• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বাঘের থাবায় কুপোকাত দক্ষিণ আফ্রিকা


প্রকাশিত: ১২:০০ এএম, ৩ জুন ১৯ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৭ বার

 

লন্ডন থেকে সাইফুল করিম: অবশেষে বাঘের থাবায় কুপোকাত হলো  দক্ষিণ আফ্রিকা; চাপ সামলাতে পারল না।শেষচেষ্ঠা করেও হেরে গেল ২১ রানে। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে দিল ৩৩১ রানের লক্ষ্য। জিততে হলে বিশ্বকাপে রান তাড়া করে জেতার নতুন রেকর্ড গড়ত। কিন্তু না সেই চাপের মুখে দক্ষিণ আফ্রিকা ধরাসায়ী হয়ে গেল।

নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেটে ৩০৯ রানের বেশি করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। মুস্তাফিজুর রহমান ও সাইফুদ্দিনদের দারুণ বোলিংয়ে ২১ রানের জয় দিয়েই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ।লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কিছুটা সতর্ক সূচনাই করে দক্ষিণ আফ্রিকা। রান আউটের ফাঁদে পড়ে দলীয় ৪৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। এ সময় ২৩ রান করে ফিরে যান কুইন্টন ডি কক। অপর ওপেনার এইডেন মার্করামকে বোল্ড করে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটান সাকিব। দলীয় ১০২ রানে আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ৪৫ রান।

প্রয়োজনের সময় ফাফ ডু প্লেসিসের উইকেট তুলে নিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। প্লেসিস করেন ৬২ রান। এরপর ডেভিড মিলার ও ভেন ডার দুসেন ঠাণ্ডা মাথায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আর সেখানেই বাঁধ সাধেন মুস্তাফিজ। এর পরপর দুটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিলারকে মিরাজের ক্যাচ বানিয়েছেন মোস্তাফিজ। ভেঙেছেন ৫৫ রানের জুটি। এরপর ফন ডার ডুসেনকে বোল্ড করেছেন সাইফ। প্রথম বল পেয়েছেন নবম ওভারে। দ্বিতীয় ওভার করার জন্য আরও ৯ ওভারের অপেক্ষা। তৃতীয় ওভার পেয়েছেন ১৬ ওভার অপেক্ষার শেষে। অধিনায়ক তাঁকে টানা বল করানোর ব্যাপারে আস্থা পাচ্ছিলেন না বোঝাই যায়। সাইফও আস্থা ফেরানোর মতো তেমন কিছু করেননি। করলেন নিজের চতুর্থ ও ইনিংসের ৪০তম ওভারে।

উইকেটের ঘরটা তিন থেকে চারেই যাচ্ছিল না কিছুতেই। সৌম্য সরকার কঠিন একটা ক্যাচ ফেলেছেন মিড অফে। মুশফিক সহজ একটা স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। ডিপ থার্ডম্যানে বলের ফ্লাইট বুঝতে ভুল করে ক্যাচটা নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। প্রোটিয়াদের আকাশে তোলা বলগুলোও পড়ছিল নো ম্যানস ল্যান্ডে। সরাসরি স্টাম্পে লাগলে রান আউট হয়, এমন সুযোগগুলোও কাজে লাগছিল না। এই পরিস্থিতি থেকেই ম্যাচের লাগাম আবার নিজেদের মুঠোয় পুরেছে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডেতেও নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর গড়েছে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে ৪৯ রান তুলে জবাবটা ভালো দিতে শুরুই পেয়েছিল প্রোটিয়ারা। মুশফিকের সরাসরি থ্রোয়ে ডি কক ফিরেছেন। এরপর ৫৩ রানের জুটিটা সাকিব ভেঙেছেন আর্মবল ডেলিভারিতে। আরেকটি জুটি জমে উঠব-উঠি করছে, তখনই মেহেদী মিরাজের ক্লাসিক অফস্পিনে বোল্ড প্র্রোটিয়া অধিনায়ক ডু প্লেসি।

বাংলাদেশের ৬ উইকেটে তোলা ৩৩০ রানের মঞ্চটা তৈরি করেছে সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড জুটি। ৭৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ১৪২ রান যোগ করে দুজনে। বিশ্বকাপে যেটি বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি। ইমরান তাহিরের বলে সাকিব নিজের জার্সি নম্বরটিকে মনে করিয়ে ৭৫ রানে ফিরেছেন। ৭৮ রান করেছেন মুশফিক। তিন অঙ্কে নিয়ে যেতে পারেননি নিজেকে। শেষে মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকের জুটি বাংলাদেশকে বেশ ভালো পুঁজি এনে দেয়। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো তিন শ পেরোল।

প্রথম ওভারে এনডিডিকে একটি চার মারার পরও প্রথম ৩ ওভারে এসেছে মাত্র ৯ রান। চতুর্থ ওভারেও এল মাত্র ৫ রান। পঞ্চম ওভারে সাহসী হওয়ার প্রয়াস দেখালেন সৌম্য। ভাগ্যও তাই হাত বাড়িয়ে দিল। মিড অন দিয়ে দুইটি পুল মেরে দুই চার পেয়েছেন সৌম্য। শেষ বলে দুই স্লিপের মাঝ দিয়ে যাওয়া ক্যাচটি ধরার চেষ্টা করেননি ডু প্লেসি ও মার্করাম। ওই ওভারে তিন চারসহ এল ১৪ রান।

পরের ওভারে রাবাদা ওয়াইডে দিলেন পাঁচ রান। তামিমও একটি চার মেরে প্রথমবারের মতো রানরেট ৬ পার করলেন। পরের ওভারে এনডিডিকে পর পর দুই চার মারলেন। পঞ্চম বলে মেজাজ হারিয়ে এনডিডি বল ছুড়ে মারলেন তামিমের দিকে। পরের বলে জবাবটা চার মেরেই দিলেন তামিম। ৭ ওভারেই ৫০ ছুঁল বাংলাদেশ।

নবম ওভারেই ছন্দ কাটল। প্রথম পরিবর্তনে এলেন আন্দিলে ফিকোয়াও। তাঁর দ্বিতীয় বলেই উইকেট রক্ষকের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তামিম। থামল ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি। ২৯ বলে ২ চারে ১৬ রান করে ফিরেছেন তামিম। পাল্টা আক্রমণে দারুণ খেলতে থাকা সৌম্য ফিরেছেন উইকেটের পেছনে ডি ককের দুর্দান্ত এক ক্যাচের শিকার হয়ে। এর আগে ৩০ বলে ৪২ করেছেন।

রবিবার বিকেলে বিশ্বকাপে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে রবিবার বিকেলে ওভালে টস হেরে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামতে হয় বাংলাদেশকে। মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের জোড়া হাফসেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান করে মাশরাফি বাহিনী। ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। মুশফিক ৮০ বল থেকে ৭৮ এবং সাকিব ৮৪ বলে করেন ৭৫ রান। এছাড়া তৃতীয় উইকেটে সাকিব-মুশফিক বিশ্বকাপে বাংলাদেশর সর্বোচ্চ ১৪২ রান করেন। সাকিব এই ম্যাচে সব ফরম্যাটে ১১ হাজারি ক্লাবে নাম লেখান।এছাড়া মাহমুদউল্লাহ ৩৩ বল থেকে অপরাজিত ৪৬ ও সৌম্য সরকার ৩০ বলে ৪২ রান করেন। প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে ক্রিস মরিস, ইমরান তাহির ও আন্দিলে পেলুকায়ো দুটি করে উইকেট নেন।