• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ডিজিটাল ডাকাতি’ হয়েছে রিজার্ভের অর্থ : বিএনপি


প্রকাশিত: ৮:২৬ পিএম, ২৯ মার্চ ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৯ বার

 
বিশেষ প্রতিবেদক : আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটের স্থাপত্য বিশ্লেষণ, 1প্রামাণিক সাক্ষ্য এবং বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে বিএনপির কাছে স্পষ্ট হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা লুটের ঘটনা হ্যাকিং নয়, ‘ডিজিটাল ডাকাতি’। সুইফট নেটওয়ার্কে ব্যাংকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সম্পৃক্ততা ছাড়া এ লুণ্ঠন অসম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির বিষয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে উপস্থাপন করা বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনায় এ দাবি করা হয়।

অর্থ চুরির ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার এক মাসের মাথায় বিএনপি এ বিশ্লেষণ তুলে ধরল। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে সনদপ্রাপ্ত শামা ওবায়েদ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এ বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি বিশ্লেষণপত্রে বলেছে, সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ইন্টার ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) সম্পূর্ণভাবে রুদ্ধ, নিরাপদ ও সুরক্ষিত একটি নেটওয়ার্ক। যাদের কাছে সুইফটের সরবরাহ করা চাবি ও পাসওয়ার্ড আছে, তারা ছাড়া অন্য কারও সুইফটে অনুপ্রবেশ অসম্ভব। এটি লুকানোর জন্যই ম্যালওয়্যার বা হ্যাকিং তত্ত্ব সামনে আনা হয়েছে।

বিশ্লেষণপত্রে বলা হয়, বিশ্বের দেশে ব্যবহৃত সুইফট নেট টার্মিনাল বা কম্পিউটার শুধু বার্তা আদান-প্রদানের কাজে ব্যবহার হয়। এর প্রত্যেক সদস্য ব্যাংক সুইফট কর্তৃপক্ষ থেকে সনদপ্রাপ্ত হয়ে একটি একক পরিচিত কোড, সফটওয়্যার সেবা পায়, যার মাধ্যমে তারা সুইফট নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এই সুইফট নেটে লগইনের জন্য তাদের সরবরাহ করা পেন ড্রাইভ–সদৃশ ডঙ্গল বা একটি অন্য চাবি বাস্তবে কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হয়।

এরপর অনুমোদিত ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড লাগে। এটি তখনই লগ ইন সম্ভব হয়, যখন ওই চাবি ও পাসওয়ার্ড দুটোই থাকে। এ ছাড়া সুইফটে থাকা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বায়োমেট্রিক বা আঙুলের ছাপ দিয়েও লগ ইন করা যায়।
বিশ্লেষণ পত্রে বলা হয়, সুইফট নেট ব্যবস্থা এতটাই সুরক্ষিত যে, এতে ম্যালওয়্যার ভাইরাস অনুপ্রবেশ অসম্ভব। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি হ্যাকিং বা ম্যালওয়্যার হওয়ার নজির নেই।

ম্যালওয়্যার হলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিতভাবে অ্যালার্ট মেসেজ পেত। বিশ্বের ১০ হাজারেরও বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই নেটওয়ার্কে লেনদেন করে। এতে প্রতিদিন দুই কোটি বার্তা আদান-প্রদান হয়। কেবল ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিই এটি ব্যবহার করতে পারেন। এমন সুরক্ষিত সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা লুটের ঘটনাটি এখন সারা বিশ্বের গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত সুইফটের সিআইও মাইক ফিশের বক্তব্যের উল্লেখ করা হয় বিএনপির পর্যালোচনাপত্রে। তাতে মাইক ফিশ বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো সাক্ষ্য নেই, যা প্রমাণ করে যে আমাদের নেটওয়ার্কে অথবা আমাদের তথ্যভান্ডারে আজ পর্যন্ত কখনো অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ম্যাট বিশপের কথা বলেন শামা ওবায়েদ। ম্যাট বিশপ সুইফট নেটে ম্যালওয়্যারের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, কেবল অনুমোদিত ব্যক্তিরাই সুইফট নেট ব্যবহার করতে পারেন অথবা এর পরিবর্তন করতে পারেন। অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও এই সিস্টেমে প্রবেশের সুযোগ নেই।

বিএনপি ১৯ মার্চ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেছে, সুইফট নেট ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান ‘ফায়ার আই’ অনুসন্ধান করে বলেছে, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট নেট সফটওয়্যার পরিচালনাকারী সিস্টেমে কোনো সমস্যা পায়নি। তারা দেখেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩২টি কম্পিউটার ম্যালওয়্যার দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু ওই কম্পিউটারগুলো সুইফট নেট থেকে বিচ্ছিন্ন বা আলাদা করা আছে।

শামা ওবায়েদ বলেন, সুইফট নেটে ঢোকার সব প্রক্রিয়া শেষে পাঠানো বার্তা সুইফট গেটওয়েতে যায়। সেখান থেকে সুইফটের ডেটা সেন্টার হয়ে লগ ফাইলে জমা হয়। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কে বার্তাটি পাঠিয়েছিল, তা লগ ফাইলে বহাল আছে। কারণ এ বার্তা অমোচনীয়।
বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা উপস্থাপন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা গবেষণা করে যা পেয়েছি, তা আমরা তুলে ধরেছি।

আমরা বিশ্বাস করি, এটার ওপর ভিত্তি করে বা এটাকে সামনে নিয়ে তারা (তদন্ত দল) আরও নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও আরও বিস্তারিত গবেষণা করবেন এবং দায়ীদের চিহ্নিত করবেন।’ দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি কোনো লুকোচুরির বিষয় না। এটি নিয়ে ফিলিপাইনে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে কী হচ্ছে?