• শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল ২০২৪

মুজাহিদদের হাজারবার ফাঁসি দিলেও যোগ্য শাস্তি হত কিনা আমার সন্দেহ আছে-নুজহত চৌধুরী


প্রকাশিত: ৪:৪০ পিএম, ১৭ জুন ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৪৩ বার

dr nujhat-www.jatirkhantha.com.bdআসমা খন্দকার.ঢাকা:  স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর আমরা ন্যায় বিচার পেলাম : নুজহত চৌধুরী ।স্বাধীনতার মাত্র দু’দিন আগে দেশের বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। আর এই বাহিনীর প্রধান ছিলেন আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। এই বাহিনীর হাতে নিহত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক ও চোখের ডাক্তার আবদুল আলিম চৌধুরী।
মঙ্গলবার আপিল বিভাগের রায়ের পর বিবিসির সাথে কথা বলেন আবদুল আলিমের চৌধুরীর মেয়ে নুজহত চৌধরী। বিবিসির সাথে সাক্ষাতকারে নুজহত চৌধুরী মুজাহিদের রায় সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরে হল :abdul alim dother Nujhat c-www.jatirkhantha.com.bd
বিবিসি : এ রায়ের মধ্য দিয়ে তারা কী ন্যায় বিচার পেয়েছেন ?

নুজহত চৌধুরী : আমরা মনে করছি বিশেষ করে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর আমরা ন্যায় বিচার পেলাম। কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের জন্য এই প্রথম একটি রায় যেটা আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিচারিক কার্যক্রমের জায়গা, সেখান থেকে রায়টি বহাল রাখা হলো। এবং এটা ‘আসলেই বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড’র জন্য ন্যায় বিচার হচ্ছে এই কারণে যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড- শুধুমাত্র আমাদের দেশের অভ্যুদয়ের বিরুদ্ধে একটি অন্যায় ছিল তা নয়, খেয়াল করতে হবে বুদ্ধিজীবীদের একটি দল যুদ্ধের শেষ সময়ে তালিকা করে ধরে ধরে মারা হয়েছে। কারণ আমরা যাতে ভবিষ্যতে উঠে দাঁড়াতে না পারি। সেই ভবিষ্যতকে ভেঙে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত। সুতরাং বাংলাদেশের ভবিষ্যত যারা গুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল আমরা আজকে তাদের শাস্তি দিতে সক্ষম হয়েছি এটাই বড় পাওয়া।

বিবিসি : ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরে আপনার বাবাকে যে হত্যা করা হয় ফরিদপুরে নিয়ে গিয়ে, আপনি তখন কত বড় ছিলেন?

নুজহত চৌধুরী : আমার তখন বয়স ছিল ২ বছর।

বিবিসি : তখন আপনি খুব ছোট ছিলেন তাই আপনি তখনকার ঘটনা বলতে পারবেন না। তবে আপনার মায়ের কাছ থেকে কিংবা ঘটনা যারা দেখেছে তারা কি বলেছে এবং আপনি কি শুনেছেন?

নুজহত চৌধুরী : বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে তার মানে ১৬ তারিখ ভোরে। যখন স্বাধীনতার সূর্যটি উঠছিল তখন তারা আমার বাবাকে ফরিদপুরের রায়েরবাজারে নিয়ে গিয়ে ব্রাশফায়ার দিয়ে মেরে ফেলে এবং বেয়নেট চার্জ করে। তবে তার আগে আমরা শুনেছি মোহম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং মিলিশিয়া ড্রেস পড়া কিছু বাঙালি ছেলে এরা ছিল আলবদর। তারা আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যায়, তখন আমর বাবা বলছিলেন আমাকে কোথায় যেতে হবে। তখন ছেলেগুলো বলে, গেলেই জানতে পারবেন। তখন বাবা বলছিলেন আমি একটু ড্রেস পরিবর্তন করে আসছি। তারা বলল তার আর প্রয়োজন হবে না। যাওয়ার পথে মওলানা মান্নান বাবার আশ্রিত ছিল এবং মান্নানের কাছেই ওই ছেলেগুলো ঢুকেছিল। তখন বাবা বলল, মান্নান সাহেব আপনার ছেলেগুলো আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আপনি একটু দেখেন। কিন্তু সেদিন তিনি তার ঘরের দরজাটি আর খুললেন না। কিন্তু যখন আমার বাবাকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে তখন তারা একটি গামছা দিয়ে বাবার চোখ বেধে একটি গাড়িতে করে নিয়ে যায়। এবং বাবা চোখ বাধা অবস্থায় গাড়িতে উঠে যান। পরে ১৮ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বদ্ধ ভূমিতে বুলেট বিদ্ধ এবং বেয়নেট চার্জ করা লাশটি খুঁজে পাই। পরে তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

বিবিসি : আপনি যখন বুঝতে পারলেন যে আপনার বাবাকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং যারা হত্যা করেছে তারা পরে মন্ত্রী হয়েছে তখন আপনার কি মনে হত?

নুজহত চৌধুরী : এই অনুভূতি প্রকাশ করা খুবই কষ্টকর। আমি যখন ছোটকালে দেখতাম আমার বাবার খুনি মওলানা মান্নান জিয়ার সময় প্রতিমন্ত্রী এবং এরশাদের সময় মন্ত্রী। এবং আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি পবিত্র জাতীয় সংসদে এত বড় অপরাধী সে আমাদের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন কারী। আপনাকে আমি হতাশা, ঘৃণা, রাগ, অভিমান কী পরিমাণ যে হয় এটা আসলে ভাষায় বুঝানো খুবই কষ্ট। অসংখ্য অভিমান, ক্রোধ তাদের প্রতি।

বিবিসি : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে বাংলাদেশে অনেকেরই ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে । আজ (মঙ্গলবার) একজনের ফাঁসির রায় চূড়ান্ত হল। এখন ফাঁসির বিরুদ্ধে বা মৃত্যু দ-ের বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলে-আপনার কী মনে হয় এই ফাঁসির বিপক্ষে অন্য কোনো রায় হতে পারত?

নুজহত চোধুরী : যদি আমাদের দেশের আইন ফাঁসি বা মৃত্যুদ- সমর্থণ না করত, আমাদের দেশে একটি খুনের জন্যতো ফাঁসি হয়। সেখানে ৩০ লক্ষ খুনের জন্য ফাঁসি হবে না। সেটা কিভাবে কোন যুক্তিতে মানুষ বলেন সেটা আমি বুঝত পারছি না। আর আমাকে যদি আপনি শহীদ সন্তান হিসেবে জিজ্ঞেসা করেন তাহলে তারা যে জঘণ্য অপরাধ করেছে যদি সম্ভব হত তাহলে তাদেরকে হাজারবার ফাঁসি দিলেও সেই শাস্তির যোগ্য শাস্তি হত কিনা আমার সন্দেহ আছে!