• শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রোজা-আল্লাহর বান্দাকে খাঁটি মুসলমান বানিয়ে দেয় যেভাবে-


প্রকাশিত: ১:৫১ পিএম, ২০ জুন ১৬ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২১৯ বার

 

সিরাজ উদ্দিন আহমাদ : রোজা হল ধৈর্য ও সততার প্রতীক। আল্লাহর বান্দা যখন রোজা রাখে তখন সে 11সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু খায় না, পান করে না। তার যতই ক্ষুধা লাগুক, পিপাসায় কাতর হোক- সে ধৈর্য ধারণ করে। সে গোপনেও কিছু পানাহার করে না। কারণ একজন ঈমানদার বান্দা যখন রোজা রাখে, তখন সে আল্লাহকে হাজির-নাজির মনে করে রোজা রাখে। রোজাদার মনে করে আমি যা কিছু করছি তার সবকিছুই আল্লাহ দেখছেন। আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর রোজা ফরজ করার অনেক তাৎপর্য রয়েছে। রোজার মাধ্যমে যাতে বান্দা ধৈর্যের অনুশীলন করে খাঁটি বান্দায় পরিণত হতে পারে সেজন্য আল্লাহ এ রোজাকে ফরজ করেছেন।

‘রমজান’ শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ। ‘রমজান’ শব্দটি ‘রমজ’ ধাতু থেকে উদগত। এর অর্থ হল, কোনো বস্তুকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে তা থেকে দোষণীয় জিনিস পৃথক করে খাঁটি বস্তুতে পরিণত করা। যেমন মূল্যবান ধাতু স্বর্ণ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে তা থেকে ক্লেদ বের করে খাঁটি সোনায় পরিণত করা হয়।

এভাবে একজন রোজাদার রোজা পালনের মাধ্যমে ক্ষুধা, তৃষ্ণা মোকাবেলা করে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে। রোজা এমন একটি ইবাদত, যা পালন করতে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ইত্যাদি সবকিছু অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া একজন রোজাদার আল্লাহর সিফাত অর্জনের অনুশীলন করেন। যেমন- আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার আহারের প্রয়োজন হয় না, ঘুমের প্রয়োজন হয় না, তিনি অন্যান্য প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে পূতপবিত্র ও অমুখাপেক্ষী। রোজাদার নেককার বান্দা শেষ রাতের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আহার গ্রহণ না করে এবং রাতের একটি বড় অংশে ঘুম সংক্ষিপ্ত করে তারাবিহ ও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কোরআন তিলওয়াত করে দোয়া ইস্তেগফার করে কাটিয়ে দেন। এসব সৎ কর্মই হল আল্লাহর সিফাত অর্জনের অনুশীলন।

সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূল (সা.) শাবানের শেষদিনে আমাদের উদ্দেশে নসিহতপূর্বক ইরশাদ করেন, হে মানবমণ্ডলী, একটি মহান মাস, একটি কল্যাণবহ মাস তোমাদের কাছে সমাগত, এটি এমন এক মাস যাতে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ জাল্লাশানুহু এই মাসের (দিনে) রোজা ফরজ করেছেন এবং (রাতে) নামাজ আদায় করাকে পুণ্যের কাজ বলে নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি এই মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করবে সে ওই ব্যক্তির সমমর্যাদার হবে যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করে। এটি ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্য এমন এক গুণ যার প্রতিদান হল জান্নাত। এটি পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটি সেই মাস যাতে মুমিনের রিজক বাড়িয়ে দেয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সেটি তার গুনাহসমূহের জন্য ক্ষমাস্বরূপ হবে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। অবশেষে তাকে রোজাদার ব্যক্তির সমান সাওয়াব দান করা হবে; কিন্তু রোজাদারের সাওয়াব থেকে বিন্দুমাত্রও কম করা হবে না।

রাবী বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ তো এমন সামর্থ্য রাখে না, যা দিয়ে সে রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা এই সাওয়াব ওই ব্যক্তিকেও দান করবেন যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে এক চুমুক দুধ বা একটি খেজুর দিয়ে অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তির সঙ্গে খানা খাওয়াবে, আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে পানি পান করাবেন। ফলে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে কখনও তৃষ্ণার্ত হবে না। এটি এমন এক মাস যার প্রথমাংশ রহমত, দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাত বা ক্ষমা এবং শেষাংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির। যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের অধীনস্থদের কর্মভার হালকা করে দেবে, আল্লাহতায়ালা তাকে মাফ করে দেবেন এবং পরিশেষে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান করবেন (বায়হাকি)। লেখক : অধ্যক্ষ, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা