• বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ ও ডিবিকে প্রভাবিত করে যশোরে জোড়া খুন..


প্রকাশিত: ৪:১৮ এএম, ১৬ অক্টোবর ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৩ বার

যশোরের সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রাম থেকে গত সোমবার রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সালেহা বেগমের ছেলে সোহাগ হোসেনকে। পরদিন মা খবর পান, তাঁর ছেলের লাশ পাওয়া গেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি মাঠে। বাড়িতে এখন মাতম চলছে। ছেলের এমন মৃত্যুর পর স্বজনেরা কী বলে সান্ত্বনা দেবেন মাকে?  গতকাল রাজাপুর গ্রাম থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

 

 

 

 

 

 

স্টাফ রিপোর্টার.যশোর:
‘গাড়িতে তোলার আগে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। কিছুদূর যাওয়ার পর কালো কাপড় দিয়ে চোখ বাঁধা হয়। আমাদের যে গাড়িতে তোলা হয়, ওই গাড়িতেই ছিলেন সোহাগ হোসেন।গতকাল বুধবার এমন দাবি করেছেন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া দুই তরুণ মহসীন হোসেন ও মো. অপু।

গত সোমবার রাতে যশোর সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রাম থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে হাদি-উজ-জামান ও সোহাগ হোসেনের সঙ্গে তুলে নেওয়া হয়েছিল এ দুই তরুণকেও। চারজনেরই বাড়ি রাজাপুর গ্রামে। এর মধ্যে মহসীন হোসেন মুদি ব্যবসায়ী আর মো. অপু ধোপার কাজ করেন। ওই রাতে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হলেও পরদিন সকালে কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকার একটি মাঠে হাদি-উজ-জামান ও সোহাগ হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে নিহতদের পরিবার বলছে, পারিবারিক বিরোধের কারণে পুলিশ ও ডিবিকে প্রভাবিত করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কেউ। এলাকাবাসীর ভাষ্য, পারিবারিক বিরোধ থাকতে পারে হত্যাকাণ্ডের পেছনে।

মো. অপু বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে মহসীনের বাড়ির পাশের চায়ের দোকানে যাই আমরা। হাদি ও সোহাগ দোকানে আগে থেকেই ছিল। কিছুক্ষণ পর ডিবি পুলিশের কোট পরা সাত-আটজন লোক সেখানে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমার আর মহসীনের হাতে হ্যান্ডকাপ পরায়। এ সময় হাদি ও সোহাগ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ধাওয়া দিয়ে তাদের ধরে ফেলে ডিবি।’
অপু বলেন, ‘চা-দোকান থেকে ১০০ গজ দূরেই ঢাকা-যশোর মহাসড়ক। সেখানে আগেই চারটি গাড়ি দাঁড়ানো ছিল।

একটি গাড়িতে তোলা হয় সোহাগসহ আমাদের তিনজনকে। অন্য গাড়িতে তোলা হয় হাদিকে। গাড়িটি যশোরের দিকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে যাওয়ার পর বাহাদুরপুর স্কুলের কাছে গেলে আমাদের তিনজনের চোখ বাঁধা হয়। এ সময় ডিবির একজন ফোনে কার সঙ্গে কথা বলেন। আমাদের নামে কোনো মামলা আছে কি না, সে খবর তিনি জিজ্ঞেস করছিলেন। রাত দুইটার দিকে যশোরের সাতমাইল এলাকায় গিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় আমাদের।’
চায়ের দোকানদার আলামিন বলেন, ‘রাতে সাত-আটজন লোক আসে দোকানে। তাদের গায়ে ডিবি লেখা কোট ছিল। সবার কাছে অস্ত্র ছিল।’

মহসীন বলেন, তাঁদের যে গাড়িতে তোলা হয়, সেটি ছিল পুলিশের গাড়ি। তাঁর মুঠোফোনটিও তাঁরা রেখে দেন। তাঁদের সবার কাছে অস্ত্র ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘একজন আরেকজনকে স্যার স্যার করে ডাকাডাকি করছিল।’

তবে ডিবির যশোর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ডিবির কোনো দল সেদিন ওই ধরনের অভিযানে যায়নি। ওসি বলেন, ডিবি লেখা কটি (কোট) ও হ্যান্ডকাপ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কোনো চক্র ডিবির কটি ও পুলিশের হ্যান্ডকাপ ব্যবহার করে ওই দুজনকে হত্যা করতে পারে।

জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হাদির মা রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে গতকাল ঝিনাইদহের কলীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় রাজাপুরের পাশের গ্রাম নোঙ্গরপুরের বাসিন্দা হাসান, কামালসহ ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে হাদির ভাই আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা শুনেছি, পুলিশ হাদিকে ধরে নিয়ে যায়।’ তাহলে অন্যদের নামে কেন মামলা করা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
নিহত সোহাগের বাবা রফিউদ্দীন বলেন, পুলিশ ও ডিবিকে প্রভাবিত করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা হাদি ও সোহাগকে হত্যা করিয়েছে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইনামুল হক বলেন, নিহত দুজন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। হাদির বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় পাঁচটি খুন এবং চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে মোট ১১টি; আর সোহাগের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, অস্ত্রসহ মোট চারটি মামলা রয়েছে।

পারিবারিক বিরোধ: যশোর সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা হয় এলাকাবাসীর সঙ্গে। তাঁরা বলেন, হাদিদের সঙ্গে নোঙ্গরপুর গ্রামের খলিল পরিবারের বিরোধ রয়েছে। দুই পরিবারের বিরোধে ইতিপূর্বে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী বলেন, ২০০৯ সালে খলিলুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় খলিলুরের ছেলে হাসান হাদি ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর আগে ১৯৮৬ সালে হাদির দুই চাচা ওমর আলী ও খানজাহান আলীকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় খলিলুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করে মামলায় করা হয়েছিল। সেই থেকে খলিলুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে হাদিদের পরিবারের বিরোধ চলে আসছে।