• শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ড্রাইভারের মেয়ে’র ক্রিকেটার প্রেম-বিয়ে মামলায় তোলপাড়


প্রকাশিত: ১:৫০ পিএম, ২৩ জানুয়ারী ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৭৯ বার

স্টাফ রিপোর্টার  :  তথ্য-প্রযুক্তি আইনে এক তরুণীর দায়ের করা মামলায় জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়ার আরাফাত সানি একদিনের রিমান্ডে আছেন। Arafat-Suny-Thailand-www.jatirkhantha.com.bdsany-girl-www.jatirkhantha.com.bdকরা ওই তরুণী বলেন, ‘আমি তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। সবকিছু ঠিকই ছিলো, কিন্তু হঠাৎ করেই সে চেঞ্জ হয়ে গেছে। সে কেন এমন করলো আমি বুঝতেছি না। আমি মামলা করতে চাইনি। আমি তার শাস্তি চাই। সানি এখনও বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করছে। থানায় বসেও সে অস্বীকার করেছে।’

ওই তরুণীর ভাষায়, ‘কান্নাকাটি করে’ সানি তার বিয়ে ভেঙে দেন। পরিবারের অমত ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে গোপনে তারা বিয়ে করেন। সম্প্রতি সামাজিক স্বীকৃতি চাওয়ার পর থেকেই সানি তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। বিয়ের কথাও অস্বীকার করে সানি। তাই সানির আসল চেহারা সবার সামনে তুলে ধরতেই তিনি মামলা করেছেন। তিনি বলেন, ‘সানি ভালো মানুষের মাস্ক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার আসল চেহারা মানুষ দেখুক। আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা মানুষ জানুক।’

তিনি বলেন, ‘এক কমন বন্ধুর মাধ্যমে ২০০৯ সালে ধানমণ্ডিতে আমাদের পরিচয় হয়। তখন আমি স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সানি ধানমণ্ডিতে অনুশীলন করতে আসতো। ওই সময় তাকে কেউ চিনতোও না। তখন সে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগও (বিপিএল) খেলার সুযোগ পায়নি। আমাদের নিয়মিত ফোনে কথা ও দেখা হতো।

পরিচয়ের ছয়মাস পর আমরা প্রেমে পড়ি। আমাদের এই সম্পর্ক দুই পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে আমার পরিবার আমার বিয়ে ঠিক করে। ওই সময় জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে সানি চট্টগ্রামে ছিল। আমার বিয়ের কথা জানতে পেরে সে আমার মেজো বোনের স্বামীকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে। এরপর বিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়।’

তরুণী আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে সানি ঢাকায় ফিরে ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে আমাকে বিয়ে করে। আমাদের বিয়ের দেনমোহন ছিল পাঁচ লাখ টাকা। বিয়ের পর আমি আর সানি আমার মেজো বোনের বাসায় উঠি। ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা বিষয়টি জানে। আমাকে একটি বাসাভাড়া করেও দিয়েছিল, সেখানে থাকতাম।’

তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের ২৪ মে আমরা থাইল্যান্ডে ঘুরতে যাই। সেখান থেকে ২৯ মে দেশে ফিরে আসি। এরপর আমি তাকে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বারবার বলতে থাকি। সে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। আমি একবার ওদের বাসাতেও গিয়েছিলাম। ওর পরিবারেরও অনেকে বিষয়টি জানে।’

৫ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বছর ১২ জুন রাত ১টা ৩৫ মিনিটে সানি তার নাম ব্যবহার করে নিজের মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন। ওই আইডি দিয়ে তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ও কিছু একক ছবি ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে তাকে নানারকম হুমকি দিতে থাকেন। এছাড়া তার ফেসবুক আইডিতে নগ্ন ছবি পাঠিয়েও তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

এ ঘটনায় সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়াসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায় তিনি  সাইবার অ্যাক্টে মামলা করেন। মামলা নম্বর ১১।ওই তরুণীর জানান, তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাশ। চার বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। তার বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকায় ভাড়া বাসায় তারা থাকেন। তার বাবা পেশায় গাড়ি চালক।সানির কারণেই লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি বলেও অভিযোগ করে তরুণী বলেন, অনার্স তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়েছি। তবে সানির কারণে গতবছর পরীক্ষা দিতে পারেননি।

এদিকে, সানির পরিবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সানি গ্রেফতার হওয়ার পর তার মা নার্গিস আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মেয়ে পরিকল্পনা করে আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে। তারা তাকে চেনেন না। থানা পুলিশকে টাকা দিয়ে সানিকে সে গ্রেফতার করিয়েছে।’

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিল্পব কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি, ওই ছবিগুলো সানির মোবাইল থেকেই পাঠানো হয়েছিল। তার (সানি) বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে আমরা সত্যতা পেয়েছি। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের পর বিষয়টি জানা যাবে।’

বাঁহাতি স্পিনার সানির ২০১৪ সালে জাতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক হয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের কারণে পেসার তাসকিন আহমেদের সঙ্গে সানিকেও নিষিদ্ধ করে আইসিসি। পরবর্তীতে তিনি বোলিং অ্যাকশন পরিবর্তন করে পরীক্ষা দিয়ে আবার উতরে আসেন। তবে জাতীয় দলের নিউজিল্যান্ড সফরে তার জায়গা হয়নি।