• বুধবার , ২৪ এপ্রিল ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর বিমানের নাট ঢিলা- নাটেরগুরু কে? মধ্যরাতে মামলা


প্রকাশিত: ৩:০০ এএম, ২১ ডিসেম্বর ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২২ বার

 
বিশেষ প্রতিনিধি :   প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে’র নাট ঢিলা-কাহিনীর নাটেরগুরু কে তা নিয়ে pmচলছে রহস্য? এনিয়ে মধ্যরাতে মামলা করা দায়ের হয়েছে। বিমানের পরিচালক (রক্ষণাবেক্ষণ) উইং কমান্ডার (অব.) এম এম আসাদুজ্জামান বাদি হয়ে চিফ টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন।
pm-2
বিমানবন্দর থানার ওসি নূরে আজম মিয়া জানান, রাত ১২টার দিকে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। দায়ের করা মামলার নম্বর ২৩। নূরে আজম বলেন, ‘মামলার পরপরই আমরা আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চালাবো।’ তবে রাতে কতজন আসামিকে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালানো হয়েছে সে ব্যাপারে কোন তথ্য মেলেনি।

মামলায় অপর আসামিরা হলেন, বিমানের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (প্রডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স) এস এ সিদ্দিক ও প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (সিস্টেম অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) বিল্লাল হোসেন, প্রকৌশল কর্মকর্তা এস এম রোকনুজ্জামান, সামিউল হক, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, লুৎফুর রহমান ও জাকির হোসাইন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বোয়িং ৭৭৭-ইআর ৩০০ উড়োজাহাজ ‘রাঙ্গা প্রভাত’গত ২৭ নভেম্বর ৯টা ১৪ মিনিটে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। ৩৬ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে ৮৫০ কিলোমিটার গতিতে উড়ন্ত অবস্থায় উড়োজাহাজের মনিটরের মাধ্যমে বাম দিকের ট্যাংকিতে ইঞ্জিন ফুয়েলের পরিমাণে গরমিল ধরা পড়ে।mm

ইঞ্জিনের তেলের পরিমাণ হ্রাসের পাশাপাশি এয়ার প্রেসারও দ্রুত কমতে থাকে। এই অবস্থায় ক্যাপ্টেন উড়োজাহাজটি ৩৬ হাজার ফুট থেকে ৩০ হাজার ফুটে নামিয়ে আনেন। পরে ক্যাপ্টেন গতিপথ পরিবর্তন করে নিকটবর্তী তুর্কমেনিস্তানের আশগাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করান।
সেখানে কারিগরি ত্রুটি অপসারণের চার ঘণ্টা পর উড়োজাহাজটি প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বুদাপেস্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ ঘটনার ২৮ নভেম্বর তিনটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়।

এরমধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ফজল মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও ফ্লাইট অপারেশন ইন্সপেক্টর ক্যাপ্টেন মো. ফরিদুজ্জামানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের অপর একটি কমিটি গঠন করা হয়।

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বিমানমন্ত্রী পৃথক তিন তদন্ত কমিটি চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি)’ অনুসরণ করা হয়নি। বোয়িং কোম্পানির চেকলিস্টও উপেক্ষা করা হয়েছে। বোয়িং ৭৭৭ ইআর ৩০০ এই উড়োজাহাজে দুটি ইঞ্জিন রয়েছে। এর মধ্যে একটি ইঞ্জিনের ওয়েল ট্যাংকির নাট বোল্ট ঢিলা ছিল। ওই ইঞ্জিনের তেল চুইয়ে পড়তে থাকার কারণে তেলের চাপ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।

ফলে ককপিটের মনিটরে ‘লো ওয়েল প্রেসার’সংকেত দেখা যায়। ওই সংকেত পাওয়ার পর চেকলিস্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনটি বন্ধ করে অন্যটি চালু করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনটি চালু রেখেই পাইলট তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করান।

এর আগে গতকাল দুপুরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে বিমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম, মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম গোলাম ফারুক, বিমানের এমডি মোসাদ্দিক আহম্মেদ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে মামলাটির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।

জানা গেছে, রাতেই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল বিকালে জানান, মামলার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পৃথক ৩টি তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ করে মামলার এ খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।