উত্তরায় অবৈধ ব্যাম্বো শুট বারে মদ খেয়েছিল ৫শিক্ষার্থী
বিশেষ প্রতিনিধি : উত্তরায় ভেজাল মদ ও অবৈধ ব্যাম্বো শুট পানশালায় মদ্যপানের কারণে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে মিলেছে ভুক্তভোগী তরুণীসহ ৫ বন্ধু গত ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর ওই রেস্টুরেন্টে যায়। ওই অবৈধ রেস্টুরেন্টটি উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্ট নামে পরিচিত।সেখানে গিয়ে তারা ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্ট এর সহযোগীতায় মদের পার্টির আয়োজন করে। পার্টির পর সেখানে থাকা ৫ জনের মধ্যে তিনজনই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই তরুণীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই তরুণীর বাবা মোহাম্মদপুর থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ওই তরুণীর ২ বন্ধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও তার সঙ্গে থেকে মদপান করা আরও এক বন্ধু রাজধানীর আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এরপরই বেরিয়ে আসে উত্তরার সেই রেস্টুরেন্টের আড়ালে অবৈধ মদ্য পানের ব্যবসা।
খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানায়, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টে ৫ শিক্ষার্থী অবৈধভাবে মদপান করেছিল। কিন্তু এই বিষয়টি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট থানায় জানাতে পারতো। কিন্তু তারা সেটি করেনি। এছাড়াও এই রেস্টুরেন্টে মদ্যপান ও মদ বিক্রির কোনো অনুমতি বা লাইসেন্স ছিল না। এ ব্যাপারে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস জাতিরকন্ঠ কে বলেন, উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টে সাধারণ খাবার বিক্রি করে। তবে সেখানে তাদের মদ্যপান বা মদ বিক্রি করার কোনো অনুমতি ছিল না।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীসহ তারা পাঁচ জন ওই রেস্টুরেন্টে অবৈধভাবে মদ খাচ্ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছু জানায়নি। যেহেতু এই রেস্টুরেন্টে মদ্যপানের অনুমতি নেই সেহেতু বিষয়টি পুলিশকে জানানো উচিত ছিল। রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমি ইতোমধ্যে ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টে গিয়ে তদন্ত করে এসেছি।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ অঞ্চল উত্তরের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. মেহেদী হাসান জাতিরকন্ঠ কে বলেন, উত্তরার ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্ট সাধারণ খাবার বিক্রি করে। তাদের কোনো বার নেই। মদ বিক্রি ও সেখানে মদ্যপানের জন্য তারা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকো কোনো অনুমতি বা লাইসেন্স নেয়নি।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক বলছেন তার শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। কিন্তু পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। ধর্ষণ এবং মদ্যপানের কারণে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।এর আগে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ ও মদ্যপানের কারণে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর দুই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে আমরা তথ্য নিয়ে পরবর্তীতে আপনাদের জানাব।
এদিকে এ ঘটনায় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা বলেছেন ধর্ষণের কারণে নয়, খাবারে বিষক্রিয়ার ফলেই ওই তরুণী শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে তিনি জাতিরকন্ঠ কে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, ওই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। রেজা বলেন, তার শরীরে জোরপূর্বক ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। খাবারে বিষক্রিয়ার ফলে তার মৃত্যু হতে পারে। এছাড়াও আমরা আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। রিপোর্ট এলে আমরা বিস্তারিত বলতে পারব।
এদিকে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় দুই বন্ধুর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) বন্ধুদের সঙ্গে ওই ছাত্রী উত্তরার একটি রেস্তোরাঁয় যান। সেখানে অসুস্থবোধ করলে তাকে বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় শনিবার (৩০ জানুয়ারি) তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (৩১ জানুয়ারি) তার মৃত্যু হয়।