• শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হাসিনার সঙ্গে ট্রাম্প


প্রকাশিত: ১:৫১ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ১৭ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১২ বার

ডেস্ক রিপোর্টার :  বিশ্ব মিডিযায় ইতিমধ্যে স্বীকৃতি পাওয়া  বা মানবতার জননী হিসেবেও আখ্যায়িত বাংলাদেশের জননেত্রী শেখ Mother of humanity-www.jatirkhantha.com.bdহাসিনা এবার ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে হাসিনার যে কথা হয়েছিল- তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। শেখ হাসিনাই ট্রাম্পকে থামিয়ে  কথা বলেন! তবে শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোন সহায়তা আশা করছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য নিউইয়র্কে অবস্থানকালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢলের ব্যাপারে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বললেও তার কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা পাওয়ার আশা করছেন না। কেননা ট্রাম্প খুব ভালোভাবেই শরণার্থীদের সম্পর্কে তার মনোভাব পরিস্কার করে দিয়েছেন।জাতিসংঘ সংস্কার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখনই তাকে কয়েক মিনিটের জন্য থামান শেখ হাসিনা।

‘তিনি শুধু জিজ্ঞেস করলেন বাংলাদেশের কেমন চলছে? আমি বললাম, খুবই ভালো চলছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমদের একটাই সমস্যা, সেটা হলো মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের ঢল। কিন্তু তিনি শরণার্থীর ব্যাপারে কোন মন্তব্যই করলেন না’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অধিবেশনের আগে কয়েক মিনিটের কথায় শরণার্থী ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থান পরিস্কার হয়ে গেছে। সুতরাং এর পরেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানে তার সাহায্য চাওয়ার কোন অর্থই হয় না।রোহিঙ্গা-ডোনাল্ড ট্রাম্প-শেখ হাসিনা

তিনি বলেন, ‘আগেই আমেরিকা সরকার শরণার্থীদের জায়গা না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে। এরপর আমি তাদের কাছে, বিশেষ করে সেই সরকারের প্রেসিডেন্টের কাছে আর কী আশা করতে পারি? তিনি তো আগেই তার মনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন…তাহলে আমি আর কেন সাহায্য চাইব?’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ধনী রাষ্ট্র নয়… কিন্তু আমরা যদি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি, তাহলে আরও ৫ বা ৭ লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারব।’

হোয়াইট হাউজের এক সিনিয়র কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ট্রাম্প-হাসিনার এই কথোপকথনের বিষয়ে তিনি জানতেন না। তবে তিনি জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্প রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী এবং ‘প্রসঙ্গ তোলা হলে তিনি অবশ্যই এ ব্যাপারে সম্পৃক্ত হবেন’।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।

মিয়ানমার থেকে সেনাবাহিনীর অত্যাচারে প্রাণ বাঁচিয়ে শুধু আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা জাতিসংঘের হিসেব অনুসারে ৪ লাখ ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এত সংখ্যক মানুষকে আপদকালীন আশ্রয় দেয়াসহ সীমিত সম্পদ থেকেই সম্ভাব্য সব সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের কারণে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ কারণে শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বা মানবতার জননী হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।

রোহিঙ্গা-ডোনাল্ড ট্রাম্প-শেখ হাসিনা৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।