• বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘থ্রিল অব দ্য চেস্ট: দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট গান্ধীজ সেক্স লাইফ’


প্রকাশিত: ৮:৩৬ পিএম, ২৬ আগস্ট ১৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৩৭ বার

মোহাম্মদ আলী বোখারী :
GGGGGGGGGGGGমহাত্মা গান্ধীর যৌনজীবন নিয়ে ইতিহাস গবেষক ও টেলিভিশন প্রযোজক জ্যাড এডামস রচিত ‘গান্ধী: নেইকেড অ্যাম্বিশন’ নামে একটি বই রয়েছে। সে বিষয়ে ব্রিটেনের ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ পত্রিকার শিল্প ও বিনোদন পাতায় মুদ্রিত গান্ধীর দুই স্কন্ধে হাস্যোজ্জ্বল শয্যাসঙ্গীনি মনু ও আভার ছবি সম্বলিত লেখকের নিবন্ধের শিরোনাম- ‘থ্রিল অব দ্য চেস্ট: দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট গান্ধীজ সেক্স লাইফ’। অর্থাৎ সতীত্বের শিহরণ: গান্ধীর যৌনজীবনের সত্যাবলী। অনলাইন বুক স্টোর আমাজন ছাড়াও বইটি কিন্ডেলে পাওয়া যায়। ইংরেজিতে লেখা ২৮৮ পৃষ্টার এ বইয়ের প্রকাশক লন্ডনেরই কোয়েরকাস বুকস।
ভারতীয় উপমহাদেশে অবিস্মরণীয় মর্যাদায় সমাসীন আধ্যাত্মিক ও অসহিংস আন্দোলনের প্রাইপুরুষ ও ভারতের জাতির পিতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতায় তার অসহযোগপূর্ণ ‘সত্যগ্রহ’ সারা পৃথিবীতে নাগরিক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়। সেই আলোকে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ জ্যাড এডামস গুজরাটে গান্ধীর জন্ম, তার বেড়ে ওঠা ও ১৯৪৮ সালে এক হিন্দু সন্ত্রাসী কর্তৃক প্রাণনাশের ঘটনাবলী তুলে ধরেন। একই সঙ্গে লেখক তুলে ধরেন- কী করে তার জীবনাদর্শ বিশ্বে পরিবর্তন বয়ে আনে: ভিক্টোরিয়ান লন্ডনে ব্যারিস্টারি অর্জন থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বোয়ের যুদ্ধকালীন নাগরিক আন্দোলন পরিচালনা, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে নেতৃত্বদান, ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে স্বায়ত্বশাসনের দাবি এবং ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের বিরোধীতায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গারোধে আমরন অনশন। পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন চিত্রপটে লেখক দেখিয়েছেন আজকের বিশ্বে গান্ধীর ব্যতিক্রমধর্মী জীবন ও দর্শনের প্রয়োজনীয়তা।
Gandi-2ওই বইটি প্রসঙ্গে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকা প্রকাশিত নিবন্ধের ছবির ক্যাপশনে বলা হয়েছে- ধর্মীয় সতীত্ব যখন দায়বদ্ধ, তখন গান্ধীর জীবনাচারে উলঙ্গ বালিকার পাশে শয়ন নিয়ে এ বইটির অবতারণা। বাস্তবে তিনি ছিলেন যৌনপাগল, তাই-ই লিখেছেন তার জীবনী লেখক জ্যাড এডামস।
ওই নিবন্ধে লেখক লিখেছেন- গান্ধীর অস্বাভাবিক যৌনজীবন গোপন কোনো বিষয় ছিল না। তবু সতীত্ব রক্ষার বিষয়ে তিনি তার অনুসারীদের সব সময়ই উপদেশ দিতেন, কখনো তা বিরক্তিকরও হতো। সেই বিরত থাকার পন্থাকে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু ‘অস্বাভাবিক ও অপ্রাকৃতিক’ বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু আধ্যাত্ম সাধনায় এমন কী জটিল বিষয় গান্ধীর জীবনে দেখা দেয়, যা তাকে এমনটা নির্লিপ্তপ্রান করে তোলে?
এক্ষেত্রে লেখক তার সবিশেষ গবেষণা থেকে বলেছেন, গান্ধী সম্পর্কিত এ বিষয়গুলো তার জীবদ্দশায় দৃশ্যমান, কিন্তু তাকে ‘মহাত্মা’ বা ‘জাতির পিতা’য় সমাসীন করতে সেগুলো বিনষ্ট করা হয়েছে। বাস্তবে, ট্রাভানকোর রাজ্যের (মালায়লাম বা থিরুভানানথুপুরাম, যা বর্তমান তামিল নাডুর দক্ষিনে অবস্থিত) প্রধানমন্ত্রী তাকে ‘এ মোস্ট ডেঞ্জারাস, সেমি-রেপ্রেসড সেক্স মেনিয়াক’ বা ‘ভয়ানক ও অর্ধ-অবদমিত যৌনপাগল’ প্রতিপন্ন করেছেন।
গান্ধী ১৮৮৩ সালে গুজরাটে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৪ বছর বয়সী কস্তুরবা’র সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের স্বাভাবিক যৌনজীবন ছিল এবং পরিবারের একটি ভিন্ন ঘরে তারা বসবাস করতেন। দ্রুতই কস্তুরবা গর্ভবতী হন। দু’বছর পর মৃত্যুশয্যাশায়ী পিতার পাশে বসা গান্ধী, এক সময়ে কস্তুরবার সঙ্গে সঙ্গম করতে গেলে, ফিরে এসে দেখেন পিতা ইহলোক ত্যাগ করেছেন। এতে তরুণ গান্ধী তার ‘কামুকী যৌনাচার’ (লাস্টফুল লাভ)-কে পিতার মৃত্যুর জন্য দায়ী করলেন। তবু ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত বৈবাহিক বাদে যৌনাচারের প্রতি তিনি নির্লিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তা দক্ষিন আফ্রিকার বোয়ের যুদ্ধ ও জুলু উত্থানকালীন দারিদ্র ও কৌমার্যকে ধারন করেন। এরপর ৩৮ বছর বয়সে ১৯০৬ সালে ব্রাহ্মর্যের ব্রতে নিবেদিত হন, যা হিন্দু বিশ্বাস মতে কেবল কৌমার্য ছাড়া সম্ভব নয়। গান্ধীর জীবনে দারিদ্রকে বরন যতটা সহজ ছিল, কৌমার্য অর্জন ততটা সহজ হয়নি। তাই তিনি কতগুলো জটিল পন্থার অনুগামী হন, যা যৌনালাপ বা আচরণেও অক্ষত থাকে। এই ব্রতে অনুগামী হওয়ার এক বছরের মাঝে তিনি তার পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন’-এর পাঠকদের জানান- ‘প্রতিটি চিন্তাশীল ভারতীয়ের কর্তব্য বিয়ে না করা। আর বিয়ের ক্ষেত্রে অক্ষমদের উচিত স্ত্রীসঙ্গম থেকে বিরত থাকা’। সে জন্য তিনি আশ্রম গড়লেন, যেখানে বালক ও বালিকারা সতীত্বপূর্ণভাবে একত্রে গোসল ও শয়ন করতেন। কিন্তু যৌনালাপের জন্য শাস্তি পেতেন। নারী ও পুরুষকে বিচ্ছিন্ন করা হতো এবং গান্ধীর পরামর্শ মতে বিবাহিতরা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গেই থাকতেন ও অবদমিত হলে শীতল স্নান নিতেন।

 

কিন্তু এই বিধি-নিষেধ বা পন্থাগুলো তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি। গান্ধীর সেক্রেটারির আকর্ষনীয়া বোন, সুশীলা নায়ার, যিনি তার বালিকা বয়স থেকেই ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন, তিনিও গান্ধীর সঙ্গে একত্রে গোসল ও শয়ন করতেন। এক্ষেত্রে গান্ধী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে জানালেন, ‘তার গোসলকালীন চোখ বন্ধ করে থাকি, জানিও না তার পরিধেয় কিছু রয়েছে কি নেই, তবে সাবান মাখার শব্দ পেতাম’। এতে আশ্রমবাসীরা ক্ষুব্ধ হত। তথাপি কস্তুরবা’র মৃত্যুর পর বয়স্ক গান্ধীর পাশে নারীর সমাগমই বাড়তে থাকে। আশ্রমের নিয়মানুযায়ী যে সকল স্ত্রীর স্বামীর সঙ্গে থাকা নিষেধ ছিল, তারা গান্ধীর পাশে যেয়ে ঘুমাতেন। গান্ধী নিজেই বলে গেছেন, ‘তার রতি ধারনে যে কেউ জয়ী হবার ক্ষমতা অর্জন করবে’।
দেখা গেছে, দুর্জেয় সময়ের জন্য বিপুল আধ্যাত্মিক বর্মের প্রয়োজন হয়। তাই ১৯৪৭ সালে যে সুশীলার বয়স হয়েছিল ৩৩, তার দ্বিগুনেরও বেশি বয়সী অর্থাৎ ৭৭ বছরের গান্ধীর বিছানায় নতুন কারো স্থান করার তাগিদ ছিল। স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বাংলায় অব্যাহত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রশমনের পরিবর্তে তিনি তার ১৮ বছরের নাতনী মনুকে ডেকে পাঠালেন এবং তার সঙ্গে শয়ন করলেন। গান্ধী মনুকে বলেছেন, ‘আমাদের দুজনকে মুসলমানরা হত্যা করতে পারে এবং সে জন্য আমাদের শুদ্ধির অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে এবং এখন থেকে আমাদের উভয়কে উলঙ্গ ঘুমাতে হবে’। অথচ ব্রাহ্মচর্চায় এমন রীতির কোনো গ্রহনযোগ্যতা নেই। তবু গান্ধী ‘যৌন অবচেতনা’র বিপরীতে সতীত্বের নতুন অনুসরনগত পদ্ধতিকে ব্যক্তিজীবনে স্থান দেন। ভারত যতই স্বাধীনতার পানে এগিয়ে যাচ্ছিল তার এ কথাগুলোও ততই উচ্চকিত হয়েছে: ‘আই হোল্ড দ্যাট ট্রু সার্ভিস অব দ্য কান্ট্রি ডিমান্ডস দিস অবজারভেন্স’। অর্থাৎ ‘আমি সেই সত্যিকার সেবাটি ধারন করেছি, যা এই দেশ চেয়েছে’।

 

গান্ধীর এ আচরণগুলো নিয়ে যখন নানা প্রশ্ন দেখা দেয়, তখন গান্ধীই তা একাগ্রে এগিয়ে নিতে সংকল্পবদ্ধ হন এবং বলেন: ‘যদি আমি মনুকে আমার সঙ্গে শুতে না দেই, অথচ যে শোওয়ার অত্যাবশ্যকীয়তা রয়েছে’। তাই তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন: ‘সেটা কী আমার দুর্বলতা নয়’? এ ভাবেই ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ স্বাধীনতা আন্দোলনে সহযাত্রী হলেন মনুর সঙ্গে তার নাতী কানু গান্ধীর ১৮ বছরের স্ত্রী আভা এবং তারা উভয়েই গান্ধীর সঙ্গে ঘুমাতে থাকলেন। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে যখন গান্ধী নিহত হলেন, তখন এই মনু ও আভাই তার পাশে ছিলেন। পরে গান্ধীর পুত্র, দেবদাস যখন মনুকে দিল্লি স্টেশনে পৌঁছে দেন, সে সময় মনুকে এ সম্পর্কিত বিষয়ে মুখ খুলতে নিষেধ করেন। অথচ সত্তরের দশকে গান্ধীর ব্রাহ্মজীবন নিয়ে সুশীলা মুখ খুললে জানা গেল: ‘লোকে যখন মনু, আভা ও আমার শয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, সেটা প্রকৃতই কোনো ব্রাহ্মচর্চা ছিল না’। এতে প্রতীয়মান হয় যে, গান্ধী যেভাবে বাঁচার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, সেটাই বাস্তবতা পেয়েছে। আর যখন এ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, তখন নিজের ইচ্ছার প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্রহ্মান্ডের (কসমিক সিস্টেম) পদ্ধতিগত পুরস্কারের কথা বলেছেন। প্রত্যেক মহাপুরুষের মতো গান্ধীও তার পথচলায় অনুশাসন প্রবর্তন করেন।
বইটির লেখক জ্যাড এডামস তার এ নিবন্ধের সমাপ্তি টেনেছেন এই বলে যে, গান্ধীর মৃত্যুর সুদীর্ঘ সময় পর্যন্ত তার যৌন বিষয়ক আচরণগুলো উপেক্ষিতই ছিল। তবে এখন সময়ের অবগাহনে গান্ধীর মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা অর্জনের পেছনে তার নিজস্ব যৌনলিপ্সার প্রেক্ষাপটকে একটি ফ্রেমে আবদ্ধ করা গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতের স্বাধীনতাকালীন গান্ধী অপরাপর রাজনীতিকদের উত্থানে পার্শ্বচরিত্রে পর্যবসিত হন। তার রতি সংরক্ষণ ভারতকে অখন্ড রাখতে পারেনি, বরং দেশটির স্বাধীনতা কংগ্রেস পার্টির নেতৃস্থানীয়রাই আপোস-রফায় বিভক্ত করেন।