• বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া-বহু যুবক সাগরে-থাইল্যান্ডে মানবেতর জীবন


প্রকাশিত: ১০:৩৪ পিএম, ২২ নভেম্বর ১৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮১ বার

Samudro-------------

 

প্রিয়া রহমান.ঢাকা:
সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন করতে গিয়ে বাংলাদেশের বহু যুবক সাগরে কিংবা থাইল্যান্ডে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকে সমুদ্রেই মারা যাচ্ছেন। নিখোঁজ হচ্ছেন শত শত। কেবল বাংলাদেশের দালালরাই নয়, আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রও এর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে একটি মামলাও করা হয়নি।

`শফিকুর ট্রলারে করে মালয়েশিয়া গেছে। কীভাবে গেল, কার মাধ্যমে গেল, আমরা কিছুই জানি না। হঠাৎ করে একদিন ফোন করে কান্নাকাটি করল। বলল, তাঁর ওপর ভয়াবহ অত্যাচার হচ্ছে। দুই লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। দালালরা একটা বিকাশ নম্বর পাঠালো। সেখানে টাকা দিলাম। কিন্তু তিন মাস ধরে স্বামীর খোঁজ নেই। বেঁচে আছে কি মরে গেছে, তা–ও জানি না।’

আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ থেকে আসা মোসাম্মৎ রহিমা এসব কথা বলেন। সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অভিবাসন–বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর (রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট)।

সিরাজগঞ্জ থেকে আজ সংবাদ সম্মেলনে এসে অঝোরে কাঁদছিলেন হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা। তাঁদের কারও সন্তান, কারও বাবা আবার কারও বা স্বামী নিখোঁজ। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের বেশির ভাগেরই গল্প রহিমার স্বামীর মতোই।

এসব মানুষ জানেন না, তাঁদের স্বজন আদৌ বেঁচে আছেন কি নেই। কথা বলতে গিয়ে তাই তাঁরা বারবার কাঁদছিলেন। তাঁদের সেই কান্না ছুঁয়ে যাচ্ছিল উপস্থিত সবাইকে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন করতে গিয়ে বাংলাদেশের বহু যুবক সাগরে কিংবা থাইল্যান্ডে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকে সমুদ্রেই মারা যাচ্ছেন। নিখোঁজ হচ্ছেন শত শত। কেবল বাংলাদেশের দালালরাই নয়, আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রও এর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে একটি মামলাও করা হয়নি। সরকারকে দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন তাঁরা।

রামরুর চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালিয়েছি। আজকে আপনাদের সামনে সেখানকার ভুক্তভোগী কিছু মানুষকে উপস্থাপন করলাম। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী সিরাজগঞ্জের সাতটি উপজেলা থেকে চার হাজারের অধিক তরুণ অবৈধভাবে মালয়েশিয়া গেছে। এর মধ্যে চার শতাধিক নিখোঁজ। এই যদি হয় একটি জেলার চিত্র, তবে পুরো দেশের চিত্র কতটা ভয়াবহ, আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি।’
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ শনিবার সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করে অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরু। ছবি: প্রথম আলোবেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের পরিচালক শিপা হাফিজ বলেন, ‘যেভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় দালালরা লোক পাঠাচ্ছে, সেটি সরাসরি পাচার। এভাবে আর কত মানুষ হারিয়ে গেলে সবার হুঁশ হবে? সিরাজগঞ্জের দালালদের বিরুদ্ধে কেন পুলিশ, সেখানকার প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? আর আইন যতই থাকুক, সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’

আইন ও শালিস কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান বলেন, ‘আজকে এখানে নয়-দশজন মানুষ তাদের দুর্দশরা কথা জানালেন। সারা দেশে এমন হাজারও ভুক্তভোগী মানুষ আছেন। আমাদের দ্রুত এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন রামরুর সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার, অভিবাসন–বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ওয়্যারবির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক, বেসরকারি আরেকটি সংস্থা অকুপের চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম, নারী অভিবাসী–বিষয়ক সংস্থা বমসার নির্বাহী পরিচালক শেখ রোমানা।