অন্তর্বর্তী সরকার বিভেদ উসকে দিচ্ছে: তারেক রহমান
‘অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে বিভেদ উসকে দিতে চায়। জনগণের মনে এমন সন্দেহ তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
স্টাফ রিপোর্টার : সরকারকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে বিভেদ উসকে দিতে চায়। জনগণের মনে এমন সন্দেহ তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক দলের সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যোগাযোগের জন্য মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনো বিদেশি শক্তি বা অনির্বাচিত গোষ্ঠীর কাছ থেকে নয় বরং জনগণের নির্বাচিত সংসদ থেকে আসা উচিত। তারেক রহমান বলেন,‘দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণকে জানায়নি অন্তর্বর্তী সরকার। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করেনি। জনগণ না জানিয়ে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কি না, সেই বিতর্ক তুলতে চাই না। তবে স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মনে করে, করিডর দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে, সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশে দেশে এটাই রীতি।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের স্বার্থ নয়, সবার আগে সরকারকে দেশের মানুষের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে। মায়ানমার, ভারত বা অন্য দেশ নয়, সবার আগে বাংলাদেশ। এটি হতে হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। বৈষম্যহীন নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা।’
জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সবাইকে ভালো রাখার জন্যই বিএনপির রাজনীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দর্শন হলো জনগণের কল্যাণে কাজ করা। বিএনপি সরকার প্রতিবারই মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে জনগণের কল্যাণে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছে। এ কারণে কখনোই বিএনপির নেতাকর্মীদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়নি।’
দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত দেড় দশকে স্বাধীন বাংলাদেশকে পরাধীনতার শিকলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। দুর্নীতি দুঃশাসন চালিয়ে পলাতক স্বৈরাচার জনগণকে স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, জনগণকে করেছিল ক্ষমতাহীন। ৫ আগস্ট হাজারো শহিদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন হলেও জনগণের রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকার এখনো পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ জন্য শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে নিজেদের দুঃখ দুর্দশার কথাগুলো সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।’
সরকারকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান আরও বলেন, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করুন। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। অন্তবর্তী সরকারের পথনকশা স্পষ্টভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরুন। তাহলে জনগণের সন্দেহ-সংশয় কেটে যাবে। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন নির্বাচন।’
বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৮ কোটির বেশি উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এর মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। শ্রমজীবী এসব মানুষ বাংলাদেশে উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রাণ। কৃষক, দিনমজুর, মেহনতি এসব মানুষদের অধিকার বঞ্চিত রেখে কাঙ্ক্ষিত মুক্তিযোদ্ধার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। শ্রমজীবী মানুষের প্রত্যাশা, এমন একটি রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যা তাদের অধিকার ও প্রত্যাশা নিশ্চিত করবে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করার পর শ্রমের ন্যায্য মজুরি পাবেন। রাষ্ট্র ও সমাজে আপনাদের অধিকার নিশ্চিত থাকবে- এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা সবার প্রত্যাশা। এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে সবাই ভালো থাকবেন। শ্রমিকরা ভালো থাকলে দেশ ভালো থাকবে, দেশ ও জনগণ ভালো থাকলে কেউ বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে না। দেশের স্বাধীনতা রক্ষা, দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখার জন্যই বিএনপির রাজনীতি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন দেওয়া যৌক্তিক নয় বলে মনে করে জনগণ। বিশেষ পরিস্থিতির সরকার অবৈধ নয়, কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয়। কেউ যখন একক ব্যক্তিকে অপরিহার্য মনে করে তখনই স্বেচ্ছাচারিতা তৈরি হয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মনে যাতে বিনাভোটে ক্ষমতা ধরে রাখার ইচ্ছা না আসে, সে জন্যই নির্বাচন প্রয়োজন।’
এর আগে, ‘মে দিবস দিচ্ছে ডাক, বৈষম্য নিপাত যাক’- এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে নয়া পল্টনে শুরু হয় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের শ্রমিক সমাবেশ। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের লম্বা সড়ক সেই ফকিরাপুল থেকে শুরু করে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত হাজারও শ্রমিকের উপস্থিতিতে সমাবেশটি রূপ নেয় জনসমুদ্রে। সমাবেশে মাথায় লাল টুপি, গায়ে লাল গেঞ্জি পরে আসা শ্রমিকদের কণ্ঠের অন্যতম স্লোগান ছিল, ‘দুনিয়া মজদুর এক হও, লড়াই করো’। আন্তর্জাতিক শ্রমিকদের এই সার্বজনীন স্লোগানের পাশাপাশি ‘অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন চাই, নির্বাচন দিতে হবে দিতে হবে’ এই স্লোগানও উচ্চারিত হয়েছে সর্বক্ষণ।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি ও শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক সুমন ভুইয়া, সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজ, উত্তরের সদস্য সচিব কামরুল জামান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ।