• শুক্রবার , ২৯ মার্চ ২০২৪

‘শৈবাল বাঁচাও ওরিয়ন হঠাও’


প্রকাশিত: ৯:৫১ পিএম, ২৩ জানুয়ারী ১৮ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৮ বার

কক্সবাজার থেকে কামাল হোসেন  : ‘শৈবাল বাঁচাও ওরিয়ন হঠাও’ নিয়ে তুলকালাম চলছে কক্সবাজারে। শৈবাল হোটেলসহ কক্সবাজারের ১৩৫ একর জমি ওরিয়ন গ্রুপের Hotel shaibalকাছে হস্তান্তর ইস্যুতে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে পর্যটনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সভায় হট্টগোল হয়েছে আজ মঙ্গলবার দুপুরে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় ‘সভা চলাকালে’ই এই হট্টগোল হয়।ওই সময় উপস্থিত ছিলেন সভার প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল।

এদিকে ১৩৫ একর জমি লিজ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে ১ ফেব্রুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল ঘোষণা করেছে ২২টি সংগঠন। ওই দিনই এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে কক্সবাজারে।জেলা প্রশাসক অফিস সূত্র জাতিরকন্ঠকে জানায়, আলোচনার সভার শেষ মুহূর্তে সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর, কামাল উদ্দীন রহমান পিয়ারুসহ ১০/১৫ জন হঠাৎ স্লোগান দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উঠেন। এ সময় তারা শৈবাল রক্ষা ও ‘বিতর্কিত’ ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।

এক পর্যায়ে তারা সভা চলা অবস্থায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ঢুকে পড়েন। তারা ভেতরে গিয়ে মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে পর্যটনমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেন। এরপর তারা শৈবাল রক্ষা ও ওরিয়ন গ্রুপ নিয়ে মন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সেখানেও তারা স্লোগান দেন। এতে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

saibal---এ সময় মন্ত্রী তাদের শান্ত হতে বলেন এবং তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তারপরও উত্তেজিত থাকে তারা। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক উঠে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।

১ ফেব্রুয়ারি হরতাল
অপরদিকে, কক্সবাজারে পর্যটন করপোরেশনের মোটেল শৈবালের মূল মোটেলসহ ১৩৫ একর জমি লিজ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে ১ ফেব্রুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল ঘোষণা করেছে কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলন ও কক্সবাজার নাগরিক সমাজসহ স্থানীয় ২২টি সংগঠন। মঙ্গলবার কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের নেতা ও সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী এই ঘোষণা দেন। কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের নেতা মফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মফিজুর রহমান জানান, গোপনে ১৩৫ একর জমিসহ ঐহিত্যবাহী শৈবাল লিজের প্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর তা প্রকাশ হলো। কিন্তু কক্সবাজারবাসী ও পর্যটনের স্বার্থে এই লিজ প্রক্রিয়া অত্যন্ত ক্ষতি করবে। এই লিজ প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবিতে হরতাল ঘোষণা করা হয়েছে। হরতালের দু’দিন আগে জনসমর্থন সৃষ্টির লক্ষ্যে কক্সবাজারে পথসভা অনুষ্ঠিত হবে।

কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের নেতা ও সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কক্সবাজার অনেক সম্পদ সংকুচিত হয়েছে। সর্বশেষ শৈবালের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিও বেহাত হতে চলেছে। এটা কক্সবাজারবাসীর অমূল্য সম্পদ। পর্যটন করপোরেশন বিতর্কিত ওরিয়ন গ্রুপের সাথে চুক্তি করতে তা কখনো বাস্তবায়ন হতে দেবো আমরা। এই জন্য আমরা কক্সবাজারবাসীকে সাথে আন্দোলন করবো।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেছেন, শৈবাল হোটেল কক্সবাজারের সাধারণ মানুষের সম্পদ। যাদের পাঁচতারকা মানের হোটেলে গিয়ে বিনোদন করার সামর্থ তাদের একমাত্র ঠিকানা শৈবাল। শৈবালের মনোরম পরিবেশ, স্বচ্ছ জলের দিঘী, ডাহুকের সুমধুর ডাক আমরা সাধারণ কক্সবাজারবাসী আর কোথাও পাবো না। এই শৈবাল রক্ষায় প্রয়োজন হলে জীবন দেবো। তবুও আমরা শৈবালকে ওরিয়ন গ্রুপের হাতে তুলে দিতে দেবো না।মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে শৈবাল হোটেল ইস্যুতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেছেন, হোটেলে ভরে গেছে কক্সবাজার শহর। এই শহর এখন ইট-কংক্রিটের শহরে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজারের সব কিছু এখন এই শহরকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এই কারণে যানজটে চলাফেরাই করা যাচ্ছে না। তাই আমরা আর কোনো বড় হোটেল এই শহরে চাই না। আর কোনো বড় হোটেল শহরে হতে দেয়া যাবে না। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে শৈবাল হোটেল ইস্যুতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই দাবি করেন।

এ সময় মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার শহর ছোট্ট একটি শহর। অথচ এই ছোট্ট শহরে সাড়ে চার’শ হোটেল করা হয়েছে। এসব হোটেলের কারণে পুরো শহর এক কংক্রিটের শহরে পরিণত হয়েছে। এতে আমাদের স্বাভাবিক চলাফেরা দায় হয়ে পড়েছে। যানজটে আটকা পড়েছে শহরবাসী। কোথাও একটু স্বস্তির নি:শ্বাস নেই।