• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ফখরুদ্দিনের শাসনামলে ৬.১ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে’


প্রকাশিত: ৯:৪৮ এএম, ১৭ জুলাই ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭২ বার

বিশেষ প্রতিনিধি :  সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ফখরুদ্দিনের শাসনামলে ৬.১ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার dollar-www.jatirkhantha.com.bdহয়েছে’,কিন্তু একটা পেপারের হেডলাইন হয়নি।এরপর ২০০৮ সালে, অর্থাৎ তখনও ফখরুদ্দিন সাহেবের সরকার, সব রাজনীতিবিদ জেলে, অনেক ব্যবসায়ী জেলে, এই রিপোর্ট অনুসারে সেই বছর ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার অর্থ বাংলাদেশ থেকে গেছে। অর্থাৎ দুই বছরে ৯ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে গেছে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ বিষয়ে টেলিভিশনে কথা বলার মানুষ খুঁজে পাননি বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু।বর্তমানে একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্বে থাকা বাবু বলেন, “নেত্রী গ্রেপ্তারের পর এক ধরনের কাপুরুষ দেখা যায়, আরেক ধরনের ভীতু মানুষ দেখা গিয়েছিল, যারা পালিয়ে বেড়িয়েছে দেশে-বিদেশে। আরেক ধরনের লোক যাদের নেত্রীর প্রতি ভালবাসা ছিল, কিন্তু তাদের ক্ষমতা ছিল না। নীরবে কেঁদেছ।”

তিনি বলেন, “নেত্রীকে যেদিন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন জনে জনে হাতে-পায়ে ধরেছি। বলেছি- আসেন, কিছু বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জেলে কিছু বলেন। উপস্থাপকরা কী সারাক্ষণ চিৎকার করতে পারে, গেস্ট তো খুঁজে পেতে হবে? কেউ যদি দুইটা কথা বলে, না হয় সাথে আমরা দুইটা কথা যোগ দিলাম। সেদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।”dollar-www.jatirkhantha.com.bd.1

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই একটি চাঁদাবাজি মামলায় হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে সংসদ ভবন এলাকার একটি বাড়িতে কারাবন্দি অবস্থায় রাখা হয়। ১১ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ জুন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছিলেন।হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে রোববার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার কারাবরণ: গণতন্ত্র ও ষড়যন্ত্র’ শিরোনামে আলোচানা সভা হয়।

সেখানে বক্তব্যে মোজাম্মেল বাবু বলেন, “বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, এতে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্নভাবে জড়িত হয়েছিলেন, শুধুমাত্র যুক্ত হয়নি আওয়ামী লীগের তৃণমূল। মধ্যস্বত্বভোগী বলতে যে কথা বলি, আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতারা হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী। জনগণ হচ্ছে শেখ হাসিনার একমাত্র সমর্থক। যে যত বড় নেতা সে তত বড় মধ্যস্বত্বভোগী।”

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইউসূফ হোসেন হুমায়ূন বলেন, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা যখন হবে, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস আমাকে বলেছিল, আপনাকে এই মামলার প্রধান আইনজীবী হতে হবে। ওই সময় অনেক সিনিয়র আইনজীবীদের কেউ এদিক-কেউ ওদিক চলে গেলেন। আমি জুনিয়র কিছু আইনজীবী নিয়ে চালিয়ে যাই। তখন ট্রাইব্যুনালে মামলা চলে, আমাকে টেলিফোনে ডিজিএফআই থেকে থ্রেট করা হয়েছে। আমিও তাদেরকে জবাব দিয়েছি।”

এই সময় শেখ হাসিনার বহু আইনজীবীর উপর তৎকালীন সরকার অত্যাচার করে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তারপরও আমরা দমে যাইনি, মামলা লড়ে গেছি।”

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “আপনারা যদি (আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী) শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী না করেন… আওয়ামী লীগের ভিতরে ভিতরে যে ভাঙ্গন এর একটি চিত্র হচ্ছে কুমিল্লা। সমগ্র বাংলাদেশের চেহারা এর কাছাকাছি। যদি এই জিনিস আপনারা পরিবর্তন করতে না পারেন, তাহলে যে ষড়যন্ত্র, এই ষড়যন্ত্র থেকে আমরা বের হতে পারব না।

“সেই কঠিন সময়টি কিন্তু আবার আসছে, আপনি মনে করেন আগামীতে বিএনপিকে বাদ দিয়ে আবার নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করতে পারবেন? বিএনপি নির্বাচনে আসবেই, কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে আসা যতটা জরুরি, তার চেয়ে জরুরি আওয়ামী লীগের বিএনপিকে নির্বাচনে আনা।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “আমাদের কাছে ডকুমেন্ট আছে, ওয়ান-ইলেভেনে দেশ যখন অন্ধকারে, কারফিউর মধ্যে, এর বিরুদ্ধে আমরা যারা স্বাক্ষর গ্রহণ করেছি, সেই সময় অনেক শিক্ষক আমাদের পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। তখন তারা বলেছিল, এসব কী করছ? তারাই এখন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে বসে আছেন।”

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মতো উদার মানুষ আমি আর একজনও দেখিনি। আত্মতুষ্টিতে ভুগলে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দলটি ঠিক করবে না। সামনে জাতীয় নির্বাচনে যে মনোনয়ন দেওয়া হবে- সেই বিষয়গুলো দেখতে হবে। নতুন প্রজন্মের ভোটার যারা তারা এগুলো দেখে।”

আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. আশিকুর রহমান। ‘গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি-(জিএফআই)’র প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিছু দিন আগেও অনেক পেপারে এসেছে যে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৭০ হাজার, ৯০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।

“এই রিপোর্টটা ২০০১ সাল থেকে পাবলিশড হচ্ছে, কিন্তু যখন ফখরুদ্দিন সাহেরের সরকার ছিল, তখন এই রিপোর্টটা তাদের চোখে পড়েনি। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৭ সালে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছে, কিন্তু একটা পেপারের হেডলাইন হয়নি।

“এরপর ২০০৮ সালে, অর্থাৎ তখনও ফখরুদ্দিন সাহেবের সরকার, সব রাজনীতিবিদ জেলে, অনেক ব্যবসায়ী জেলে, এই রিপোর্ট অনুসারে সেই বছর ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার অর্থ বাংলাদেশ থেকে গেছে। অর্থাৎ দুই বছরে ৯ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে গেছে।”

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, অঞ্জন রায়, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ, দৈনিক মানব কণ্ঠের সম্পাদক আনিস আলমগীর, ভোলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মনজু মোল্লা, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুর রহমান হিরণ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী স ম রেজাউল করিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।