‘বিদেশে চিকিৎসা’য় জেলে ঢুকতে হবে খালেদাকে’
বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে ফিরে আবেদন করলে তার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।জাতীয় সংসদে মঙ্গলবার একটি বিল পাসের সময় আলোচনায় বিএনপির সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপরাসন খালেদা জিয়া আবার জেলে গিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হবে। এখন যে অবস্থায় আছেন তাতে আবেদন নতুন করে বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।এই আবেদনটি ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্তের ওপর আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।কয়েকবার প্রত্যাখ্যাত হয়েও হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে গত বৃহস্পতিবার তা ছোটো ভাই শামীম এস্কান্দার আবারও আবেদন করেন, যা সোমবার প্রকাশ পায়।
সর্বশেষ ৬ মে বোনকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে তার আবেদন বিবেচনা করেনি আইন মন্ত্রণালয়। তখনও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরার শর্ত দেওয়া হয়েছিল।২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা হলে কারাজীবন শুরু হয় খালেদা জিয়ার। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়।দেশে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সাড়া দিয়ে গত বছরের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে দেশে থাকার শর্তে খালেদাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার।
ওই আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে নতুন আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফিরতে হবে বলে যুক্তি দেখান আনিসুল হক।কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া ওঠেন গুলশানের বাসা ফিরোজায়। এরপর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এ বছরের মাঝামাঝিতে তিনি প্রায় দুই মাস হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি।বিরোধী দলের নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১’ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির রুমিন ফারহানা খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা বিবেচনা করে ‘আইনগতভাবে’ তাকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি করেন। দণ্ডবিধির ৪০১ ধারামতে এই সুযোগ দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আনিসুল হক বলেন, আমি কখনো বলিনি, ৪০১ ধারামতে খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু উনি বর্তমানে সাজা স্থগিতপূর্বক বাসায় আছেন, সেটা ৪০১ ধারার ভিত্তিতেই। খালেদা জিয়ার পক্ষে যে আবেদন হয়েছিল, সেখানে কোনো ধারার উল্লেখ ছিল না। সরকার খুঁজে এই ধারাটি বের করেছে।আবেদনটি ৪০১ ধারার আলোকেই নিষ্পত্তি হয়েছে। আর একটি আবেদন যে ধারার অধীনে নিষ্পত্তি হয়েছে, একই ধারায় বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।আইনমন্ত্রী যখন এই বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন তার সামনের আসনে ছিলেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পেছন ফিরে বিএনপির অতীত কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন ও পুরস্কৃত করেছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি তারেক জিয়া। তারপরও খালেদা জিয়ার প্রতি দয়া করা হচ্ছে; সুচিকিৎসা করা হচ্ছে।
আইন সবার জন্য সমান হলেও খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করছেন মন্তব্য করে আনিসুল হক বলেন, এটি পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতার কারণে। সাজা স্থগিত রেখে মুক্তির শর্তে তার বাসায় অবস্থান করা এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার কথা থাকলেও উনি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন, কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।