• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বাগমারার বাংলা ভাইয়ের শিষ্য ছিল নিহত জঙ্গি মুসা


প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ২৯ মার্চ ১৭ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৪ বার

 

রাজশাহী থেকে রিমন মাহমুদ : রাজশাহীর বাগমারার বাংলা ভাইয়ের শিষ্য ছিল নিহত জঙ্গি মুসা।
Gomgi Musa-www.jatirkhantha.com.bdগোয়েন্দারা জানায়, মুসা যে ছবি দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন, সেই ছবির সঙ্গে পুলিশের কাছে থাকা ছবির মিল দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে আতিয়া মহলে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসা নিহত হয়েছেন।

মুসার আসল নাম মাইনুল ইসলাম। জেএমবির আঁতুরঘর হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় তার বাড়ি। ২০০৪ সালের দিকে জেএমবির শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের হাত ধরে জেএমবিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বাগমারা থানার তালিকাভুক্ত জেএমবি সদস্য মুসা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুসা তার সাংগঠনিক নাম। জেএমবির শীর্ষ দুই নেতা বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমানের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পর মুসা আত্মগোপনে চলে যান। তবে বছর খানেক আগে তিনি এলাকায় ফিরেছিলেন। এরপর প্রায় ৮ মাস আগে সৌদি আরব যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে চলে যান। তারপরই নব্য জেএমবির হাল ধরে সে।

মুসার বাড়ি বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের বুজ্রুকালা গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল কালাম মোল্লা। তিনি স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা যান। ২০০৪-০৫ সেশনে মুসা বাগমারার তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে রাজশাহী অঞ্চল তথা বাগমারা, নওগাঁর আত্রাই, রাণীনগর, নাটোরের নলডাঙ্গায় অভিযান শুরু হলে তিনি জেএমবিতে যোগ দেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জেএমবির কমান্ডার ছিলেন মুসা। লোকজনকে জেএমবিতে যোগদানের উৎসাহ দিতেন। পরবর্তীতে বাংলা ভাই আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর মুসাও কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর তিনি আবার এলাকায় ফিরে আসেন।

মুসা এইচএসসি পাস করার পর রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। পরে সেখান থেকে রেফার্ড নিয়ে ঢাকা কলেজে চলে যান। এরপর সেখান থেকে পাস করার করার পর উত্তরার লাইফ স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করে। এরই মাঝে প্রায় আড়াই বছর আগে বাসুপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে তৃষ্ণা মনিকে বিয়েও করেন তিনি।

কয়েক দিন আগে মুসার মা সুফিয়া বেগম জানান, বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা চলে যান মুসা। সর্বশেষ এপ্রিল মাসের দিকে বাড়ি গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি সৌদি আরব যাওয়ার কথা বলে জমি বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা নিয়ে যান। তারপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না।

সুফিয়া বেগম বলেন, ‘মাইনুল (মুসা) বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে তার ছবিসহ সব কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- এগুলো কেন পোড়াচ্ছিস? ওই সময় সে বলেছিল, এগুলোর আর কোনো প্রয়োজন নেই।’

এদিকে মুসাকে ধরতে গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার আশকোনার সূর্য ভিলায় অভিযান চালায় পুলিশ। ওই অভিযান চলাকালেই মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা মনিসহ দুই নারী পুলিশের কাছে ধরা দেন। আরও একজন নারী তার গায়ে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মাহুতি দেন। আর গুলিতে নিহত হয় সন্দেহভাজন জঙ্গি আফিফ কাদেরী। মুসা ও তৃষ্ণা মনির পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ওই দিনই তারা প্রথম মুসা ও তৃষ্ণার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার খবর জানতে পারেন।

তৃষ্ণা মনির বাবা আব্দুস সামাদ জানান, ৮ মাস আগে থেকে মেয়ের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। আশকোনার অভিযানের দিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে অপরিচিত এক নম্বর থেকে তার মোবাইল ফোনে মিসড কল যায়। তিনি ওই নম্বরে ফোন করেন। তখন তৃষ্ণা নিজের পরিচয় দিয়ে জানায়, তার বিপদ, তাদের বাসা পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। তখন তিনি মেয়েকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে মেয়ের সঙ্গে আর তার যোগাযোগ নেই।

আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ওই সময় আমি বুঝিনি। মুসার আচরণেও কখনো এমন প্রকাশ পায়নি। যদি জানতাম, তাহলে আমি কি আর আমার মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দিতাম। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। আমার মেয়েও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কিন্তু কী করে তাকে এমন অবস্থার মধ্যে ফেলে দিল আমরা কল্পনা করতে পারিনি।’

বিয়ের পর মুসা উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৬ তলা একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। আর এখানেই থাকতেন নব্য জেএমবির আরেক নেতা আজিমপুরের অভিযানে আত্মহত্যাকারী সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া মেজর জাহিদ। মেজর জাহিদের মেয়ে মুসার লাইফ স্কুলে পড়ত। এ কারণে তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। মুসার ওই ভাড়া বাসার ছাদেই আরেক নেতা তানভির কাদিরসহ নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী ও জিয়াসহ অন্য নেতাদের নিয়ে সভা হতো।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট মুসার বিষয়টি প্রথম জানতে পারে গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে অভিযানের পর। আজিপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে তানভীর কাদেরীর কিশোর ছেলে আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দিতে মাইনুল ওরফে মুসার কথা বলে। জঙ্গি তানভীরের কিশোর ছেলে তার জবানবন্দিতে বলে, ‘মেজর জাহিদ ও মুসার সঙ্গে আমার বাবার দীর্ঘদিন আগে থেকে পরিচয় ছিল। আমার বাবা, মেজর জাহিদ ও মুসাসহ উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি মসজিদে নামাজ পড়ত। তারা প্রায়ই উত্তরার লাইফ স্কুলের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে একসঙ্গে জগিং করত।’

এসব তথ্যের সূত্র ধরেই মুসাকে খুঁজতে শুরু করে পুলিশ সদস্যরা। সবশেষে সিলেটের আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর অভিযানে মুসা নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ বলেন, ‘সিলেট থেকে আমাদের কাছে কোনো বার্তা আসেনি। তারপরেও মুসার বাড়ি যেহেতু বাগমারায়, তাই আমরা সজাগ রয়েছি। বিশেষ করে মুসার গ্রামের বাড়ির দিকে পুলিশের নজর আছে। মুসা থানার তালিকাভুক্ত জেএমবি সদস্য।’