• বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল ২০২৪

৪২০ জাবেদ যেভাবে ক্রোড়পতি!


প্রকাশিত: ৫:১৫ পিএম, ৩ নভেম্বর ১৭ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪৪ বার

এস রহমান  :  প্রতারণাই ওদের পেশা। এটা করেই ওরা এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক। রয়েছে বাড়ি, মার্কেটসহ DSC03865কিছু প্লটও। এই চক্রের খলনায়ক জাবেদ। হাজার প্রতারণার খলনায়ক এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি সার্ভিসের এই কর্মচারী প্রতারক জাবেদ এখন সিআইডির কব্জায়। সেসহ তার দুই সহযোগী বিকাশ এজেন্ট প্রতারক মোঃ ইউসুফ ও মোঃ মেহেদী হাসান রিমান্ডে প্রতারণার নানা তথ্য দিয়েছেন। তাদের তত্যে মিলেছে ৪২০ জাবেদ এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।

জানা গেছে, হাজার প্রতারণার খলনায়ক মোঃ জাবেদ ভোর সকালেই হযরত শাহজালাল অন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উপস্থিত হয়ে বিদেশ গামী যাত্রী এবং তাদের নিকট আত্মীয়দের তথ্য সংগ্রহের সচেষ্ট থাকতো। বিদেশগামী যাত্রী যখন এমবারকেশন (ইডি কার্ড) ফরম পূরণ করতো তখন কিংবা তাকে ফরম ফিলাপে সহায়তা করার অজুহাতে তার নাম, ঠিাকানা, ফোন নাম্বার ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতো।আবার বিদেশ গামী যাত্রীর কাছে ফোন দিয়ে যাত্রী যে এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে গমন করছে তার কর্মচারী সেজে কমিশন দেয়ার কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করতো।

এছাড়াও বিদেশগামী যাত্রীর আত্মীয়দের সাথে আলাপ চারিতার মাধ্যমেও তথ্য সংগ্রহ  করতো। তথ্য সংগ্রহ হয়ে গেলে সকাল ১১ ঘটিকার দিকে সে চলে যেত গাজীপুর তার পরিচিত বিকাশ এজেন্ট এর কাছে। তার পরিচিত এজেন্ট ৫০০ টাকার বিনিময়ে সদ্য রেজিস্ট্রেশন করা সিম এর বিকাশ একাউন্ট খুলে দিতো এবং প্রতারণা কাজে সে এই সকল বিকাশ নাম্বার গুলো ব্যবহার করতো।

আমরা জানি যে, বিদেশগামী যাত্রী যখন বিমানে উঠে তখন তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকে। প্রতারক জাবেদ এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সংগ্রহ করা আত্মীয় স্বজনের মোবাইল নাম্বারে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা ফোন নাম্বার থেকে ফোন করে। কখনো যাত্রী সেজে কান্না কাটি করে বলে যে আমার মোবাইল,পাসপোর্ট বা বিমানের টিকেট হারানো গেছে, জরুরী ভিত্তিতে টাকা পাঠাতে না পারলে বিদেশে যাওয়া হবে না।

আবার কখনো নিজেকে এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ পরিচয় দিয়ে,কখনো এয়ার লাইন্সের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে যাত্রির বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে,যাত্রা বাতিলের  ভয় দেখিয়ে  বিকাশের মাধ্যমে টাকা চাইতো।

এমন পরিস্থিতিতে নিকট আত্মীয়রা শেষ সময়ে বিদেশ গমন ব্যাহত যাতে না হয় সেই কারনে প্রতারক চক্রের কথা মতো টাকা জরুরী ভিত্তিতে প্রেরণে সম্মত হয়ে প্রতারক কর্তৃক প্রদেয় বিকাশ নাম্বারে প্রতারকের চাহিদা মোতাবেক টাকা পরিশোধ করে দিতো। বিদেশ গামী যাত্রী তার গন্তব্য স্থলে পৌছে গিয়ে আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ হলে তারা জানতে পারতো এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি  এবং তারা বুঝতে পারতো, তারা অভিনব এক প্রতারণার শিকার হয়েছে।

এভাবে বিমানবন্দর এলাকায় হাজারের উপর বিদেশগামী যাত্রীদের আত্মীয় স্বজনের নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অভিনব এই প্রতারক। গত ১৭/০৩/২০১৭খ্রিঃ তারিখে মোহাম্মদ আবুল বাশার তাহার ছেলেকে বিমান বন্দরে দিয়ে বেড়িয়ে আসার সময় প্রতারক মোঃ জাবেদ এর সাথে বিমান বন্দর পার্কীং এলাকায় কথা হয়। এসময় প্রতারক মোঃ জাবেদ কৌশলে তার ছেলের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে ও তার মোবাইল নাম্বারটি নিয়ে নেয় এবং উল্লেখিত উপায়ে তার ছেলের বিদেশ গমন বন্ধ হয়ে যাবে বলে ৩৬,০০০/- হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়।

পরবর্তীতে তার ছেলে বাহরাইনে পৌছালে তার বিদেশ গমন নিয়ে কোন সমস্যা হয়েছিল কিনা তা জানতে চাইলে সে জানায় এরকম কিছুই ঘটে নাই। তখন তিনি প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে ভাগীনা মাহমুদুল হোসেন (২৪) এর মাধ্যমে উক্ত বিষয়ে ১৮/০৭/২০১৭খ্রিঃ তারিখে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা রুজু করেন।

মামলাটির তদন্তভার সিআইডি গ্রহন করার পর, বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বিপিএম,পিপিএম(বার) এর নির্দেশনায় অতিঃ বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ মিনহাজুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ নাজিম উদ্দিন আল আজাদ ও সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেন এর সমন্বয়ে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি চৌকষ দল গত ১ নভেম্বর এয়ারপোর্ট এপিবিএন ইন্টিলিজেন্স এর সহায়তায় এজাহারভুক্ত প্রতারক মোঃ জাবেদসহ তিন জনকে গাজীপুর হতে গ্রেফতার করে।

সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার                                                                                                              শারমিন জাহান জাতিরকন্ঠকে জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়,  প্রতারক মোঃ জাবেদ এয়ারপোর্ট এর কনকর্স হলের ইজারাদারের ভাড়া করা সিকিউরিটি এমকে ট্রেডার্স এর সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করতো এবং তাকে উক্ত প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত আইডি কার্ড এবং অর্ধ শতাধিক মোবাইল সিমসহ গ্রেফতার করা হয়। মামলাটি সিআইডি কর্তৃক তদন্তাধীন আছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোঃ জাবেদ (প্রতারক),মোঃ ইউসুফ (বিকাশ এজেন্ট), মোঃ মেহেদী হাসান।

Save