• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নিরাপদ সড়ক-সরকারের চ্যালেঞ্জ ও ইন্ধন!!


প্রকাশিত: ৪:২৩ পিএম, ২ আগস্ট ১৮ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৮ বার

 

এস রহমান : নিরাপদ সড়ক এখন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে বেশকিছু আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ নিলেও সরকার বিরোধীদের ইন্ধন ও উস্কানিতে পেরে উঠতে সমস্যা হচ্ছে। সরকারবিরোধী উস্কানি ও ইন্ধনদাতারা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে খেলছে। অনেককে ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামাতে বাধ্য করেছে। এর পেক্ষাপটে সাধারন মানুষ এখন দূর্ভোগের চরম শিখরে। কয়েক দিনের একটানা বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সরকার দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও আজ বৃহস্পতিবারও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামানো হয়েছে।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর অন্তত ২০টি পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে বলে ট্রাফিক পুলিশ কন্ট্রোল রুম নিশ্চিত করেছে অনলাইন দৈনিক জাতিরকন্ঠকে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, গত কয়েক দিনের মতই ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক নেই। ওদিকে গত কয়েক দিনের বিক্ষোভের মধ্যে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পরিবহন মালিকরাও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাস ছাড়ছেন না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

দানব বাস জাবালে নূর এর চাপায় গত ২৯ জুলাই কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর থেকেই শিক্ষার্থী বিক্ষোভ চলছে। গত দুই দিনে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানেও।এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার রাতে ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে’ বৃহস্পতিবার দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনার কথা জানান।

কিন্তু ফেইসবুকে আন্দালনকারীদের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে নিষেধ না মেনেই রাস্তায় থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ অবরোধের খবর আসতে থাকে।

উত্তরা, মহাখালী, মগবাজার, শাহবাগ, রামপুরা, ফার্মগেইট, আসাদগেইট, খিলগাঁও, মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা আগের দিনের মতই মিছিল করছে এবং গাড়ি থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করছে। পুলিশের ভূমিকায় তাদের এই পরীক্ষা থেকে পুলিশের গাড়িও ছাড় পাচ্ছে না।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে বেলা ১২টার দিকে। এতে তাদের উৎসাহিত করতে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন শশ্রুমন্ডিল ব্যক্তিকে। তারা বলছিল এই ছাত্রছাত্রীদের দিয়েই সরকারের মসনদ নড়াতে হবে। কথিত হাবিবা নামের এক শিক্ষার্থীকে বলে, আমরা বিচার চাই। তখন রাস্তায় দাড়ানো এক ইব্রাহিম খলিল নামের এক ব্যক্তি বলে সরকারতো দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ড্রাইভারকে গ্রেফতার করেছে গাড়ির মালিককে গ্রেফতার করেছে। তারপরও তোমরা রাস্তায় কেনো? এসময় ওই ছাত্রী কোনো কথা বলব না বলে দ্রুত চলে যায়।

মহাখালীর রেলগেইট এলাকায় বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। তারা রেল লাইনের দুইপাশে এবং সাতরাস্তা থেকে আমতলী যাওয়ার দুই দিকের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে গাড়ি আটকে চালক ও গাড়ির লাইসেন্স দেখছিলেন। কাগজ দেখাতে না পারলে গাড়ি পাঠাচ্ছিলেন পুলিশের কাছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স বা কোনো গাড়িতে রোগী থাকলে দ্রুত ছেড়ে দিচ্ছিলেন তারা।

বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে দেখা যায় অধ্যক্ষ শাহ কাওছার আহমেদ চৌধুরী ও অ্যাডজুডেন্ট ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মো. টিপু সুলতানকে। টিপু সুলতান বলেন, আইএসপিআর-এর অনুমতি ছাড়া আমরা কথা বলি না। তাহলে রাস্তায় দাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরতদের সহায়তা করছেন কেন প্রশ্ন করা হলে তারা নিরব দর্শক হয়ে যান। তবে একপর্যায়ে বলেন, এখানে আমাদের কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলনে অবস্থান নিয়েছে, তারা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়ে তা দেখতেই আমরা এখানে এসেছি।

সাতরাস্তা থেকে আমতলী যাওয়ার পথে এক মোটরসাইকেল আটকে চালকের লাইসেন্স দেখে বিক্ষোভকারীরা। কোনো বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে চালক ইব্রাহিম খলিল অনলাইন দৈনিক জাতিরকন্ঠকে জানান, এটা ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে করাচ্ছে সরকারবিরোধী জামায়াত শিবির বিএনপি চক্র।

স্কুল কলেজের শিক্ষকরা এবং সরকারের গোয়েন্দা পুলিশ’রা সঠিক পদক্ষেপ নিলে অবস্থা এতোদূর এগুতো না। সাত রাস্তার দিক থেকে সচিবালয়ে যাওয়ার সময় মগবাজারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের গাড়ি। পরে তিনি বেরিয়ে এসে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়গুলো তিনি মন্ত্রিসভায় তুলবেন। পরে তাকে যেতে দেয় শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশের পরনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউনিফর্ম দেখা গেছে। তবে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় অনেকে সাধারণ পোশাকেও এসেছে। পুলিশের গাড়ি আটকানোর চেষ্টার সময় কারও কারও মুখে কাপড় পেঁচিয়ে রাখতেও দেখা গেছে।বিক্ষোভকারীদের হাতে দেখা গেছে- ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘উই আর স্টুডেন্ট’, নট টেরোরিস্ট’- এরকম বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ও টুকরো কাগজ।

রাস্তায় গোল হয়ে বসে সুরে সুরে স্লোগান দিতেও দেখা যায় কাউকে কাউকে। সকালে টঙ্গী কলেজগেট এলাকায় ময়মনসিংহ রুটের দুটি বাস ভাঙচুরের শিকার হয়। মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রমিজউদ্দিন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পড়া শিক্ষার্থীরা অল্প সময়ের মধ্যে উত্তরা এলাকার রাস্তার দখল নেয়। উত্তরার জসিমউদ্দিন মোড়ে একটি পিক-আপ ভ্যান ভাংচুরের শিকার হলে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বেলা ১১টার দিকে খিলক্ষেত আর ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের সামনের রাস্তাও ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে। কুড়িল বিশ্বরোড, খিলক্ষেত এলাকায় অনেক মানুষ তখন হালকা বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন গাড়ির জন্য। শাহবাগে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করে সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকেই। হাতে হাত বেঁধে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ধীরে ধীরে ছাতা হাতে জমায়েত বাড়তে থাকে। চলতে থাকে স্লোগান।

মুন্সী আবদুর রউফ রাইফেলস কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, নটরডেম কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কলেজের পোশাক পরা শিক্ষার্থীদের দেখা যায় শাহবাগে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাইক নিয়ে আসে আন্দোলনকারীরা। সেখানে ঘোষণা দেওয়া হয়- “আমরা সিঙ্গেল লাইনে গাড়িগুলো ছাড়ব। গাড়ির লাইসেন্স থাকলে তারপর যেতে দেব।এক পর্যায়ে এক রোগীর জন্য দুই ব্যাগ ‘এ পজিটিভ’ রক্তের প্রয়োজনের কথা জানানো হয় মাইকে। সঙ্গে সঙ্গে দুই কলেজ শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে যান রক্ত দিতে।

শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে সড়কের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন স্কুল শিক্ষিকা আসমা খন্দকার। তিনি বললেন, সরকার স্কুল কলেজ ছুটি দিয়েছে তারপরও ছেলে মেয়েদের রাস্তায় নামাতে ইন্ধন দিলো কে? কেউ না কেউ তো এদের পেছনে আছে; যারা সরকারকে বিপাকে ফেলতে চাইছে।তিনি বলেন, আমার দুই মেয়েও স্কুলে পড়ে। আজকে সরকার স্কুল কলেজ বন্ধ করেছে।

আমরা বলি স্কুল কলেজ নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দিন। সমস্যাগুলো বন্ধ না করে স্কুল কলেজ বন্ধ করছেন কেন? আগে সমস্যাগুলো বন্ধ করে দিন। নিরাপদ সড়ক আমাদের অধিকার।শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের এক ছাত্রী প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম নিয়ে শাহবাগে এসেছেন। তার উদ্দেশ্য বিক্ষোভে কেউ আহত হলে যেন তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়া যায়।

সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার রফিক বলেন, এটা সরকারকে বিপাকে ফেলতে করা হচ্ছে। তবে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স যারা দেয় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এ অান্দোলনটা অসৎদের চরিত্রবান হতে সহায়তা করবে। মনে রাখতে হবে সবার ঘরে ছেলেমেয়ে আছে। কাজেই সকলকে আইন মেনে চলতে হবে। নিরাপদ সড়ক গড়তে হবে।

ইমপেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১০টার দিকে রামপুরায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মেরুল বাড্ডা থেকেই যানবাহন ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ।খিলগাঁও রেলগেইট থেকে মালিবাগ রেলগেইট পর্যন্ত বাস আটকাতে দেখা যায় খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল, খিলগাঁও গভার্মমেন্ট বয়েজ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের। তাদের সঙ্গে ওই কলেজের সদ্য এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায়।তাদের একজন মোহাম্মদ রিফাত বলেন, স্কুল-কলেজতো বন্ধ করে দিয়েছে। এটা সরকারের একটা চাল। ছোটরা না আসতে পারলেও আমরা আসব।

রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের মালিবাগ মোড় থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায় বেলা ১১টার দিকে। এখানে আন্দোলনরতদের কাগজ- মার্কার পেন দিয়ে সহায়তা করতে দেখা গেছে স্থানীয় চিহ্নিত বিএনপি নেতাদের লোকজনকে।ফলে কাকরাইল থেকে শান্তিনগর হয়ে মালিবাগ পর্যন্ত পুরো রাস্তা অচল হয়ে যায়। ফ্লাইওভারের ওপরে গাড়ি আটকে থাকতে দেখা যায়।