‘অধিকারের নামে যেন অশান্তি না হয়’
বিশেষ প্রতিনিধি : অধিকার আদায় করতে গিয়ে পরিবারে যেন অশান্তি সৃষ্টি না হয় সেজন্য নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বেগম রোকেয়া দিবস এবং বেগম রোকেয়া পদক বিতরণ-২০১৮ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের (নারী) নিজেদের অধিকারগুলো বুঝতে হবে, আদায় করে নিতে হবে। কিন্তু অধিকার আদায় করতে গিয়ে সংসারে যেন ঝামেলা সৃষ্টি না হয়, অশান্তি না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকের পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে এবং প্রত্যেকের তাদের নিজ নিজ দায়িত্বগুলো বুঝতে হবে। পরিমিতিবোধটা থাকতে হবে। সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ।’
নারীদের তাদের যোগ্যতা ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ নিশ্চিতে গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীদের জায়গা এবং সুযোগ করে দিতে হবে। তাদেরও সুযোগের সদ্ব্যবহারও করা উচিৎ। কেননা কেউ কাউকে জায়গা দেয় না।’সন্তানদের যথাযথ শিক্ষা দেওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সন্তানরা যাতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের সঙ্গে জড়িত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকবেন। আপনাদের সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা সবকিছু আপনার সাথে সহজেই ভাগ করে নিতে পারে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীদের অসামান্য ভূমিকার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীদের মুক্তির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং তাদের উন্নয়নের পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের নৃশংসতার শিকার মা-বোনদের পুনর্বাসন করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশে প্রথম নারী সচিব, পুলিশের সুপারইনটেনডেন্ট, ওসি, বিচারপতি নিয়োগ দেয় এবং তারা চমৎকারভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং কয়েকজন মন্ত্রী নারী, যা বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত।কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিজ নিজ দায়িত্বপালনের পাশাপাশি পরিবারের প্রতি দায়িত্বপালনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য সরকার ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত নারী আসনের ব্যবস্থা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি, কর্মজীবী মায়েদের সাহায্যের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন, যেকোনো দলিলপত্রে মায়ের নাম অন্তর্ভুক্তকরণ বাধ্যতামূলক, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন, শিশু বিবাহ (প্রতিরোধ) আইন প্রণয়ন, কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, ৪৫৪৭টি ইউনিয়নে ভিজিডি প্রোগ্রাম এবং গ্রামীণ নারীদের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাজ এবং নারীর ক্ষমতায়নে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানজনক রোকেয়া পদক ২০১৮ দেওয়া হয় পাঁচ নারীকে। তারা হলেন- সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জিন্নাতুন নেসা তালুকদার, অধ্যাপক জোহরা আনিস, শীলা রায়, রমা চৌধুরী (মরণোত্তর) এবং রোকেয়া বেগম ।মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
১৯৯৫ সাল থেকে অবিভক্ত বাংলায় নারীর মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নামে সরকার এই পুরস্কার প্রদান শুরু করে। বেগম রোকেয়া বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নেতৃস্থানীয় নারীবাদী লেখক এবং সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি সমাজে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা ও নারী শিক্ষাকে নিশ্চিত করার তার প্রচেষ্টার জন্য বিখ্যাত।