• বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাংক মাফিয়াদের কব্জায় ১৬০০০ কোটি


প্রকাশিত: ১১:৪৩ এএম, ৪ ডিসেম্বর ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯১ বার

এস রহমান :  ব্যাংক মাফিয়াদের কব্জায় চলে গেছে গ্রাহকদের ১৬০০০ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের লুটেরাদের bbbস্টাইলে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ব্যাংক মাফিয়া সিন্ডিকেট। ফারমার্স ব্যাংকের মাফিয়া লুটপাটের তদন্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে এই লুটপাট চক্রের নানা কাহিনী।

ব্যাংক মাফিয়া চক্রটি ইতিমধ্যে দেশের ৭টি ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা।তদন্তে প্রথমেই ধরা পড়ে ফারমার্স ব্যাংকের মাফিয়া সিন্ডিকেটের ঋৃণ জালিয়াতি। ব্যাংকটিতে ইতিমধ্যে ৭৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি ধরা পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে মিলেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৬৮৯ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৭৪৩ কোটি টাকা। এর বাইরে বেসরকারি খাতের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা।

বেহাল অবস্থা ফারমার্স ব্যাংকে-

ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানত ফেরত দিতে পারছে না ফারমার্স ব্যাংক। ভুক্তভোগী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত চেয়েও পায়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৩০০ কোটি টাকা আমানত চেয়েছিল ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বাধীন নতুন কার্যক্রমে আসা ফারমার্স ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে রাজি হয়নি। বরং তাকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। অনেক দেনদরবার শেষে গত সপ্তাহে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে বাধ্য হন মখা আলমগীর।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ ব্যাংকে  মূলধনের টাকাও লুটপাট হয়েছে। এসব ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, বেসিক, কৃষি, রূপালী, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এসব ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি খাতের আরও কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তির দুর্বলতা ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব ব্যাংক ঋণের মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় পুরো হোঁচট খেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ব্যাংকিং খাতের করুণ পরিণতি শুরু হয় ২০০৯ সালে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংক এবং একই পন্থায় সরকারি ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার পর থেকে এমন দশা সৃষ্টি হয়েছে।এর আগে ব্যাংকিং খাতে মূলধন ঘাটতি এতটা প্রকট ছিল না। তবে এ ধারা অব্যাহত থাকলে সংকট আরও বাড়বে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

এ সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের সমস্যা পুরনো। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর হস্তক্ষেপে ইতিমধ্যে ব্যাংকটির বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ফারমার্স ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দিলে করুণ পরিণতি কি হতে পারে তারই প্রমাণ ফারমার্স ব্যাংক।

সূত্র জানায়, ব্যবসার পরিবর্তে এসব ব্যাংক এখন মূলধন জোগান নিয়েই চিন্তিত। চলতি বছরের শুরুতে মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকারের কাছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংক। কারণ ঘাটতিতে থাকায় এসব ব্যাংক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেনা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আর খেলাপি বাড়লে মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হয়। সে কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। আর বাস্তবতা হল, এভাবে একদিকে জনগণের জমানো টাকা ব্যাংক থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে একশ্রেণীর মাফিয়ার হাতে, যা আদায়ও করতে পারছে না।

বিপরীতে রাষ্ট্রের তহবিল থেকে টাকা নিয়ে মূলধন ঘাটতি মেটাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি ব্যাংকগুলো। এ টাকাও জনগণের ট্যাক্সের টাকা। অথচ জড়িতদের কারও কিছুই হচ্ছে না। মাঝখানে কৌশলে জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে।তাই যতদিন ব্যাংকিং সেক্টরের এসব ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার না হবে, ততদিন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও ঋণ অবলোপন বাড়তেই থাকবে। অভিযোগ আছে, সরকারি দলের প্রভাবশালীরা এসব ঋণ অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। সে কারণে সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে।