• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সিলেটের জঙ্গি আড়ত আতিয়া মহলে আজ রাতে সেনা অভিযানে প্রস্তুতি


প্রকাশিত: ১১:২১ পিএম, ২৪ মার্চ ১৭ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৮ বার

সিলেট থেকে মাসুদার রহমান  :  সিলেটের জঙ্গি আড়ত আকিয়া মহলে আজ রাতে সেনা অভিযানে shelhet Atiamohol-www.jatirkhantha.com.bdপ্রস্তুতি চলছে। সেনাবাহিনীর একটি প্যারা কমান্ডো দল সেখানে ইতিমধ্যে এসে পৌচেছেন। সিলেটের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানান, দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে।

Shelhet-atiabhabon-www.jatirkhantha.com.bd.2উপস্থিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সেনাবাহিনীর একটি একদল প্যারা-কমান্ডো।শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে মেজর রোকন ও মেজর রাব্বীর নেতৃত্বে প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

সোয়াট ও পুলিশকে সহযোগিতা দিতেই তারা এখানে এসেছেন, বলেন পুলিশ কমিশনার।সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কিছুটা বাড়তে দেখা গেলেও কখন ওই বাড়িতে ঢোকার অভিযান শুরু হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি কর্মকর্তার।
Shelhet-atiabhabon-www.jatirkhantha.com.bd.1
এদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাঁচ তলা ওই ভবনের দিক থেকে ২০ থেকে ২৫ জনকে সরিয়ে নেন পুলিশ সদস্যরা। তবে তারা ওই বাড়ির বাসিন্দা, না কি আশপাশের বাড়িগুলোতে থাকেন- সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি ।

ওই সময়ই হাতকড়া ও হেলমেট পরিহিত লুঙ্গি পড়া এক যুবককে ওই দিক থেকে নিয়ে আসেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তার পরিচয় জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার শুধু বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা ওই যুবককে আটক করেছেন।

দীর্ঘ এই অভিযানের সূচনা হয় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে। ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল পাঁচতলা ওই ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোড়া হয় বলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্তি কমিশনার রোকনউদ্দিন জানান।
Shelhet-atiabhabon-www.jatirkhantha.com.bd.3
পরে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায় এবং পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। সকালে ওই বাড়ি থেকে থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। পাঁচতলা ওই ভবনের দুটি ইউনিটে ৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে নিচতলার একটি বাসায় জঙ্গিরা আস্তান গেড়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

ওই ভবন ঘিরে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান নেওয়ার পর সকালে ওই বাড়িতে যাওয়ার দুটি সড়কে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আশপাশের কয়েকটি বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নিতে দেখা যায় সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের।

ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটে যে পরিবারগুলো আটকা পড়েছে, তাদের দরজা-জানালা বন্ধ করে ভেতর থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় পুলিশের হ্যান্ড মাইক থেকে।

বাড়ির মালিক উস্তার আলী জানান, তিন মাস আগে কাউছার আলী ও মর্জিনা বেগম নামে দুইজন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দ্বিতীয় ইউনিটের নিচতলার চার নম্বর বাসাটি ভাড়া নেন। সে সময় কাউছার নিজেকে প্রাণ কোম্পানির অডিট অফিসার হিসেবে পরিচয় দেন।

আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় জড়িত উস্তার বলেন, সব নিয়ম মেনেই তাদের বাসা ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। দুজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিও রাখা হয়েছে। তারা নিয়মিত ভাড়াও দিয়ে আসছে। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলার কথা জানিয়ে দুপুরের দিকে ‘জঙ্গিদের’ আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

সন্দেহভাজন ওই নারী জঙ্গির নাম উল্লেখ করে পুলিশের হ্যান্ড মাইকে বলা হয়, “মর্জিনা বেগম, আপনাদের চারদিক দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করুন।”

এক পর্যায়ে বেলা দেড়টার দিকে পুলিশের একজন এসআই সন্দেহভাজন জঙ্গিদের উদ্দেশে মাইকে বলেন, আপনারা মুসলমান, আমরাও মুসলমান। আপনাদের কোনো বক্তব্য থাকলে মিডিয়ার ভাইয়েরা আছেন, আপনারা কথা বলুন। এ সময় ওই বাড়ি থেকে জানালা ফাঁক করে নারী কণ্ঠ জবাব দেন, আপনারা শয়তানের পথে, আমরা আল্লাহর পথে।

