• শনিবার , ২০ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধা নারীর ২৭ বছরে সন্তান লাভ-ডিম্বাশয়ে টিস্যু পুনঃস্থাপনে মহাসাফল্য


প্রকাশিত: ১০:২০ এএম, ১১ জুন ১৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৬৬ বার

Manal al-Sharifএএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি অবলম্বনে আসমা খন্দকার. ঢাকা: ডিম্বাশয়ের টিস্যু পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে সন্তান ধারণের ক্ষমতা ফিরে পেয়ে বিশ্বে প্রথমবারের মতো মা হলেন বেলজিয়ামের এক নারী।বন্ধা নারীর ২৭ বছরেwoman সন্তান লাভ-ডিম্বাশয়ে টিস্যু পুনঃস্থাপনে মহাসাফল্য ।
শৈশবেই তাঁর রক্তস্বল্পতা রোগ বা সিকল-সেল অ্যানিমিয়া ধরা পড়ে। এ জন্য চিকিৎসকেরা কোমোথেরাপি দেন এবং অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করেন। কিন্তু এতে ডিম্বাশয় বিকল হওয়ার আশঙ্কাও ছিল। তাই আগেই তাঁর ডান ডিম্বাশয় অপসারণ করা হয় এবং এর টিস্যু ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য তা হিমায়িত করে চিকিৎসকেরা সংরক্ষণ করেন। পরিণত বয়সে সেই টিস্যু পুনঃস্থাপন করানোর পর গত বছরের নভেম্বরে তিনি সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন।
প্রাপ্তবয়স্ক নারীর শরীর থেকে সংগৃহীত টিস্যু ব্যবহার করে আগেও অনেক শিশুর জন্ম হয়েছে। কিন্তু বয়ঃসন্ধির আগেই ডিম্বাশয়ের টিস্যু অপসারণ করা হয়েছে—এমন কোনো নারীর সন্তান প্রসবে সাফল্যের ঘটনা এটিই প্রথম। হিউম্যান রিপ্রোডাকশন সাময়িকীতে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ব্রাসেলস ফ্রি ইউনিভার্সিটির চিকিৎসক ইসাবেল দোমেস্তের বলেন, চিকিৎসাক্ষেত্রে এটি এক বড় অগ্রগতি। কারণ, এই প্রক্রিয়ার চিকিৎসায় সম্ভবত শিশুরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। শিশুদের শরীরে মারাত্মক অ্যানিমিয়া শনাক্ত করার পর যে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তাতে তাদের ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বড় হয়ে তারা যদি মা হতে চায়, সে জন্য ডিম্বাশয়ের টিস্যু হিমায়িত করে রাখাটাই একমাত্র উপায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারীর জন্ম কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তাঁর শরীরে ধরা পড়ে জিনগত রক্তরোগ সিকল-সেল অ্যানিমিয়া। ১১ বছর বয়সে তিনি বেলজিয়ামে পাড়ি দেন। তখন চিকিৎসকেরা দেখতে পান, রোগটি এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে যে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হবে। এ জন্য কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া প্রয়োজন।
১৩ বছর ১১ মাস বয়সে তাঁর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন সফলভাবেই সম্পন্ন হয়। এরপর তাঁকে টানা দেড় বছর কিছু ওষুধ সেবন করতে হয় এবং তাঁর বাঁ ডিম্বাশয় বিকল হয়ে যায়। ১০ বছর পর ওই নারী মা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন দোমেস্তের ও তাঁর সহযোগীরা। তাঁরা ডিম্বাশয়ের চারটি টুকরো বা অংশ তৈরি করে ওই নারীর অবশিষ্ট বাঁ ডিম্বাশয়ে সংযোজন করেন। আর ডান পাশে সংযোজন করেন এ রকম আরও ১১টি অংশ। পাঁচ মাস পর ওই নারীর নিয়মিত ঋতুস্রাব শুরু হয়। কিন্তু তখন আরেকটি সমস্যা দেখা দিলে তাঁর সন্তান জন্মদানের আশা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। তাঁর পুরুষ সঙ্গী সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়েন। ওই দম্পতি ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়ায় (টেস্টটিউব বেবি) সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে তাঁদের সম্পর্কই ভেঙে যায়।
ডিম্বাশয়ের টিস্যু পুনঃস্থাপনের দুই বছরেরও বেশি সময় পর ওই নারী ২৭ বছর বয়সে প্রাকৃতিক উপায়েই গর্ভধারণ করেন। তাঁর নতুন সঙ্গী এ সন্তানের বাবা। গত নভেম্বরে জন্মের সময় তাঁদের ছেলেটির ওজন ছিল ৩ কেজি ১০০ গ্রাম। রোগীর ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তাঁর ডিম্বাশয়ের কিছু অংশ এখনো সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
দোমেস্তের বলেন, ডিম্বাশয়ের টিস্যু পুনঃস্থাপনের ওই প্রক্রিয়াটি বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। কারণ, খুব অল্প বয়সী মেয়েদের ওপর এই চিকিৎসা প্রয়োগ করতে হয়। ডিম্বাশয় বিকল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি যাদের খুব বেশি, শুধু তাদের ওপরই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা হবে, নাকি অল্প ঝুঁকি থাকলেও একই চিকিৎসা দেওয়া উচিত, তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
প্রজননে অক্ষমতার বিরুদ্ধে সাফল্যের এই প্রক্রিয়াকে অন্য বিশেষজ্ঞরা স্বাগত জানিয়েছেন। তবে এ চিকিৎসার নৈতিক বাধা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্রিটিশ ফার্টিলিটি সোসাইটির প্রধান অধ্যাপক অ্যাডাম ব্যালেন লন্ডনের সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারে (এসএমসি) বলেন, মনে রাখতে হবে, কেমোথেরাপি গ্রহণকারী অনেক শিশু খুব নাজুক থাকে। আর ওই অবস্থায় তাদের ডিম্বাশয়ের টিস্যু অপসারণের অস্ত্রোপচার করা খুব কঠিন।