• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

রোমিও-জুলিয়েটের ৪৩ কুমিরের বাচ্চা গায়েব


প্রকাশিত: ৩:২১ এএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ১৭ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩০৯ বার

বিশেষ প্রতিনিধি  :  সুন্দরবনের রোমিও-জুলিয়েটের ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা উধাও হয়ে গেছে 3433রহস্যজনকভাবে। কে বা কারা এটি গায়েব করে পাচার করেছে সেটা এখনও উদঘাটন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ঠরা।জানা গেছে, বাগেরহাটে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুইটি প্যানে (কৃত্রিম পুকুর) কুমির ছানা লালন-পালন হয়।এখান থেকেই গায়েব হয় রোমিও-জুলিয়েটের ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা।

সূত্র মতে, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজলে সরকারিভাবে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি বা পাচার হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কুমির চুরি বা পাচারের ঘটনায় করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়া জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছে। কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ২৭৭টি কুমিরের মধ্যে চুরি বা পাচার হবার পর এখন ২৩৪ টি কুমির রয়েছে। এদিকে ঘটনা তদন্তে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন এবং ফরেস্টার ও করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা তৌহিদুর রহমান। আগামী রোববারের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সুন্দরবনের কুমিরের বিলুপ্তপ্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষনের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। চুরি বা পাচার হবার পর বর্তমানে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রোমিও নামে ১টি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের ২টি মা কুমির ও ২৩৪টি বাচ্চা কুমির রয়েছে।

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: মেহেদীজ্জামান জানান, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুইটি প্যান (কৃত্রিম পুকুর) থেকে ৪৩ কুমিরের বাচ্চা চুরি বা পাচার হয়ে গেছে। ১ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই দুইটি প্যানে থাকা কুমিরের বাচ্চা গণনা করে ৪৩টি কম পাওয়া যায়। পরে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিষয়টি জানানোর পর ওই দিন দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।

গঠিত কমিটির তদন্ত কর্মকর্তা চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ মো: মেহেদীজ্জামান আরো বলেন, কোন হিংস্র প্রাণীভোগী প্রাণী যদি প্যানে ঢুকে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করতো কিংবা খেয়ে ফেলতে তাহলে সেখানে হাড়, মাংস, অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও রক্ত দেখা যেত। এমন কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি।

সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবনের সম্পদ চুরির পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। এটা ছোট করে দেখার কোনো কারণ নেই। চুরি যাওয়া কুমিরগুলো উদ্ধার করতে হবে। প্রয়োজনে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি করে গঠন করে এর সঙ্গে যেসব গডফাদার জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এধরনের প্রবণতা কমে আসবে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ১ ফেব্রুয়ারী সকালে কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি যাবার বিষয়টি জানতে পেরে আমি ওইদিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে এঘটনায় জড়িত বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রে বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখান্ত করা হয়েছে।

এছাড়া জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।