এর পরপরই আরেক পুরুষকণ্ঠে পুলিশের উদ্দেশে বলা হয়, দেরি করছ কেন? আমাদের সময় কম। তাড়াতাড়ি সোয়াট পাঠাও। পরে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে অতিরিক্ত উপ কমিশনার আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে সোয়াট ও পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি। রাতে তাদের সঙ্গে যোগ দেন সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা।

ওই বাড়ি ও আশপাশের এলাকা আলোকিত করে রাখার জন্য জেনারেটর বসানো হয়েছে। একটি ক্রেন ও ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি গাড়িও এনে রাখা হয়েছে ওই বাড়ি থেকে কিছু দূরে। এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের আগেও একই ধরনের প্রস্তুতি দেখা গিয়েছিল। তবে ওই অভিযানে প্যারা কমান্ডোদের দেখা যায়নি।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবদুল মান্নান জানান, সিলেটে জঙ্গি আস্তানা থাকার তথ্য পাওয়ার পর তাদের সদস্যরা সিলেট পুলিশকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে শিববাড়ির ওই ভবনের সন্ধান পান তারা।

পুরনো জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানকে ২০০৬ সালের ২ মার্চ এই সিলেটেরই পূর্ব শাপলাবাগের সূর্যদীঘল বাড়ি নামের এক ভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
তবে এরপর দীর্ঘ সময়ে সিলেটে কোনো জঙ্গি হামলা বা হত্যাকাণ্ড অথবা কোনো জঙ্গি আস্তানার কথা শোনা যায়নি।

নয়া তৎপরতা জঙ্গিদের-

গতবছর জুলাই মাসে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মধ্যে বেশ কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও এ বছর মার্চের শুরু থেকে জঙ্গিরা নতুন করে তাদের তৎপরতার জানান দিতে শুরু করে।

প্রিজন ভ্যানে হামলা-
৬ মার্চ: হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার পথে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়।

পুলিশের দিকে বোমা-
৭ মার্চ: কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ার পর ধরা পড়ে ‘নব্য জেএমবির’ দুই জঙ্গি। তাদের মধ্যে একজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

বিস্ফোরকসহ এক জঙ্গি-
১৫ মার্চ: সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার আমিরাবাদের এক বাড়ি থেকে বিস্ফোরকসহ এক জঙ্গি দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রেমতলা এলাকায় আরেক বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ।

অ্যাসল্ট সিক্সটিন-
১৬ মার্চ: দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখার পর প্রেমতলার ওই বাড়িতে শুরু হয় ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’। আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হন। এছাড়া ভেতরে বোমায় বিক্ষত এক শিশুর লাশ পাওয়া যায়।

র‌্যাবের ব্যারাকে-
১৭ মার্চ: শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের সময় আশকোনায় র‌্যাবের একটি ব্যারাকে ঢুকে পড়ার পর শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণে নিহত হয় সন্দেহভাজন এক জঙ্গি।

হামলাকারীর দেহে বিস্ফোরক-
১৮ মার্চ: মোটর সাইকেল আরোহী এক ব্যক্তি ভোর সাড়ে ৪টার দিকে খিলগাঁওয়ের ‘শেখের জায়গা’ মোড়ের কাছে চেক পোস্টে ঢুকে পড়ার পর র‌্যাব সদস্যদের গুলিতে নিহত হন এক ব্যক্তি। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, হামলাকারীর দেহে বিস্ফোরক বাঁধা ছিল।

২০ মার্চ: চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে দুটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে সেখানে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় চলতি মাসের ঘটনাগুলোতে গ্রেপ্তার ও নিহত জঙ্গিদের সবাই নব্য জেএমবির সদস্য বলে তাদের ধারণা।

২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল নিষিদ্ধ সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ- জেএমবি।ওই সংগঠনের একটি নতুন অংশই গত দুই বছরে গুলশান হামলাসহ অধিকাংশ জঙ্গি হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভাষ্য।