• শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকায় জুবায়েরের ইয়াবা সাম্রাজ্য


প্রকাশিত: ৬:৩৬ পিএম, ২৫ আগস্ট ১৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৫ বার

 

ইয়াবার চালানসহ গ্রেপ্তার জুবায়ের (বাঁয়ে)। ছবি: প্রথম আলো

 

 

 

 

 

শফিক আজিজি, ঢাকা:   

লোকচক্ষুর অন্তরালে রাজধানী ঢাকার ভিতর ইয়াবা রাজত্ব গড়ে তুলে কোটিপতি হবার স্বপ্ন দেখছিল সে। কিন্তু গোয়েন্দা জালে আটকে ফাঁস হয়ে গেছে জুবায়েরের সব জারিজুরি। শেষমেষ লালঘরে..।
এই মহারথিকে পাকরাও করতে সক্ষম হন গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি পূর্ব জাহাঙ্গির হোসেন মাতুব্বর এর নেতৃত্বাধীন চৌকষ গোয়েন্দারা।
এই ইয়াবা সম্রাটের নাম আব্দুল্লাহ জুবায়ের। ঢাকায় জুবায়েরের ইয়াবা সাম্রাজ্য তৈরী হচ্ছিল গুলশান নিকেতন এলাকায়।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, এই ইয়াবা সম্রাটের  বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। সীমানা পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন আবদুল্লাহ জুবায়ের। নেশার এই ট্যাবলেট বিক্রি করতেন দেশের নানা প্রান্তে। লাভের খাতা ফুলে-ফেঁপে ওঠায় ২৮ বছর বয়সী এই যুবকের ইচ্ছে জাগে দেশেই ইয়াবার কারাখানা গড়ে তোলার।

কিন্তু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানে ভেস্তে গেছে জুবায়েরের সেই ইচ্ছা। জুবায়েরসহ চারজনকে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সহকারী কমিশনার মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বের একটি দল।

গ্রেপ্তার হওয়া অন্য ব্যক্তিরা হলেন আইয়ুব আলী (৪৫), শাসমুল আলম (২৪) ও মোস্তাকিন হোসেন (৩২)। এঁদের সঙ্গে ছিল ৫৫ হাজার পিস ইয়াবা এবং ইয়াবা তৈরির খুচরা যন্ত্রাংশ।

একটি পাজেরো জিপে (ঢাকা মেট্রো-ম-৫০১) করে ইয়াবার এই বিশাল চালান জুবায়ের নিয়ে যাচ্ছিলেন গুলশান নিকেতনে তাঁর ফ্ল্যাটে। ডিবির ভাষ্য, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রাস্তায় মাইক্রোবাস দিয়ে প্রতিবন্ধকতা  সৃষ্টি করে এই চারজনকে ধরা হয়। তবে মুরাদ (৩২) নামে তাঁদের সঙ্গে থাকা আরেক সঙ্গী পালিয়ে যান।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, ‘ম’ সিরিয়ালে পাজেরো জিপের নম্বর রেজিস্ট্রেশন করা হয় না। ভুয়া নম্বর প্লেট পাজেরো জিপটিতে ব্যবহার করা হচ্ছিল।

আজ সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির (পূর্ব) ডিসি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘প্রতি মাসে তিন-চারটি করে চালান কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনতেন জুবায়ের। চাহিদা বেশি হলে কোনো কোনো মাসে চালানের সংখ্যা বেড়ে যেত।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুবায়েরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিসি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, প্রায় তিন বছর ধরে ইয়াবার চোরাচালান ও বিক্রি করছেন জুবায়ের। প্রতি পিস ইয়াবা থেকে ৫০ টাকার মতো লাভ হতো। এতে করে অল্প দিনে প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন জুবায়ের।

রাজধানীর গুলশান নিকেতন এলাকার সড়ক ৫, ব্লক সির ২০৫/৩ নম্বর বাসার সাত ও আট তলায় দুটি ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। ফ্ল্যাটের ভেতর ইয়াবার কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন জুবায়ের। এ জন্য মিয়ানমার থেকে ২০ লাখ টাকায় মেশিন কেনেন তিনি।

ডিসি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কাঁচামাল আনা হলে ঝুঁকি কম, লাভ বেশি। তাই রাজধানী ঢাকার ভেতর ইয়াবার কারখানা গড়তে চেয়েছিলেন জুবায়ের। ইয়াবা তৈরি শিখতে প্রযুক্তিবিদ আনার পরিকল্পনা ছিল বলে জুবায়ের ডিবিকে তথ্য দিয়েছেন।’

জানা গেছে, জুবায়ের পড়াশোনা করেছেন ভারতের দার্জিলিংয়ে। মাদকাসক্ত হলে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়া এলাকায় জহির টাওয়ার নামে জুবায়েরের বাবা জহির আহমেদের একটি ভবন রয়েছে।