• বুধবার , ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

অনিয়ম দুর্নীতিতে বেহাল মনিপুর স্কুল


প্রকাশিত: ৪:৪৩ এএম, ১৯ মে ২৩ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৬ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিরোধের জেরে অচলবস্থা দেখা দিয়েছে রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে। শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচির কারণে শুরু হয়েছে এই অচলবস্থা। মূলত আদালতের নির্দেশনায় সরকার মনোনীত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগে শুরু হয় অস্থিরতা।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাডহক কমিটি জাকির হোসেনকে অব্যাহতি দিয়ে সহকারী শিক্ষক মো. আখলাক আহমেদকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়। কিন্তু শিক্ষকরা তার নিয়োগ মানতে অস্বীকৃতি জানান। ওইদিকে আখলাক আহমেদও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। এর ফলে বুধবার থেকে স্কুলটিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে আজ সকালে ক্যাম্পাস আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সকালে ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষকরা। তারা মূল বালিকা শাখায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের লোকজন শিক্ষকদের কর্মসূচিতে বাধা দেন। তাদের সঙ্গে মারামারির ঘটনাও ঘটে। এতে কয়েকজন শিক্ষক, শিক্ষিকা আহত হয়েছেন। পরে স্কুলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়া নিয়ে ঝামেলা চলে আসছিল। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে আসে। কয়েকমাস আগে আদালতের নির্দেশনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্কুলটিতে সিনিয়র শিক্ষক জাকির হোসেনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি এই চিঠি প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানো হয়। গেল ১২ মার্চ শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অধীনেই চলবে মনিপুর স্কুল। তার এই ঘোষণায় তখনকার সংকট কেটে গেলেও নতুন করে সংকটের মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শিগগির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বর্তমান অ্যাডহক কমিটি আদালতের নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়ে নতুন একজনকে নিয়োগ দেয়। যা মানছেন না শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে মনিপুর স্কুলে আসেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি অ্যাডহক কমিটির নিয়োগ দেওয়া শিক্ষক আখলাক আহমেদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু শিক্ষকরা তাৎক্ষণিক জাকির হোসেনের পক্ষে কথা বলেন। আখলাক আহম্মদকে মানবেন না বলে ঘোষণা দেন। পরে স্কুল ত্যাগ করার সময় আখলাক আহম্মদকে প্রতিমন্ত্রী সঙ্গে করে নিয়ে যান বলে জানা গেছে। আগামী ২৩ মে বর্তমান গভর্নিং বডির মেয়াদ শেষ হবে। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাড়াহুড়া করে তাদের মনোনীত এই শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এদিকে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্যাডে জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে, প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্বাক্ষরিত মো. আখলাক আহমেদ যে নোটিশটি জারি করেছেন তা বিধি সম্মত নয়। কারণ তিনি উক্ত নোটিশ জারি করার আইনগত অধিকার রাখেন না। উক্ত বিভ্রান্তমূলক নোটিশটি আমলে না নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার জন্য অনুরোধ করা হলো। শুভেচ্ছান্তে। প্রধান শিক্ষক।

এদিকে অ্যাডহক কমিটির নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক আখলাক আহমেদ আন্দোলনের কারণে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি দিয়েছেন। তিনি স্কুলের প্যাডে দেওয়া অব্যাহতি পত্রে লিখেছেন, আমি আখলাক আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি নিলাম।

মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমে বলেন, স্কুলের বিষয়ে আমরা নজর রাখছি। তবে অ্যাডহক কমিটি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহসীন আলী বলেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষককে বাদ দিয়ে নতুন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে অ্যাডহক কমিটি। এদিকে নতুন প্রধান শিক্ষককে অবৈধ ঘোষণা করে শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে নোটিশ দিয়েছেন বর্তমান প্রধান শিক্ষক। নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন শিক্ষকরা। এ অবস্থায় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়ন করা হয়। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ায় পুুলিশ তুলে নেওয়া হয়েছে।