগে ভবনের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী পাইপবোমা ও গ্রেনেড ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে যায়। যা উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করছে বোমা নিষ্ক্রিয় দলের সদস্যরা।

এ প্রসঙ্গে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আত্মঘাতী জঙ্গিদের আত্মহননের ক্ষেত্রে এত শক্তিশালী বোমার ব্যবহার অতীতে বাংলাদেশে ঘটেনি। ৩ থেকে ৪ কেজি ওজনের যে বোমার বিস্ফোরণ তারা ঘটিয়েছে এটা যদি কোন জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরণ করা হতো, তাহলে ৫০ গজের মধ্যে থাকা সবাই মারা যেত। এ সীমানার বাইরে থাকা বাকিরা গুরুতর আহত হতো।’

বাড়ির মালিক পুলিশ হেফাজতে
ছায়া নীড় ভবন বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া লোকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভবন মালিক রেহেনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

সীতাকুণ্ড থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার বলেন, ‘জঙ্গিদের বিষয়ে কোন তথ্য আছে কি না তা জানতে ছায়া নীড় ভবনের মালিককে থানায় রাখা হয়েছে। তবে সকালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, বাড়ির মালিকের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।