• শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সবকিছু একটি মুখোশের আড়ালে: ড.ইউনুস


প্রকাশিত: ৯:১৮ পিএম, ২৭ জানুয়ারী ১৮ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৪ বার

d-eunus-
ডেস্ক রিপোর্টার :  আমরা যেটাকে গনতন্ত্র বলি সেটাতো গনতন্ত্র নয়। সমাজের কতিপয় লোক শুধু সকল সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করছে তা নয়, তারা নিয়ন্ত্রন করছে নির্বাচন, রাজনীতি এমনকি মিডিয়াও। আসলে সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে। গত ২৬শে জানুয়ারি শুক্রবার আউটলুক ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক স্বাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি তার নতুন বই “দ্য থ্রি জিরো” নিয়ে কথা বলতে হাজির হন ভারতের জয়পুর সাহিত্য উৎসবে।

তিনি বলেন, “আসলে সবকিছু একটি মুখোশের আড়ালে চলে যাচ্ছে। আমাদের নির্বাচন হচ্ছে, আমরা নিজেদের ইচ্ছামত প্রার্থী বাছাই করছি। অথচ কোনকিছুর নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই।”সারাবিশ্বের ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে তিনি টাইম বোমার সাথে তুলনা করে বলেন এই অসাম্য ও বৈষম্য প্রতি মিনিটে, প্রতি সেকেন্ডে বাড়ছে। ফলে অসাম্য প্রতিদিন নতুন নতুন চূড়া জয় করছে। তবে একদিন এই টাইম বোমা বিস্ফোরিত হবে বলে বিশ্বাস করেন সামাজিক ব্যবসার ধারণার উদ্গাতা ড. ইউনুস।

তিনি মনে করেন, পুজিবাদী ব্যবস্থা আসলে একটি মেশিনের মতো, যার কাজই হচ্ছে সম্পদ গিলে নেওয়া। আর তার সাথে আছে মানুষের ভোগবাদিতা। সম্পদ কামানোই যেন আজ মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাড়িয়েছে এবং মানুষ তা অন্ধের মত করছে। এর সমাধান কি হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনুস বলেন বর্তমান অর্থব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন দরকার। আর এই পরিবর্তন এত সহজ না যে সরকার দুটি আইন করে দিল আর সব বদলে গেল। আর মানুষের ভোগবাদিতা কোন স্বভাবজাত ব্যাপার না, বরং মানুষ আসলে পরার্থপরতা আর স্বার্থপরতার এক অভূতপুর্ব মিশ্রণ বলেই তিনি বিশ্বাস করেন।

ড. ইউনুসের উদ্যোগে প্রচারিত ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে নানা সমালোচনার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমি যখন ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি শুরু করেছিলাম, তখন অনেকেই বলেছিল এতে কাজ হবে না। কিন্তু আমরা সেটি করে দেখিয়েছি। এটি এখন বাস্তবতা। এটি এখন সারাবিশ্বে আদৃত, ধনী দেশ থেকে নিম্ন আয়ের দেশ সব জায়গায়। এবং আমি মনে করি এভাবেই আমাদের নতুন ব্যবস্থা বিশ্বসমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের সময় তো অর্ধেক শেষ। আমাদের তাই ভাবতে হবে আগামী প্রজন্মের কথা।

তিনি প্রযুক্তির নানা দিক নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে আইন করা জরুরি বলে মনে করেন। তিনি বলেন, যেসকল প্রযুক্তি মানবজাতির জন্যে ক্ষতিকর হতে পারে সেসব নিয়ন্ত্রণের গাইডলাইন জরুরি। এমনকি এই কাজে জাতিসংঘকেও এগিয়ে আসার আহবান জানান ড. ইউনুস।তিনি পরিবেশে কার্বন নি:সরণের মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যেকোন মুল্যে কার্বন নির্গমন যেন দুইভাগের উপরে না উঠে তার জন্যে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান তিনি।

বর্তমান চাকরিব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি চাকরিকে ভাড়া খাটা শ্রমিকের সাথে তুলনা করেছেন। যার মূল কথাই হল নিজের শ্রম দিয়ে তার মালিককে ধনী থেকে আরো ধনী করে তোলা। তিনি এই অবস্থা পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে সবাইকে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি মনে করেন, আমরা সবাই আসলে উদ্যোক্তা মন নিয়েই জন্মাই। অর্থনীতির নানান তত্ত্ব আমাদের অন্যের ভাড়াটে শ্রমিক করে তৈরি করে নেয়। তিনি বলেন, আমাদের সামনে এখন দুটি পছন্দ হাজির আছে। হয় আপনি কিছু টাকার জন্যে অন্যের হয়ে কাজ করতে পারেন, অন্যকে বিত্তশালী করে তুলতে দিনরাত খাটুনি করতে পারেন। অথবা নিজেই কিছু শুরু করতে পারেন। তাহলেই হয়ত আর কিছুলোকের হাতে এভাবে সম্পদ পূঞ্জীভূত হতে পারবে না।