• মঙ্গলবার , ১৬ এপ্রিল ২০২৪

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মালিকানা চায় ফারমার্সের


প্রকাশিত: ২:৫৮ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৮ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৭ বার

বিশেষ প্রতিনিধি :  মূলধন দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মালিকানা চায় ফারমার্স ব্যাংকের।  ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগাতে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও ffffএকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ বৈঠকে ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে ব্যাংকটির মালিকানা দাবি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এছাড়া ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদেও নিজেদের জোরালো উপস্থিতির নিশ্চয়তা চায় তারা। তবে ফারমার্স ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে অংশ গ্রহণকারী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অনিয়ম-দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত ফারমার্স ব্যাংককে টেনে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে মূলধন জোগানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এক্ষেত্রে সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক সমহারে মূলধন জোগান দেবে। নগদ টাকা কিছুটা কম থাকায় রূপালী ব্যাংক ও আইসিবি ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান নাও দিতে পারে।

ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইসিবির চেয়ারম্যান ও এমডিরা অংশগ্রহণ করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ইউনুসুর রহমানও এ বৈঠকে ছিলেন। চার ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকটি ছিল পুরোপুরি রুদ্ধদ্বার। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ভবনে কোনো সংবাদকর্মীকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। অন্যদিন পাস নিয়ে ভবনটিতে সংবাদকর্মীরা প্রবেশ করতে পারলেও গতকাল কোনো পাসও ইস্যু করা হয়নি। ফলে বিপুলসংখ্যক সংবাদকর্মীকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটে ভিড় করতে দেখা যায়।

মূলত ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার লক্ষ্যেই গতকালের বৈঠকটি আয়োজন করা হয় বলে বৈঠক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এজন্য আলোচনার বিষয়ও ফারমার্স ব্যাংক-কেন্দ্রিক ছিল। বৈঠকে সবক’টি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডি ফারমার্স ব্যাংক ইস্যুতে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। সবারই বক্তব্য ছিল, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে দুর্যোগে থাকা ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দিতে তারা রাজি আছে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই মূলধন অনুপাতে ব্যাংকটির মালিকানা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে দিতে হবে। ফারমার্সের পরিচালনা পর্ষদে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে তবেই ব্যাংকটিকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলা সম্ভব হবে।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখ্ত জাতিরকন্ঠকে বলেন, ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রূপরেখা তৈরি করবে। সেটি নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা হবে। তবে মূলধন অনুপাতে আমাদেরকে মালিকানার অংশ দিতে হবে। ব্যাংকটির পর্ষদে আমাদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে। বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মালিক সরকার। সরকার চাইলে আমরা টাকা দিতে বাধ্য। সিদ্ধান্ত হলে সবগুলো প্রতিষ্ঠান মিলে সমহারে মূলধন সরবরাহ করা হবে। একটি সূত্র জানিয়েছে, রূপালী ব্যাংক ও আইসিবি এই মুহূর্তে ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দিতে আগ্রহী নয়। বিপর্যস্ত ব্যাংকটিতে মূলধন জোগান দেয়ার চেয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকে বেশি লাভজনক মনে করেন আইসিবির নীতিনির্ধারকরা।

এ বিষয়ে আইসিবির গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা জানান, ফারমার্স ব্যাংকে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাদের হাতে নেই। ক্রয়কৃত শেয়ার বিক্রি করে সে অর্থ ব্যাংকটির মূলধন হিসেবে জোগান দিতে হবে। এতে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টি এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে এডি রেশিও (ঋণ ও আমানতের অনুপাত) সবচেয়ে বেশি রূপালী ব্যাংকের। গত বছর ব্যাংকটির বিনিয়োগ ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকটি ফারমার্স ব্যাংকে বড় অংকের মূলধন জোগান দিতে আগ্রহী নয়। যদিও রূপালী ব্যাংকের এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেছেন, কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে তা পুরো ব্যাংকিং খাতেরই সমস্যা। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ওপর মানুষের আস্থা কমে যাবে। এজন্য ফারমার্স ব্যাংককে মূলধন জোগান দিয়ে টেনে তুলতে হবে। তিনি বলেন, গতকালের বৈঠকে ব্যাংকটিতে মূলধন জোগান দেয়ার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামনে আরো একাধিক বৈঠক হবে।

তবে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য একটি ব্যাংকের এমডি জানান, রূপালী ব্যাংক ও আইসিবি ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার বিপক্ষে। এজন্য শেষ পর্যন্ত সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংককেই টাকা দিতে হবে। তবে মূলধন দিলে ফারমার্স ব্যাংকের মালিকানা আমাদের হাতে থাকতে হবে। বিষয়টি বৈঠকে গভর্নরের কাছে আমরা তুলে ধরেছি।