কারো বাবা কারো স্বামীর দল হবেনা বিপিআরসি
বিশেষ প্রতিনিধি : এবার মাঠে নামল রেজা নুরুলের নয়া রাজনৈতিক দল। দলের নাম ”বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ” । ইংরেজি’তে “Bangladesh People’s Rights Council”. সংক্ষেপে বিপিআরসি। কারো বাবা কারো স্বামীর দল হবেনা বিপিআরসি। এই নামে গঠিত নতুন দলটির আহ্বায়ক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ও গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া এবং সদস্য সচিব সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। বিপিআরসি ৯১ এর শেখ হাসিনাকে ফলো করবে কিন্তু প্রতারণার নির্বাচনে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিপিআরসি উদ্যোক্তা রেজা কিবরিয়া।
নতুন দল ঘোষণা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, বাংলাদেশে বড় দুটি দলের রাজনীতি পরিবারকেন্দ্রিক। কারও বাবার পরে মেয়ে, কারও স্বামীর পরে স্ত্রী। আমাদের দল কখনো রেজা কিবরিয়া ও নুরুলের দল হবে না। এখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক হবে। আমরা গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের কথা বলছি।
‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার’ শীর্ষক শ্লোগানকে সামনে রেখে ”বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ” নামে গঠিত নতুন দলটির আহ্বায়ক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ও গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া এবং সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। প্রাথমিকভাবে গঠিত ৮৩ সদেস্যর এই আহ্বায়ক কমিটির বাকি সবাই নূরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের বর্তমান ও সাবেক নেতা।
মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই দলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নতুন এই দলের নেতৃত্বে থাকা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর।
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি এসেছি একটা বিশ্বাস নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে। রেজা কিবরিয়া অক্সফোর্ডে পড়ুয়া, উচ্চশিক্ষিত। আর নুরুলরা স্বপ্ন দেখাতে জানে এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। এই তরুণদের সংগ্রামের ঐতিহ্য আছে। তোমরা সততার প্রতীক, তোমরাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারো। নতুন উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।
নতুন দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর বলেন, আমরা যখন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিচ্ছি তখন পৃথিবী দুইটি বড় সংকট মোকাবেলা করছে। আজকে সবার সম্মুখে দাঁড়িয়ে এই প্রত্যয় ঘোষণা করছি যে, আমরা নানান ক্ষেত্রে সৃষ্টি হওয়া বহুস্তর বিশিষ্ট বৈষম্য লাঘব করে বাংলাদেশকে মানবিক উন্নয়নের প্রগতিশীল ধারায় প্রতিষ্ঠা করব।
নতুন দলের নাম ঘোষণার জন্য বড় মিলনায়তন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নুরুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং বৈষম্যহীন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা কাঙ্খিত রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারিনি। আজকে এমন একটা শাসনকাল অতিক্রম করছি, যখন মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকারগুলো হারিয়ে গেছে। যে কারণে আজ সভা-সমাবেশ করার অধিকারও নেই। আজকের অনুষ্ঠান করার জন্য আমরা আবেদন করেও বড় মিলনায়তন পাইনি। আমরা এর নিন্দা জানাই।
গণতান্ত্রিক এই লড়াইয়ে জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে বড় করে দেখছেন গণঅধিকার পরিষদের নেতারা। এই লড়াইয়ের কর্মকৌশল কেমন হবে, তা নিয়েও কথা বলেছেন তারা। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে এখন যে প্রধানমন্ত্রী আছেন, তার শিক্ষা নেব। তিনি যেভাবে ১৯৯১ সালে কাজ করেছেন, আমরা সেভাবে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা করছি। যারা বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে রাজি আছেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব, তাদের সঙ্গে কাজ করব। এ ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকলে থাকতে পারে, তাতে আমাদের কিছু করার নেই।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে গণঅধিকার পরিষদ মাঠে নামবে কিনা- জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আন্দোলন করাকে আমি এতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। আসল কথা হলো, আমরা একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। জাতিসংঘের পরিচালিত একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা চাই। এটা ছাড়া নির্বাচনে নামার কোনো মানে হয় না। যারা আগে প্রতারণা করেছে দুবার (২০১৪ ও ২০১৮ সালে), তারা তৃতীয়বার যে প্রতারণা করবে না, আমি এটা ভরসা করি না। সুতরাং আমরা প্রতারকদের নির্বাচনে যাব না, এটা পরিষ্কার।
গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচনে কারও সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জোটবদ্ধ নিশ্চয়ই হব। তবে কার সঙ্গে জোট হবে, সেটা তখনকার পরিস্থিতির আলোকে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।আগামী নির্বাচন নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের পরিকল্পনা জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেন, এই মুহূর্তে পরিকল্পনা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া। কিন্তু পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বিষয়টা। তবে প্রথম কাজ হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা।
নিরপেক্ষ সরকার ফেরাতে না পারলে কী করবেন- এ প্রশ্নের জবাবে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, জনগণ সঙ্গে থাকলে আমরা নিশ্চয়ই আদায় করতে পারব। জনগণ আমাদের বড় শক্তি, এই শক্তির ওপর ভরসা করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছি।সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হক নুর গণঅধিকার পরিষদের ঘোষণাপত্র পড়ে শোনান। এরপর দলের চার দফা মূলনীতি (গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ) এবং ২১ দফা কর্মসূচি পড়েন যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান। সবশেষে আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করেন দলের নবনিযুক্ত আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া।