• বৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ ২০২৪

সোনা চোরাচালানে বিমানের রাঘববোয়ালরা পাকরাও


প্রকাশিত: ৩:২৫ এএম, ২০ নভেম্বর ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬৭ বার

 

bbbbbbbbbbbbbb  palasগত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত, অর্থাৎ

 

 

 

২০ মাসে শুল্ক বিভাগ ও শুল্ক গোয়েন্দারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক হাজার ১৮ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে।gold_44555_44592

 

 

 

 

 

প্রিয়া রহমান.ঢাকা:
অবশেষে বহুল বিতর্কিত পলাশসহ বিমানের কয়েক রাঘববোয়াল সোনা চোরাচালানি ধরা পড়েছে। গোয়েন্দারা জানান, এরা সোনা পাচারে সহায়তা করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনেছেন। এদের মধ্যে পলাশ বিমান চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ সুবিধা নিত।বিমান চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে বিশেষ ফায়দা লোটা বিমানের সিকিউরিটি বিভাগের এক কর্মকর্তাকেও গোয়েন্দারা নজরদারি করছেন।

যিনি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার নাম ভাঙ্গিয়ে ইতিপূর্বে ফায়দা লোটার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। সোনা চোরাচালানে বিমানের নিরাপত্তা শাখার বেশ কয়েক জড়িত রয়েছে।এদের অন্যতম রাঘববোয়াল ওই কর্মকর্তা-যিনি বিমান চেয়ারম্যানের কাছের লোক বলে নিজেকে জাহির করে অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন।

সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে মাহমুদুল হক ওরফে পলাশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের তিনজন পদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন।

Palash-sm20120725165120তাঁরা হলেন চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, ফ্লাইট সার্ভিস শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেন ও ব্যবস্থাপক (শিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন। এঁদের সঙ্গে হারুন অর রশিদ নামে একজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার বিমানবন্দর, উত্তরা ও বসুন্ধরা এলাকা থেকে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ডিবি জানায়। তাঁদের চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এসব বিমানকর্মীর বিরুদ্ধে গতকাল পর্যন্ত কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দিক হোসেন জনসংযোগ শাখার মাধ্যমে  জানান, তাঁরা এ নিয়ে যোগাযোগ রাখছেন। পুলিশি ব্যবস্থা শেষ হলে বিমান বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে।

গত ছয় বছরে বিমানমন্ত্রী তিনবার রদবদল হয়েছে। বিমানের পরিচালনা পর্ষদ ও এমডি পদেও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে জামালউদ্দিনই বহাল আছেন।

বিমান সূত্র জানায়, কোন পাইলট কবে কোন ফ্লাইটে দায়িত্ব পালন করবেন, তা ঠিক করতেন ক্যাপ্টেন শহীদ। আর ডিজিএম এমদাদ ও ব্যবস্থাপক তোজাম্মেল কেবিন ক্রুদের দায়িত্ব বণ্টন করতেন। অভিযোগ রয়েছে, চোরাচালান চক্রের পছন্দের কর্মীরা যাতে নির্দিষ্ট ফ্লাইটে দায়িত্ব পান, তা এসব কর্মকর্তা নিশ্চিত করতেন। আর এঁদের পদে থাকাটা নির্বিঘ্ন করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা ছিল পলাশের।

সূত্র জানায়, কোনো পদে না থেকেও পলাশ নিয়মিত বিমান কার্যালয়ে যেতেন।
এ বিষয়ে জামাল উদ্দিন বলেন,  দোহাই দিয়ে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। এ ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে।
পুলিশের সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ নিজেকে বিমানের ঠিকাদার ও বিমানের চেয়ারম্যানের ‘ধর্মপুত্র’ পরিচয় দেন। তিনি দাবি করেন, তিনি জামাল উদ্দিনের ছেলের বন্ধু।
বিমানের চেয়ারম্যান  বলেন, ‘পলাশ কস্মিনকালেও আমার ছেলের বন্ধু হতে পারে না। সে কুমিল্লার ছেলে। আমার বাড়িও কুমিল্লা। এই সুবাদে সে আমার কাছে বিমানে ঠিকাদারি কাজ পেতে সহায়তা চায়। আমি বলেছি, সিস্টেমের বাইরে আমি সহায়তা করতে পারি না। তিনি বলেন, পলাশের স্ত্রী কেবিন ক্রু, সেই সুবাদে সে হয়তো এ ধরনের চক্রের হয়ে কোনো সুযোগ নিয়েছে।

ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, পলাশ বিমানবন্দর এলাকায় অতি প্রভাবশালী। তিনি সেখানকার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করেন।
এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিং করেন মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু মাজহারুল আবছারকে দুই কেজি ৬০০ গ্রাম সোনা, ছয়টি আইপ্যাডসহ গ্রেপ্তার করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীকালে আদালতে তাঁর দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের মধ্যে পলাশ পুরো চক্রটির নেতৃত্ব দিতেন। তিনি বলেন, এই পাঁচজন ছাড়াও সোনা পাচারে জড়িত বা সহায়তাকারী হিসেবে বিমানের আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে।
আদালত সূত্র জানায়, ১৭ নভেম্বর মাজহারুল আবছার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সোনা পাচারে জড়িত হিসেবে আরও ৫৬ জনের নাম বলেছেন। তাঁদের মধ্যে ৫১ জন বিমানের ও পাঁচজন বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন) কর্মী। তিনি আরও বলেন, সোনা পাচারকারী চক্রগুলো সিভিল এভিয়েশন, শুল্ক বিভাগ, বাংলাদেশ বিমানসহ অন্য বিমান সংস্থার একশ্রেণির কর্মীকে পাচারকাজে যুক্ত করেছে।শেখ নাজমুল আলম বলেন, জবানবন্দিতে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, এনবিআর সম্প্রতি তাঁর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে একটি পাচারের ঘটনায় জড়িত হিসেবে ১৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১০ জনই বিমানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী। তিনি বলেন, এসব তথ্য তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেবেন। তিনি মনে করেন, সঠিকভাবে তদন্ত হলে এঁদের ওপরে আর কারা আছেন, তা বেরিয়ে আসবে।

শুল্ক তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত, অর্থাৎ ২০ মাসে শুল্ক বিভাগ ও শুল্ক গোয়েন্দারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক হাজার ১৮ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে।

ঢাকা বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম জানান, গত জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোনা উদ্ধারের ঘটনায় ৯৫টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১৯ জন।