• শনিবার , ২০ এপ্রিল ২০২৪

সাবধান ঢাকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে চিকনগুনিয়া ভাইরাস!


প্রকাশিত: ১২:০৫ পিএম, ১৭ মে ১৭ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৯ বার

ড. শহিদুল্লাহ :  সাবধান ঢাকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে চিকনগুনিয়া ভাইরাস! এই ভাইরাস এডিস প্রজাতির Chikungunya_Woman.www.jatirkhantha.com.bd.2এডিস ইজিপ্টি। এডিস এলবোপিকটাস মশা থেকেই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস রোগের সংক্রমণ ঘটে। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসটি টোগা ভাইরাস গোত্রের ভাইরাস। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলা হয়ে থাকে বরে চিকিৎসকরা জাতিরকন্ঠকে জানান।  এই ভাইরাস সম্পর্কে না জানা থাকলে এই রোগে ওষুধ খেলেও জ্বর ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উঠে যায়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎিসকরা বলছেন, এই ভাইরাস জ্বরে একটি পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। কারণ, মশা খুব দ্রুতই একজন থেকে অন্যজনের দেহে এই রোগ নিয়ে যায়। তাই মশারি ব্যবহার করতে হবে, এমনকি দিনের বেলায়ও।
এ সম্পর্কে আইইডিসিআর বলছে, এ ধরনের মশা সাধারণত ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যার সময় কামড়ায়।Chikungunya_Woman.www.jatirkhantha.com.bd.1

ঢাকায় ইতিমধ্যে একাধিক ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। রক্তের নমুনা পর্যবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থা আইইডিসিআর- বলেছে, চিকুনগুনিয়া জ্বরাক্রান্ত হওয়ার ১১ দিন পরও অনেকের জ্বর সারেনা। এই জ্বর হওয়ার পর গিটে গিটে ব্যথায় অনেকে হাঁটতে পর্যন্ত পারেন না।

তাই এই জ্বর হওয়ার আগেই চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে সকলকে সতর্ক হতে বলেছেন চিকিৎসকরা। বলা হয়েছে, বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহরে দ্রুত ছড়াচ্ছে মশাবাহিত এই রোগ। রোগ তত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআর ভাইরাসঘটিত রোগটির বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসও এই মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং রোগের লক্ষণ প্রায় একই রকম বলে চিকিৎসকরা জানান।

চিকুনগুনিয়া প্রথম ধরা পড়ে ১৯৫২ সালে আফ্রিকায়, পরে বিশ্বের অন্য দেশেও তার বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ২০১১ সালে ঢাকার দোহার উপজেলায় এই রোগ দেখা গেলেও পরে বিচ্ছিন্ন দু-একটি রোগী ছাড়া এ রোগের বিস্তার আর বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যায়নি বলে আইডিসিআর জানায়।
Chikungunya_Woman.www.jatirkhantha.com.bd
বর্ষার পর পর যখন মশার উপদ্রব বাড়ে, তখন চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। এবার মৌসুমের শুরুতে অতিবর্ষণের মধ্যে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপও লক্ষ্য করছেন বলে জানান আইইডিসিআরের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর। তবে কী পরিমাণ রোগী আক্রান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তিনি দিতে পারেননি।

ডা. আলমগীর বলেন, পরীক্ষার জন্য সব নমুনা আমরা হাতে পাইনি। এমনকি জ্বর হওয়ার পর পাঁচ দিন পর যে সব নমুনা আমাদের কাছে এসেছে, আমরা তা পরীক্ষা করিনি। কারণ তাতে ফলস রিপোর্ট আসে।

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ অনেকটা ডেঙ্গুর মতোই। প্রথমে জ্বর আসে, এরপর হয় গায়ে ব্যথা। তবে চিকুনগুনিয়ায় ভীষণ ব্যথা হয়, অনেক সময় নড়াচড়াই করা যায় না। ব্যথা হয় সব অস্থিসন্ধিতে, বলেন ডা. আলমগীর। গিটে গিটে ব্যথার পাশাপাশি মাথা কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি, চামড়ায় লালচে দানা, বমি বমি ভাবও চিকনগুনিয়ার লক্ষণ।

চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে জ্বর হলে প্যারাসিটামল সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এ রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা নাই। সাধারণত রোগটি এমনি এমনিই সেরে যায়, তবে কখনও কখনও গিটের ব্যথা দীর্ঘদিন থাকতে পারে।

আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর। গিটের ব্যথার জন্য ঠাণ্ডা পানির সেক এবং হালকা ব্যয়ামও করা যেতে পারে। প্রাথমিক উপসর্গ ভালো হওয়ার পর যদি গিটের ব্যথা ভালো না হয় তবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিরোধকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আইইডিসিআর। এক্ষেত্রে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেওয়ার পাশাপাশি এই পতঙ্গের আবাসস্থল ধ্বংস করতে বলা হয়েছে।

বাসার আশেপাশে ফেলানো মাটির পাত্র, কলসী, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোলা ইত্যাদি যে সব স্থানে পানি জমতে পারে, সেখানে এডিস মশা প্রজনন করে। তাই এসব স্থানে যেন পানি জমতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে এবং নিয়মিত বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার করতে হবে।