• মঙ্গলবার , ২৬ নভেম্বর ২০২৪

অনশন করে প্রেমিককে বিয়ে করেও সুখ সইল না কনার


প্রকাশিত: ৪:১৪ এএম, ৯ জুলাই ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৭ বার

 

দৌলতপুর প্রতিনিধি : বিয়ের দাবিতে প্রেমিক মনির হোসেনের (২১) বাড়িতে অনশন। বিয়ে না হলে kona_www.jatirkhantha.com.bdওই সময় আত্মহত্যা করার হুমকিও দিয়েছিলেন প্রেমিকা কণা আক্তার (১৯)।এরপর উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাদের দেয়া হয় বিয়ে। স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার সাজানোর স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি।

কিন্তু সে সুখ সইলো না কণা কপালে। যাকে না পেলে চেয়েছিলেন নিজের জীবন দিতে চেয়েছিলেন, সেই স্বামীর বাড়িতেই প্রাণ দিতে হলো কণাকে।

দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়েও স্বামীর চাহিদা মতো এনে দিয়েছিলেন যৌতুক। তাতেও রেহাই পাননি কণা। দিনের পর দিন শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাকে।

যৌতুক না পেয়ে শুক্রবার ভোরে তাকে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বহড়াবাড়ি গ্রামের বাড়ি স্বামী মনির ও পরিবারের লোকজন মিলে পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন বলে স্বজনরা অভিযোগ করছেন।তবে মনির ও পরিবারের লোকজনের বলছেন, কণা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

এই ঘটনার পরপরই বাড়িতে লাশ রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় মনির ও তার বাবা মজিবর রহমান (৫৫), মা মমতা বেগম (৫০), বোন রিক্তা আক্তার (২৫) এবং ভগ্নিপতি মহিদুর রহমানকে (৩০) ধরে আটকে রেখে পুলিশে খবর দিয়েছেন প্রতিবেশিরা।

ওই গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মনির গাজীপুরের একটি পোশাক তৈরি কারখানায় কাজ করেন। আর পার্শ্ববর্তী তালুকনগর গ্রামের মৃত জব্বার খানের মেয়ে কণা।স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, মনিরের সঙ্গে চার বছর প্রেম করেন কণা। তাদের মধ্যে গড়ে উঠে শারীরিক সম্পর্কও।

বিয়ে না করেও মনিরের কর্মস্থল এলাকায় বাসা নিয়ে একসঙ্গে থাকেন তারা।এরপর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর বিয়ের দাবিতে মনির বাড়ি অবস্থান নেন কণা। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাতব্বররা সালিশ বসেন। খবর বের হয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।

১৫ দিন অবস্থানের পর উভয় পরিবারের সম্মতি তাদের বিয়ে দেয়া হয়। এরপর দেড় লাখ টাকা ও দেড় ভড়ি স্বর্ণালঙ্কার যৌতুকও নেন মনির।

দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে সব সময়ই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন। বিয়ের পর থেকে সংসারের নানা বিষয় নিয়ে কণাকে বিভিন্ন সময়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন মনির ও তার মা-বাবা।এ কারণে কণাকে প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও কথাবার্তা বলতে দিতেন না। বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে মাত্র একবার বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন তিনি।

কণার ভগ্নিপতি আবদুল হানিফ জানান, প্রায় দুই মাস আগে ব্যবসার করার জন্য কণার ভাই আরিফ খানের কাছে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন মনির। এই যৌতুক না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে কণাকে নির্যাতন করে আসছিলেন তিনি।

ঈদের ছুটিতে গত সোমবার বাড়ি আসেন মনির। এরপর ঈদের দিন কণাকে কোথাও বেড়াতে নেননি। রাতে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন তারা।শুক্রবার ভোরে মনির ও তার মা-বাবা, বোন এবং ভগ্নিপতি কণাকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর গলায় কাপড় পেচিয়ে ঘরের ছোট খুটির সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন তারা।

এ সময় প্রতিবেশিরা এসে তা দেখে ফেলেন। তাকে হাসপাতালে নেয়ার অজুহাতে ঝুলন্ত অবস্থায় থেকে নামান তারা।এই খবর পেয়ে স্বজনরা ওই বাড়ি গিয়ে কণার গলায়, পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখেছেন বলে জানান হানিফ।

কণার স্বামী মনির হোসেন বলেন, ‘কণাকে হত্যা করা হয়নি। সে আত্মহত্যা করেছে।’ তবে, কণা কি কারণে আত্মহত্যা করেছেন? তা বলেননি মনির।দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল নিশাত বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় স্বজনরা হত্যার অভিযোগ দিলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।