• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

অনুপ চেটিয়া ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে শান্তি আনবে


প্রকাশিত: ৪:৫৬ এএম, ১৩ নভেম্বর ১৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮১ বার

anup-chatiya-www.jatirkhantha.com.bdওয়ান ইন্ডিয়া থেকে টিপু সুলতান:   ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম তথা উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে নিজেদের হাতে পাওয়ার মধ্য দিয়ে ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। অনুপ চেটিয়া ওরফে গোলাপ বড়ূয়া এর আগে ১৭ বছর বাংলাদেশে কারাবন্দি জীবন কাটিয়েছেন এবং শেষ দিকে তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনেও চিঠি লিখেছিলেন, যার সাড়া মেলেনি। বাংলাদেশ সরকারও শেষ পর্যন্ত তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর না করে বরং ভারতের হাতে তুলে দেওয়াকেই শ্রেয়তর মনে করেছে। ভারতে অনুপ চেটিয়ার প্রত্যাবর্তন এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঘটল, যখন নরেন্দ্র মোদি সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং ওই অঞ্চলের কয়েকটি বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে ইতিমধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে সক্ষম হয়েছে।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর অনুপ চেটিয়া ইতিমধ্যে এগিয়ে যাওয়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শান্তি চুক্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবেন আশা করা যায়। বিভিন্ন সূত্রমতে, তিনি এখন শান্তি আলোচনায় সরাসরি অংশ নেবেন। ওই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে তার উপস্থিতি সহায়ক হবে এই কারণে যে, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীটির আলোচনাপন্থি অংশও অনেক সময় আলোচনার ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিমরাজি থাকত নানা কারণে। এর একটি কারণ শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে অনুপ চেটিয়ার অবস্থান সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। তিনি কেবল উলফা বিদ্রোহীদের মধ্যে সবচেয়ে তুখোড় নেতা নন, তুমুল জনপ্রিয় ও ব্যাপক প্রভাবশালী। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করেন, আসাম থেকে দূরে বাংলাদেশের জেলে ১৭ বছর কাটালেও উলফার মধ্যে তার অনুসারীর সংখ্যাই এখনও সবচেয়ে বেশি। এখন স্পষ্টতই তিনি আলোচনাপন্থি নেতা অরবিন্দ রাজখোয়ার সঙ্গে যোগ দেবেন। এতে করে গত কয়েক বছরে মাত্র ছয়বার আলোচনায় বসতে সক্ষম হওয়া রাজখোয়াকে এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আরও ঘন ঘন আলোচনার টেবিলে দেখা যাবে। এখনও দোদুল্যমান্যতায় থাকা অন্যান্য উলফা নেতা ও কর্মীদের ওপরও অনুপ চেটিয়ার উপস্থিতির প্রভাব পড়বে।
অনুপ চেটিয়ার প্রত্যাবর্তন ও আলোচনায় যোগদান একই সঙ্গে পুরনো অনেক ক্ষত সেরে ওঠারও লক্ষণ। বাংলাদেশের পক্ষে দীর্ঘদিন এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে ঐকমত্য প্রদর্শিত হয়নি। দুই প্রতিবেশী দেশ এখন পরস্পরকে সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করেছে। যার ফলে অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরে দিলি্লর অনুরোধে সাড়া দিয়েছে ঢাকা। এর প্রভাব দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য ক্ষেত্রেও পড়বে এবং পুরনো ক্ষত সারাতে সহায়ক হবে। একইভাবে উলফার আলোচনাপন্থি অংশের সঙ্গেও পুরনো কিছু বিষয় মীমাংসা বা ক্ষত সারানোতে সহায়ক হবে অনুপ চেটিয়ার উপস্থিতি। ২০১১ সালে আলোচনা শুরুর সময় থেকেই উলফার পক্ষে সরকারের কাছে কিছু দাবিনামা দেওয়া হয়েছে পূর্বশর্ত হিসেবে। সেগুলোর ব্যাপারে দুই পক্ষের অবস্থান দুই মেরুতে হওয়ার কারণে ছয় দফা আলোচনা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে অগ্রগতি সামান্যই দেখা গেছে। ভারতীয় পক্ষ এখন আশাবাদী হতে পারে যে, অনুপ চেটিয়ার উপস্থিতি সেসব ব্যবধান কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে এবং আলোচনা গতি পাবে ও সম্প্রসারিত হতে থাকবে।