• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

জেমস বন্ড-০০৭-ঐতিহাসিক থিম মিউজিকের অন্তরালে-


প্রকাশিত: ৭:৩৬ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৭ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪৭ বার

j-3প্রিয়া রহমান  :  বিশ্বের অন্যতম পরিচিত একটি সঙ্গীতের জন্ম হয়েছিল ১৯৬২ সালে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র জেমস বন্ডকে নিয়ে তৈরি ছায়াছবির জন্য। ওই থিম সঙ্গীতের রচয়িতা মন্টি নরমান বলেছেন কীভাবে তিনি রচনা করেছিলেন যুগান্তকারী এই থিম সঙ্গীত।

মন্টি নরমান ষাটের দশকের গোড়ায় ছিলেন সঙ্গীত রচয়িতা ও গায়ক। লন্ডনের থিয়েটার পাড়া ওয়েস্ট এন্ডে সঙ্গীত ভিত্তিক নাটকগুলোর জন্য তিনি সঙ্গীত রচনা করতেন। ওই থিয়েটার জগতের সঙ্গে যোগাযোগের সুবাদে আমেরিকান চিত্র প্রযোজক অ্যালবার্ট ব্রকোলি তাকে বলেন জেমস বন্ডের কাহিনি নিয়ে প্রথম ছবি ‘ড: নো’ তৈরি করছেন তিনি। তার জন্য একটা সঙ্গীত তিনি তৈরি করতে পারবেন কিনা।
j-1
তখন তিনি বলেছিলেন গুপ্তচর জেমস বন্ডের কাহিনি নিয়ে তারা হয়ত দুটো চলচ্চিত্র বানাবেন আর একটা টিভি সিরিজ। উনি বললেন ইয়েন ফ্লেমিং-এর লেখা জেমস বন্ডের কাহিনি নিয়ে আমরা সিনেমা বানাচ্ছি। আমরা চাই প্রথম ছবিটার মিউজিক তুমি বানাও। আমি সেসময় খুবই ব্যস্ত ছিলাম। বলতে যাচ্ছিলাম- আমাকে একটু ভাবার সময় দিন। কারণ আমি জেমস বন্ডের ওই ড: নো-র গল্প সম্বন্ধে কিছুই জানতাম না।

j-2ঠিক ওই সময় উনি বললেন আমরা ছবির জন্য পুরো শ্যুটিং করব ওয়েস্ট ইন্ডিজের জামাইকার লোকেশানে। তুমিও এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দাও না কেন-তাহলে ক্যারিবীয় সঙ্গীতের কিছুটা স্বাদ নিতে পারবে- তোমার স্ত্রীকেও নিয়ে এসো- খরচ-খরচা সব আমাদের। এর উত্তরে কী করে না বলি বলুন?

বইটি ছিল শীতল যুদ্ধের পটভূমিতে লেখা একটি গোয়েন্দা থ্রিলার।তবে ঠিক কী ধরনের মিউজিক প্রযোজকরা চাইছেন – বা কী ধরনের যন্ত্র- বা শব্দ তাদের পছন্দ – সে সম্পর্কে কোনো ধারণা তারা দেন নি। ব্যাপারটা ছিল এরকম যে – দেখি তুমি কী বানাও!

মন্টি নরমান কয়েক বছর আগে একটি সঙ্গীত নাটকের জন্য একটা মিউজিক তৈরি করেছিলেন, কিন্তু সেটা ব্যবহার হয় নি। সেটা ব্যবহার করেই তিনি একটা সঙ্গীত সৃষ্টির কথা ভাবলেন। হঠাৎই আমার মনে পড়লো- আ হাউস অফ মিঃ বিসওয়াস নামে একটা মিউজিকালের জন্য আমি একটি সুর রচনা করেছিলেন। কিন্তু মিউজিকালটা মঞ্চস্থ হয় নি। ফলে সেটা পড়ে ছিল আমার টেবিলের নিচের ড্রয়ারে।

কাহিনিটা ছিল ভি এস নঈপালের লেখা -ত্রিনিদাদের ঘটনা নিয়ে। ওই নাটকের জন্য তৈরি আমার পছন্দের একটি সুরের স্বরলিপি একটু অদলবদল করে তৈরি করলাম সেই থিম মিউজিক।ঠিক যেমনটা চাইছিলাম। একটা কঠোর- নিষ্ঠুর একটা ব্যঞ্জনা- যা জেমস বন্ডের চরিত্রের সঙ্গে মেলে।

তাকে সাহায্য করেছিলেন সেসময় জন ব্যারি নামে একজন খুব ভাল তরুণ বাদক। তিনি মিউজিক অ্যারেঞ্জ করলেন।কাজটা শেষ হওয়ার পর আমাদের মনে হল সত্যি একটা দারুণ মিউজিক হয়েছে- দারুণ।
ব্রিটেনের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইয়েন ফ্লেমিং ১৯৫০এর দশকে জেমস বন্ডের চরিত্রটি তৈরি করেন। ভদ্র, অথচ খুন করতে যার হাত কাঁপে না, অসীম শক্তিধর, লক্ষ্য অর্জন করতে বিশ্বের যে কোনো নারীর সঙ্গ করতে যিনি দ্বিধাগ্রস্ত হন না এবং শীতল যুদ্ধের মোকাবেলা করতে যিনি একাই একশো।

প্রথম মুভি ড: নো-তে ‘জিরো জিরো সেভেন এজেন্ট’ বা চর জেমস বন্ড চরিত্রে অভিনয়ের জন্য যখন শন কনারি এলেন তখন ওই চরিত্রে সত্যিকার অর্থে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হল। তবে প্রযোজকরা প্রথমে তাকে চান নি। মন্টি নরমান বলেছেন তার ধারণা ছবির আমেরিকান কর্মীরা তার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না।

আমেরিকানরা ছবিটাকে তখন খেলো করে দেখত- বলত -এটা একটা চটুল গোয়েন্দা গল্প। ছবির কাজ ওরা শুরু করেছিল- কিন্তু উৎসাহ নিয়ে নয়। আমার মনে হয়- ওরা বোধহয় ক্যারি গ্রান্টকে নিয়ে কাজ শুরু করার কথা ভেবেছিল। ভাগ্যিস সেটা হয় নি। কারণ জেমস বন্ডের চরিত্রে শন কনারির থেকে ভাল আর কে হতে পারত!

আমি খুব সচেতনভাবে প্রথম দৃশ্যের মিউজিক তৈরি করেছিলাম। -প্রথম দৃশ্যেই তিনজন অন্ধ ভিখারি ছিল- অন্তত দেখে মনে হয় তারা অন্ধ ভিখারিই হবে-হেঁটে যাচ্ছে- কিন্তু ওরা তিনজন ছিল আসলে চর। আর সেটাই ছিল বন্ড ছবিতে প্রথম খুনের দৃশ্য। সচরাচর খুনের দৃশ্যে যেরকম মিউজিক হয়ে থাকে, আমি অনায়াসে তেমনটা করতে পারতাম। কাজটাও সহজ হতো। কিন্তু আমার মনে হল আমি জামাইকায় রয়েছি। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্যালিপসো বাজনা দিয়ে সঙ্গীতটা বানালে কেমন হয়? তাই ছড়াগান থ্রি ব্লাইন্ড মাইসের সুরে তৈরি করেছিলাম ওই সিকোয়েন্স।

মন্টি নরমানের থিম মিউজিক নিয়ে পরে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন বন্ড ছবির অন্যান্য মিউজিক অ্যারেঞ্জাররা। মন্টি নরমান বলেছেন তারা মূল সঙ্গীতের কিছুটা ছোঁয়া রেখেছেন তাদের তৈরি সুরে বা গানে- কোনো না কোনো ভাবে। ‘আমার মনে হয়েছে ওটা একধরনের সম্মান- আমার তৈরি সুরটারই স্বীকৃতি। জেমস বন্ড নিয়ে ছবি হয়েছে ২৪টি- অন্তত ছয়জন ভিন্ন তারকা বন্ডের চরিত্রে অভিনয় করেছেন- ১৫ জন ভিন্ন পরিচালক বন্ড ছায়াছবি পরিচালনা করেছেন।

কিন্তু ৫০ বছরের উপর যেখানে কোনো পরিবর্তন হয়নি তা হল মন্টি নরমানের থিম মিউজিকে। রূপালি পর্দায় বন্ড মুভিতে কিংবদন্তী হয়ে গেছে সেই আদি ও অকৃত্রিম সুর। সম্ভবত অন্য কোনো ছায়াছবির থিম সঙ্গীত এত বিপুল জনপ্রিয়তা -এত পরিচিতি পায় নি। এভাবে কিংবদন্তী হয়ে ওঠে নি।