• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

মগবাজার ওয়্যারলেসে রহস্যজনক বিস্ফোরণ নিহত ৭


প্রকাশিত: ২:৫০ এএম, ২৮ জুন ২১ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৯০ বার

বিশেষ প্রতিনিধি / রমনা প্রতিনিধি : হঠাৎ রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে রহস্যজনক বিস্ফোরণ ঘটেছে। কেউ বলছেন জেনারেটর বিস্ফোরণ আবার কেউবা কেউবা বলছেন, এসি বিস্ফোরণ আবার কেউ বলছেন গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে সিঙ্গার শো রুমের ৩ তলা ভবনটিতে। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ জনে। বিস্ফোরণে নিহত ও আহতদের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আহতদের সংখ্যাও বাড়ছে। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন কমপক্ষে ১৭ জন। আহতদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রমনা থানার ডিউটি অফিসার এসআই আবুল খায়ের জাতিরকন্ঠ কে বলেন, সেখানে ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতণ কর্মকর্তারা সেখানে রয়েছেন। বেশ কয়েকটি টিমও কাজ করছে।

ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ৭ জনের নিহতের খবর নিশ্চিত করে জাতিরকন্ঠ কে বলেন, এটা জঙ্গি হামলার আশংকা করছিনা। তবে তদন্ত চলছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা সাতজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তবে, আহতের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ধারণা করছি, ৩৯ থেকে ৪০ জন হবে।

রমনা ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার ফয়সালুর রহমান বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে বিস্ফোরণের কথা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও ঠিক কিভাবে বিস্ফোরণ ঘটলো তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিস্ফোরণ ভবনটির নিচতলার ভেতরেই ঘটেছে। ওই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে মোট ছয়জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ও নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

রবিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওয়ারলেস গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে বিস্ফোরণটি কীভাবে ঘটলো সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। বিস্ফোরণে পর ভবনে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৭

ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের অপারেটর মো. ফরহাদ জাতিরকন্ঠ কে জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এসি বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

বিস্ফোরণের নেপথ্যে নানা বক্তব্য-

ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, নাশকতা হলে সেখানে স্প্লিন্টার পাওয়া যেত, স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষ ক্ষতবিক্ষত হতো। কিন্তু বাসে কোনো স্প্লিন্টারের কণা পাওয়া যায়নি। অতএব নিশ্চিতভাবে বলা যায় গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে, বোমার কোনো ঘটনা এখানে নাই। বিস্ফোরণ আশপাশের সাতটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত ছাড়াও তিনটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আড়ং-বিশাল সেন্টার বেশী ক্ষতিগ্রস্থ

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওয়ারলেস মোড়ে রহস্যজনক বিস্ফোরণে আড়ং-বিশাল সেন্টার বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জাতিরকন্ঠ কে জানিয়েছেন বিকট শব্দে পুরো মগবাজার এলাকা কেঁপে উঠেছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় সিঙ্গার বাটারফ্লাই শোরুমের তিনতলা ভবনের নিচতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিকট শব্দের পর ওই এলাকা কেঁপে ওঠে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এসময় বেশ কয়েকটি ভবনের কাঁচ ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে সয়লাব হয়ে যায়। ওই ভবনটির নিচতলায় সিঙ্গার শো-রুম ছাড়াও শর্মা হাউস ও গ্র্যান্ড কনফেকশনারি দোকান রয়েছে। বিস্ফোরণে ভবনের ধসে পড়েছে। এ ছাড়া সিঙ্গার শো-রুমের ভেতর থেকে জেনারেটর উড়ে এসে রাস্তায় বাসে পড়ে। এতে দুটি বাসের কাচসহ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এ ঘটনায় দগ্ধ ৩৯ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিস্ফোরণের এ ঘটনায় পথচারীসহ অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। দগ্ধ ও আহতদের মধ্যে ১৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জানা গেছে, ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে আশেপাশের বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের ভবনটির উল্টো দিকে আড়ং এর ভবন ও বিশাল সেন্টার পুরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটির গ্লাস ভেঙে পড়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ ৪৬ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গ্যাস বিস্ফোরণ-

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘৭টা ৩৪ মিনিটে আমরা খবর পাই। আমাদের টিম এখানে আসে। এটি একটি তিনতলা ভবন। এর নিচতলায় ফাস্টফুডের দোকান, দ্বিতীয় তলায় সিঙ্গারের একটি গোডাউন ছিল।’তিনি বলেন, বিস্ফোরণের কারণে ব্লাস্ট ওয়েভ ও সাউন্ড ওয়েভ সৃষ্টি হয়। এতে আশপাশের ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ভবনের সব পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি এখনই বলতে পারি এই ভবন বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, গ্যাস বা এ জাতীয় কোনো কিছুর মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। আমরা পরীক্ষা করছি। গ্যাস জাতীয় কিছু থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে।