• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

পলায়নপর বিএনপি নির্বাচন ঠেকাবে?


প্রকাশিত: ৫:১৬ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ১৮ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৬ বার

 

স্টাফ রিপোর্টার : অনশন অনুষ্ঠান শেষ না হতেই প্রায় পৌণে এক ঘন্টা আগে পলায়নপর হলো বিএনপি নেতা-কর্মীরা। আর এভাবেই নেতারা দাবি তুলে হুংকার ছুঁড়লো বিএনপি এবার নির্বাচন ঠেকাবে? তারা বললো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া একতরফা কোনো নির্বাচন এ দেশে হবে না, হতে দেওয়া হবে না।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও তাঁর মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে আয়োজিত এই প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন।

গত সোমবার একই দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সারা দেশের জেলা সদর ও মহানগরে মানববন্ধন করে বিএনপি। ওই কর্মসূচিতে ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অনেক জায়গায় বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত দিনের কর্মসূচিতে পুলিশের অভিযানের কারণে আজকের প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে উপস্থিতি কম ছিল।

আজকের কর্মসূচিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে কর্মসূচি শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে থেকে অনশনস্থল ত্যাগ করা শুরু করেন। এ কারণে অনশনের সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন উপস্থিতি একেবারে কমে যায়।

পুলিশ বিএনপির অনশন কর্মসূচিতে কোনো অভিযান চালায়নি। তবে কর্মসূচিকে ঘিরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সাদাপোশাকের পুলিশ মৎস্য ভবন মোড় ও কাকরাইল এলাকায় গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযানের মাধ্যমে পুলিশ বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মীকে ধরে নিয়ে যায়।

ধরপাকড়ের কথা স্বীকার করেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান। তিনি জাতিরকন্ঠকে বলেন, ‘চারজনকে আটক করা হয়েছে।’প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বিএনপির কর্মসূচি থেকে ফেরার সময় সাদাপোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ দলটির নেতা-কর্মীদের আটক করে। পুলিশ সদস্যরা আগে থেকে মৎস্য ভবন ও কাকরাইল এলাকায় অবস্থান নেওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা আটকের বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেননি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের পানি পান করিয়ে প্রতীকী অনশন ভাঙান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও অনশন কর্মসূচির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি এ দেশে হবে না। তফসিল ঘোষণার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অন্যায় ও মিথ্যা’ মামলায় খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্র করে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাঁর মুক্তি ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, সারা‌ দেশ আজ‌ ঐক্যবদ্ধ। দে‌শি-বি‌দেশি বন্ধুরাষ্ট্রগু‌লো বল‌ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হ‌তে হ‌বে। আর খা‌লেদা জিয়া‌কে ছাড়া, বিএন‌পি‌কে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হ‌বে না।

পুলিশ বা‌হিনী‌র উদ্দেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের সময় শেষ। মামলা, গ্রেপ্তার ক‌রে বিএন‌পির দা‌বি আদা‌য়ের আন্দোলন দমন করা যাবে না। পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আওয়ামী লী‌গের কর্মচারী না। যাঁরা এখনো আওয়ামী লী‌গের কথায় কাজ কর‌ছেন, তাঁদের কিন্তু ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হি‌সে‌বে দায়িত্ব পালন কর‌তে হ‌বে। তাই অযথা বিএন‌পির নেতা-কর্মীদের হয়রানি, গ্রেপ্তার ও মামলা দেবেন না।

প্রতীকী অনশনে বিএনপির স্থায়ী ক‌মি‌টির সদস্য মওদুদ আহমদ ব‌লেন, সামনে এমন কর্মসূচি দেওয়া হ‌বে, যে কর্মসূচিতে এই সরকা‌রের নৌকা ভেসে যা‌বে। তিনি বলেন, সরকার খা‌লেদা জিয়ার মু‌ক্তি চায় না। আইনি প্রক্রিয়ায় খা‌লেদা জিয়ার মু‌ক্তি হ‌বে না। তাই খা‌লেদা জিয়ার মু‌ক্তির একমাত্র পথ রাজপথ। রাজপথে আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গ‌য়েশ্বর চন্দ্র রায় ব‌লেন, খা‌লেদা জিয়া কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। তাঁকে সুস্থ করতে সরকা‌রের কোনো প্রচেষ্টা নেই। বরং খা‌লেদা জিয়া‌কে জেলখানায় তি‌লে তি‌লে মারার ষড়যন্ত্র কর‌ছে সরকার। তি‌নি ব‌লেন, খা‌লেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। খা‌লেদা জিয়াকে ছাড়া যদি দ‌লের কেউ নির্বাচ‌নে যে‌তে চায়, তাঁদের সমুচিত জবাব দি‌তে হবে।প্রতীকী অনশন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সা‌বেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহ‌মেদ বিএন‌পির জ্যেষ্ঠ নেতা‌দের পা‌নি পান ক‌রি‌য়ে নির্ধারিত সম‌য়ের ম‌ধ্যে প্রতীকী অনশন ভাঙান।

এ সময় অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ ব‌লেন, ‘আজ‌কে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত। ১৯৭১ সালে যে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই গণতন্ত্র আজ ভূলুণ্ঠিত। এর থে‌কে উত্তরণের পথ আগামী জাতীয় নির্বাচন, যে নির্বাচন হ‌তে হ‌বে নিরপেক্ষ সরকা‌রের অধী‌নে। কারণ, আমরা আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌ‌লিক অধিকার, গণতন্ত্র হারিয়েছি—খা‌লেদা জিয়ার মু‌ক্তি ও ভবিষ্যতে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচ‌নের মাধ্যমে এসব ফি‌রে পে‌তে চাই।’বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খানসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এবং ২০-দলীয় জোটের নেতারা কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।