ট্রাম্পের সব চাল ধূলিস্যাত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
শফিক রহমান : হিপ হিপ হুররে-অবশেষে ট্রাম্পের সব চাল ধূলিস্যাত করে প্রেসিডেন্ট হলেন জো বাইডেন। বাইডেনের পাশাপাশি নতুন রেকর্ড গড়ে রানিংমেট হলেন কমলা হ্যারিস। তথ্য সূত্র সিএনএন,ফক্স নিউজ, দ্যা মিন্ট । এদিকে কমলা হ্যারিস দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে দক্ষিণ এশীয়দের মুখ উজ্জল করলেন তিনি। এর আগে অন্য কোন নারী এই পদে দায়িত্ব পালন করেননি।জানা গেছে, সর্বশেষ পেনসিলভানিয়া জিতে আগামী চার বছর হোয়াইট হাউজের দখল নিশ্চিত করে ফেললেন ডেমোক্রেট চ্যালেঞ্জার জো বাইডেন। পরাজিত ডোনাল্ড ট্রাম্প রাগে যতই গজগজ করুন, তাদের দুজনের চারিত্রিক আর মতাদর্শের পার্থক্য সমর্থক আর বিরোধী সবার কাছেই স্পষ্ট।
এক কথায় এবারের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে মার্কিন নাগরিকরা যেমন বিভাজিত হয়েছেন সেটা আগে কখনও দেখা যায়নি। কাকতলীয় হলেও, এমাসের শেষেই ৭৮ বছরে পা দেবেন জো বাইডেন। তাই জানুয়ারিতে ওভাল অফিসে তার অভিষেকের সময় আমেরিকা পাবে ইতিহাসের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রপতিকে।তবে উৎসবের পরিকল্পনা করছেন না বাইডেন। তিনি নিজে যেমন উপলদ্ধি করছেন, ঠিক তেমনি করে বলেও আসছেন; তার দেশ এক চরম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে মহামারির করাল থাবামুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে।
বাইডেন একটুও বাড়িয়ে বলেননি। সত্যিকার অর্থেই যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ ধরনের জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে। এমনকি নির্বাচন চলাকালেই দৈনিক এক লাখ সংক্রমণের টানা রেকর্ড হয়েছে তিনদিন ধরে। আজ ৭ নভেম্বর শনাক্ত করা সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩২ হাজারের নতুন নেতিবাচক রেকর্ডে!১৯৩০ এর দশকের পর এসময়কে বলা হচ্ছে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার কাল। পাশাপাশি ট্রাম্পের উস্কানিতে বর্ণবাদ আর পুলিশি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে মার্কিন জনতা।অমীমাংসিত এসব জটিলতা সমাধানের ভার বাইডেনের কাঁধেই পড়বে। তিনি তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেও নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুখবর হলো দেশটির ৪৬তম রাষ্ট্রপতি একদজন দৃঢ়চেতা এবং মার্জিত রাজনীতিবিদ। তিনি অন্যের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। ব্যক্তিগত জীবনে স্বজন হারানোর বেদনা তাকে একজন সহনশীল মানুষে পরিণত করেছে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, তার ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, হিলারি ক্লিনটন, বর্ষীয়ান সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স-সহ ডেমোক্রেট দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সকলে তাকে গভীর শ্রদ্ধা করেন। সেই শ্রদ্ধা তিনি এবারের নির্বাচনে নতুন ভোটারদের মধ্যেও অর্জন করেছেন।ট্রাম্প যখন আচমকা জয় ঘোষণা-সহ, ভোটগ্রহণ বন্ধ করা এবং সমর্থকদের সংঘাতে উস্কানি দেওয়ার মতো বক্তব্য দিয়েছেন, তখন বাইডেন ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে পারতেন। তিনি যার বিপরীতে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় সকলকে শান্তি, সৌহার্দ্য আর জাতীয় ঐক্যের পথে থাকার আহবান জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ডেলাওয়ার থেকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে মনে করিয়ে দেন,যদি তিনি জয়ী হন তাহলে সব মার্কিন নাগরিকের প্রেসিডেন্ট হবেন। যারা তাকে ভোট দিয়েছেন এবং দেননি তাদের সকলেই তার কাছে সমান গুরুত্ব পাবেন। এটাই ট্রাম্পের সঙ্গে তার পার্থক্য। কারণ ট্রাম্প শুধু তার সমর্থকদের জন্যেই কাজ করার কথা বলে থাকেন। বিভেদ সৃষ্টি করেন ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান শাসিত রাজ্য নিয়ে। নির্বাচনে হেরে গেলেও, সেই ফল তিনি এখন মানতে পারছেন না। বারবার বলছেন ডেমোক্রেট শাসিত রাজ্যগুলোর প্রশাসন তার সাথে বেঈমানি করেছে। করেছে ভোট কারচুপি।
তার ধারাবাহিকতায় শনিবার (৭ নভেম্বর) বলেছেন, গননার কক্ষে ‘খারাপ কাজ’ করা হয়েছে। পেনসিলভানিয়া-সহ নির্বাচনী লড়াইয়ের মূল নির্ধারণী রাজ্যে হাজার হাজার জাল ভোট জমা পড়েছে, দাবি করেন ট্রাম্প। আমাদের পর্যবেক্ষকদের তারা ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে দেয়নি। নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের এই প্রক্রিয়ায় তারা বাধা দেয়। জানালা- দরজা বন্ধ করে, জানালার কাঁচে কাডবোর্ড লাগিয়ে তারা ভোট জালিয়াতির কাজ করে গেছে। এভাবেই তারা খারাপ কাজগুলো করেছে, টুইট বার্তায় বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এসময় তিনি আরও বলেন, এভাবে আরও অনেক রাজ্যে আমার বিপক্ষে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের রাতে সকলেই জানতেন আমি পেনসিলভানিয়ায় জিততে চলেছি। কিন্তু, রাতারাতি সেখানে আমার এগিয়ে থাকা হারিয়ে গেল। কীভাবে এটা হলো? কারণ, আমাদের দলের কাউকে তারা ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে দেয়নি।ট্রাম্পের বক্তব্যের সত্যতা একেবারেই নেই। খোদ তার প্রিয় গণমাধ্যম ফক্স নিউজ নির্বাচনে কোনো প্রকার অনিয়মের প্রমাণ পায়নি। বরং, ভোট গণনা বন্ধের দাবিতে ট্রাম্প সমর্থকদের উৎপাতে নাজেহাল হতে হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রের নির্বাচন কর্মীদের।
ট্রাম্প শিবির জানিয়েছে, তারা নিজেদের জয় প্রতিষ্ঠায় আইনের আশ্রয় নেবে। সেই প্রস্তুতি তারা নেওয়া শুরুও করেছে পরাজয়ের সম্ভাবনা দেখা দেওয়া মাত্রই। বাইডেন শিবিরও নাগরিকদের ভোটের অধিকার রক্ষায় এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। তবে মার্কিন বিচার ব্যবস্থা জাতীয় নির্বাচনে কতখানি হস্তক্ষেপ করবে, সেই বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।