• শুক্রবার , ২৯ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশকে চাপে রাখতেই তাসকিন-সানি’র বোলিং এ্যাকশন পরীক্ষা


প্রকাশিত: ২:৫৬ পিএম, ১২ মার্চ ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৩ বার

আসমা খন্দকার  :   বাংলাদেশকে চাপে রাখতেই  তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি’র বোলিং এ্যাকশন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে বলে সন্দেহ ভক্তদের।
taskin-sani-1-www.jatirkhantha.com.bdকঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাসকিন আহমেদ-আরাফাত সানি। হঠাৎই তাঁদের বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষার মুখোমুখি।এই সন্দেহ দূর করতে সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা দিয়ে বৈধ বোলিং অ্যাকশনের ছাড়পত্র নিতে হবে। আইসিসি অনুমোদিত চেন্নাইয়ের পরীক্ষাগারে হবে পরীক্ষা। বিরাট যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হবে দুজনকে। যন্ত্রণাটা কেমন সেটি জানেন আবদুর রাজ্জাক ও সোহাগ গাজী ।

রাজ্জাকের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছিল দুবার। প্রথমবার ২০০৪ এশিয়া কাপে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তখন মাত্রই পা রেখেছেন বাঁহাতি স্পিনার। পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সন্দেহ প্রকাশ করা হলো তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে। সেবার গেলেও ২০০৮ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে আরেকবার প্রশ্ন উঠল রাজ্জাকের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় আইসিসি অনুমোদিত পরীক্ষাগারে উত্তীর্ণ হয়ে রাজ্জাক বাংলাদেশ দলে ফিরলেন পরের বছর জুনে।

এক টেস্টে সেঞ্চুরি-হ্যাটট্রিক করা সোহাগ গাজীও একই অভিজ্ঞতার শিকার। ২০১৪ সালের আগস্টে ক্যারিবীয় সফরের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রশ্নবিদ্ধ হয় সোহাগের বোলিং অ্যাকশন। অ্যাকশন নিয়ে কাজ করার পরও ইংল্যান্ডের কার্ডিফে দেওয়া প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি সোহাগ। পরে আরও কিছু কাজ করে পরীক্ষা দেন ভারতের চেন্নাইয়ে গিয়ে। ওই পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করেই গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি আইসিসি তাঁর বোলিং অ্যাকশন বৈধ ঘোষণা করে।

অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠা একজন বোলারের কাছে বড় আঘাত। রাজ্জাক কাল বললেন, ‘যেটা নিয়ে এত দিন সাধনা করলেন, হঠাৎ জানলেন সবই ভুল! এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কঠিন পরিস্থিতি মনে হয় না একজন খেলোয়াড়ের জীবনে আসতে পারে। অবসর নেওয়ার সময়ও বোধ হয় কারও এত খারাপ লাগে না!’

এমন পরিস্থিতিতে জেঁকে বসে বিষম চাপ। আত্মবিশ্বাসে লাগে বিরাট ধাক্কা। মনে হয়, পৃথিবীর আলো-হাওয়া, রং-রূপ কিছুই তাঁর নয়। দুঃসহ দিনগুলোর কথা মনে আছে সোহাগের, ‘মনে হতো মাথার ওপর বিরাট এক বোঝা নিয়ে ঘুরছি। এটা যে বয়ে বেড়ায়, সেই বোঝে। কী যে কষ্ট! যত দিন পরীক্ষার ফল না আসে, পৃথিবীর কিছুই ভালো লাগে না।’

কঠিন সেই দিনগুলোয় রাজ্জাক ভেঙে পড়েননি। দৃঢ়প্রত্যয়ে চালিয়েছেন ফিরে আসার লড়াই। ফলও তিনি পেয়েছেন। বোলিং অ্যাকশন শুধরে অনেক বোলারকেই অতীতে ‘নখদন্তহীন বাঘে’ পরিণত হতে দেখা গেছে। কিন্তু রাজ্জাকের বোলিংয়ের ধার কমেনি। ২০০৮ সালের অক্টোবরের আগে ৮১ ওয়ানডেতে তাঁর উইকেট ছিল ১১১টি। ম্যাচপ্রতি উইকেট ১.৩৭। ফিরে আসার পর ৭১ ওয়ানডেতে উইকেট ৯৬; ম্যাচপ্রতি ১.৩৫।

ফিরে আসার সেই লড়াইয়ে রাজ্জাককে ভীষণ সহায়তা করেছিলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক ফিল্ডিং কোচ ও বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি সালাউদ্দিনের কাছে কৃতজ্ঞ, ‘অনেক মানুষ তখন নেতিবাচক কথা বলেছে। সালাউদ্দিন ভাইকে বলতাম, দেখবেন আমার কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেছিলেন, তুই যদি সমস্যা শুধরে ফেলিস, দেখবি বলের ধার আরও বাড়বে। সত্যি বলতে, ওই পরীক্ষার পর আমার বোলিং-বৈচিত্র্য বেড়েছে।’
সোহাগের ক্ষেত্রে অবশ্য ঘটেছে উল্টোটা।

ক্যারিয়ার তাঁর দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে—বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আগে ও পরে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সোহাগ খেলেছেন মাত্র একটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। তিনি স্বীকার করলেন, ওই ঘটনায় বিরাট ধাক্কা খেয়েছে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। কিছু প্রশ্ন তুললেন সোহাগ, ‘অনেক দিন খেলার পর কেন অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে? কেন শুরুতেই ধরা হয় না? হঠাৎ এমন প্রশ্নের মুখে পড়লে খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারটা থমকে যায়। ওপর থেকে হঠাৎ নিচে পড়ে গেলে আবার ওপরে উঠতে সময় লাগে।’কঠিন পরিস্থিতি সামলে উঠতে সানি-তাসকিনের প্রতি রাজ্জাক-সোহাগের পরামর্শ অভিন্ন, ‘চাপ নেওয়ার কিছু নেই। মাত্রই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে; প্রমাণ তো হয়নি। আর প্রমাণ হলেও ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। সুযোগ থাকবে ফিরে আসার।’