• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সততার বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর কে এই তারেক সালমন!


প্রকাশিত: ৭:৩৩ পিএম, ২৩ জুলাই ১৭ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪৪ বার

কাজী সায়েমুজ্জামান:  সততার বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর কে এই তারেক সালমন! যার পক্ষে কেউ আদালতে দাড়াননি। অথচ সিরিয়াল খুনিদের tareq-salman-www.jatirkhantha.com.bdপক্ষেও উকিল দাড়ান কিন্তু ইউএনওর পক্ষে কেউ ছিল না? কিন্তু কেন? কে এই তারেক সালমন? এখন নামটা ব্যাপক পরিচিত, আমার বন্ধু, ব্যাচমেট, একসঙ্গে পটুয়াখালীতে কাজ করেছি, আমি তখন গলাচিপার এসি ল্যান্ড, আর তারেক আরডিসি, পরিচ্ছন্ন একটা মানুষ, ওর কাছে সততা শেখা যায়। ভালো কবিতা লেখেন,  মোলায়েম কণ্ঠে কথা বলেন। সময় পেলেই বই পড়েন। বিদেশে গিয়ে সবাই যখন নানাপদের কেনাকাটায় ব্যস্ত।

তখন তারেক বইয়ের দোকানে। আমি জানি না, সরকারি চাকরিতে ব্যাচমেট কোনো ব্যাচমেটের এত প্রশংসা করে কিনা, আমি তার প্রশংসা করেও মনে হয় কিছু বলা হয়নি। তবে যেটা না বললেই নয়, তা হলো তারেক একজন সৃষ্টিশীল কর্মকর্তা, তারেকের ইউএনও হিসেবে প্রথম পোস্টিং ছিল বরিশালের আগৈলঝাড়া। বর্তমানে বরগুনা সদরের ইউএনও।

তারেকের আলোচনায় আসাটা আঁধারে আলোর দিশা, এসি ল্যান্ড পদে চাকরি করলে সবার চেহারা  চেনা যায়। আমি কাজ করার সময় চারদিকে অন্ধকার দেখতাম। অসততার উৎসবে সে ছিল আলোর দিশা, পানিতে  থেকেও যে মাছ পানি খায় না প্রকৃতপক্ষে সেই সৎ, তারেক সে বিবেচনায় প্রকৃত সৎ ব্যক্তি, তার আলোচনায় আসায় মানুষ জানতে  পেরেছে এখনো অনেক সৎ অফিসার আছেন, সৃষ্টিশীল, উদ্ভাবনী কর্মকর্তা দেশে আছেন। তবে ব্যক্তি তারেকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দেয়া হয়েছে, আসল ঘটনা উল্লেখ না করে সাংবাদিকরা মানহানির মামলার সংবাদ করেছেন, তার বক্তব্য নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি, থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবে এ জন্য, তবে প্রকৃত ঘটনা দেশবাসী জেনে  ফেলার পর এখন পরিস্থিতি অন্য, একজন সৎ কর্মকর্তাকে হেনস্থা করার নতুন কৌশল উদ্ভাবনের বিষয়টি মানুষ জানতে পেরেছে, কিন্তু লড়াইয়ের এ পর্যন্ত আসাটা তার পক্ষে সহজ ছিল না।

কি দোষ ছিল তারেক সালমানের? জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি শিশুদের দিয়ে আঁকিয়ে তিনি তা দিয়ে উপজেলার স্বাধীনতা দিবসের দাওয়াত কার্ড করেছেন, অবশ্য এর পাইওনিয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনিই শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে কার্ড করেন, তার আইডিয়াই সালমান তারেক ব্যবহার করেছেন, শিশুদের উৎসাহ দেয়ার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের  চেতনা শিশু মানসে ফুটিয়ে  তোলার চেষ্টা করেছেন, শিশুরা চমৎকার ছবি এঁকেছিল। আর  সেই ছবি দিয়ে তিনি দাওয়াত কার্ড ছাপিয়েছেন।

আর্ট যারা বুঝেন বিমূর্ততা বুঝবেন। বাচ্চাদের ছবি দেখলাম। চমৎকার রঙ ব্যবহার করেছে, বঙ্গবন্ধুর ছবি  দেখলাম, সেই তিল, বাচ্চারা এটাও খেয়াল করেছেন, খেয়াল করেননি শুধু একজন, ছবি দেখে তার হৃদকম্প শুরু হয়ে যায়, তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার অভিযোগে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা করে দিলেন।

সাংবাদিকদের বললেন, গালের উপর তিল বসিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি করে অবমাননা করেছেন, আবার বলছেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি কার্ডের পেছনে ছাপিয়ে অবমাননা করেছেন। দেশের শিশুরা জেনে গেছে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকলে জেলে যেতে হয়, আগামী দিনে এ ছবি কম আঁকা হবে- এটাই মনে করছে সবাই, অথচ বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধ সমার্থক, সামনে বা  পেছনের কোনো ব্যাপার নেই।

তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা, খবরে দেখলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত কার্ড  দেখে প্রশংসা করেছেন, অফিসারকে বাহবা দিয়েছেন।

যার বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা হয় তিনি আসলেই ভিআইপি, বাস্তবে তিনি একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, তার বিরুদ্ধে মামলা আমলে নেয়া হলো, সমন  পেলেন, হাজির হতে গিয়ে টের  পেলেন বাস্তবতা, বাদী স্থানীয় বারের সভাপতি, সে কারণে বিবাদী তারেকের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে চাইলেন না, হন্যে হয়ে অনেক আইনজীবীর কাছে গেছেন, তারা তার পক্ষে দাঁড়াতে রাজি হননি, এদেশের সিরিয়াল খুনিদের পক্ষেও আইনজীবীরা দাঁড়ান, অথচ একজন ইউএনও’র পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে রাজি হলেন না, সেলুকাস!

একজন বিসিএস কর্মকর্তার এই হাল, বেইলেবল সেকশনে কারো বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি জামিন চাইলে তা পাবার অধিকার রাখেন, তাকে বিচারক পুলিশের হেফাজতে তুলে দিলেন। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি পুলিশের সদস্যদের যে ব্যবহার তার ছবি প্রকাশিত হয়েছে, ভাবতেও খারাপ লাগে, সরকারি কোনো পদধারীর সঙ্গে এমন ব্যবহার?

টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ অপরাধী হলে তাকে প্রথমে সেই পদ থেকে বের করে দেয়া দরকার, তারপর বিচার, আমরা  দেখলাম, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি বিচারক, পুলিশের নিম্নপদস্থ কয়েকজনের আস্থার প্রতিফলন, এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিরাট অপরাধী, পালিয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে, আমার চোখ যদি প্রতারণা না করে যদি ছবি সত্য হয়, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে হাতকড়া পরিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, এই দৃশ্য দেখতে হলো তার সন্তানকে?

আমাদেরকে, দেশকে, অবশ্য খবরে দেখেছি, প্রথমে জামিন ক্যানসেল করলেও দুই ঘণ্টা পর জামিন দেয়া হয়েছে তারেক সালমানকে, আদালতের বিষয়, আদালতে চলমান মামলার বিষয়ে আদালতই সিদ্ধান্ত দেবেন, তবে আগামীতে কোনো কর্মকর্তা সৃজনশীলতা দেখানোর সাহস করবেন না, এটা বলতে পারি।

আমি সাধারণত সামপ্রতিক ইস্যু নিয়ে লিখি না, কারণ এসব নিয়ে সবাই হুজুগে মাতেন, আমি হুজুগের অংশ হতে চাই না, কিন্তু গত দুই/তিনদিন ধরে আমি ঘুমাতে পারছি না, সালমানের ছবিটা তাড়া করে ফিরছে আমাকে, দুর্নীতিবাজ অসৎ হলে আমি থোড়াই কেয়ার করতাম, সরকারি চাকরিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব আমি, এটা সবাই জানেন, একজন সৎ কর্মকর্তার এই চিত্র মানতে পারছি না।

তার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করি, আমার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল গলাচিপায়, আমি নাকি সহকারীদের মাধ্যমে ঘুষ  চেয়েছি, বিচারক তা আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তে দিয়েছেন, আমি  বেতনের টাকা দিয়ে অফিসের কাগজ কেনা মানুষ, তদন্তে আর কি মিলবে, সমস্যাটা হচ্ছে হয়রানি, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এভাবে মামলা হওয়ায় কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে!

সাংবাদিকতা করে এসেছি বলে আমার কলিজা শক্ত, কিন্তু কতটা ধকল গেছে তা আমি জানি, তারপরেও বাস্তবতায় মনে হয়,  কোনো একদিন দেখবো আমিও কাস্টডিতে, আমার হাতে হাতকড়া, অনেকে বলেন, ইউএনও কেন হচ্ছো না, আমি বলি, হবো, শিগগিরই, জেলে যাবার জন্য শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করছি, সাগরে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কি ভয়।

তারেক সালমান তুমি ভালো কবিতা লেখো, এ মুহূর্তে তোমার কবিতার লাইনই মনে আসছে কেবল।
আকাশে রয়েছে লেখা তোমার বিষাদ
তোমাকে তাকিয়ে দেখি অতল সে খাদ,
খাদের কিনারে একা উড়ছে যে পাখি
আমি তার ছায়াছবি বুকে চেপে রাখি…!