• বুধবার , ২৪ এপ্রিল ২০২৪

জিফোরের অবৈধ ব্যাংকিং-৬০ কোটি টাকার বিস্ময়


প্রকাশিত: ১০:১০ পিএম, ১৬ অক্টোবর ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫১ বার

 

g4s_logo_2009_websafe_jpgশফিক আজিজি.ঢাকা:  
জিফোরের ৩ কোটি টাকা উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে এবার প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ ব্যাংকিং এর নানা তথ্য উদঘাটিত হয়েছে।র‌্যাব বলেছে, জিফোরের চোর ধরতে গিয়ে এবার তারা অবৈধ ব্যাংকিংয়ের নানা তথ্য উদঘাটন করেছেন। এযেন কেঁচো খুঁড়তে শাপ বেরিয়ে আসার মত অবস্থা। প্রতিষ্ঠানটি মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গেও জড়িত রয়েছে কিনা তারও ডালপালা মেলেছে।যেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে জিফোরের টাকা চুরির আগে ওই প্রতিষ্টানের ভল্টে ৬০ কোটি টাকা থাকা নিয়ে নতুন করে তোলপাড় চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে কোন তফসিলি ব্যাংকের ভল্টেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ছাড়া এত বিপুল পরিমান টাকা রাখার নিয়ম নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহি পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম কামাল ভূঁইয়া জাতিরকন্ঠকে জানান, কোন তফসিলি ব্যাংকেও এক বিপুল পরিমান টাকা রাখতে পারেনা।সেখানে জিফোর কার অনুমতি নিয়ে এত বিপুল পরিমান টাকা ভল্টে রাখলো তা নিয়ে রিতীমত বিস্মিত হতে হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।কমিটিকে জিফোরের সাবির্ক কাগজপত্র খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গেও জড়িত রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

g-4এদিকে নির্যাতিত নারী ও গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিতে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা জিফোর সিকিউরিটিজের তিন কোটি টাকা চুরি করা হয় বলে দাবি করেছেন র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার শহীদুল ইসলাম ওরফে শান্ত। রোজা ও কোরবানির ঈদের আগে বেতন-বোনাস না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। তবে জিফোর কর্তৃপক্ষ বেতন-বোনাস না দেওয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।
র‌্যাব-৭-এর সদস্যরা গতকাল বুধবার সকালে রাঙামাটি থেকে শহীদুলকে গ্রেপ্তার করেন। পরে বেলা ১১টায় তাঁকে পতেঙ্গায় র‌্যাব-৭-এর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি চুরি করার উদ্দেশ্য এবং পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন।
গত রোববার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার পর চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকায় অবস্থিত জিফোর সিকিউরিটিজের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে তিন কোটি টাকা চুরি হয়।

ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ চুরি হওয়া তিন কোটির মধ্যে দুই কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা সিটি কলেজের মসজিদের পাশে একটি ঘর থেকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় সিটি কলেজ মসজিদের মুয়াজ্জিন বশিরুল আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে তিন কোটির মধ্যে ৫০ হাজার টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ওই দিন জিফোরের খুলশী অঞ্চলের ভল্টে ৬০ কোটি টাকা ছিল বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে একসঙ্গে ৬০ কোটি টাকা রাখার অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

র‌্যাব কার্যালয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জিফোরের নিরাপত্তাকর্মী শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুটি ঈদের আগে বেতন-বোনাস না দেওয়ায় আমার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকে আমি টাকা চুরির পরিকল্পনা একাই করি। এরা (জিফোর সিকিউরিটিজ) মানুষকে চাপিয়ে রাখে। এরা গরিবদের শোষণ করে। আমরা গরিবরা শোষিত হচ্ছি।

শহীদুল আরও বলেন, এই তিন কোটি টাকা আমি নির্যাতিত নারী এবং গরিবদের জন্য খরচ করতাম। আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না, যার প্রমাণ এই টাকা আমি যেখানে রেখেছি, সেখান থেকে একটি টাকাও খরচ করিনি। র‌্যাব সদস্যরা আমাকে যখন রাঙামাটি থেকে গ্রেপ্তার করে, তখন আমার পকেটে মাত্র ২৫৭ টাকা ছিল। আমি ভাত খেয়েছি সবজি দিয়ে। আমি চট্টগ্রাম স্টেশন রোডের সমতা বোর্ডিংয়ে ৪০ টাকা দিয়ে রাত কাটিয়েছি। এই বোর্ডিংয়ে এক চকিতে চার-পাঁচজন থাকে। আমি চাইলে এই টাকা দিয়ে বিলাসিতা করতে পারতাম। সেটা করিনি।’ তিনি বলেন, ‘চুরির ঘটনার পর আমি চাকরি খুঁজছিলাম। রাঙামাটি গিয়েছি সার্টিফিকেট তুলতে। আমার লক্ষ্য ছিল চাকরির টাকা দিয়ে আমি খাব। এই তিন কোটি টাকা দেব গরিবদের। এই ছিল আমার উদ্দেশ্য।

তিন কোটি টাকা চুরির ঘটনায় কেউ জড়িত নয় বলে শহীদুল ইসলাম দাবি করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু আমি ভেতরে ডিউটি করতাম, তাই কোথায় কী রাখা হতো সেটা আমি জানতাম। আমার ক্ষোভ ছিল, এভাবে টাকা চুরি করে তাদের ক্ষতি করব। আমি ২ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত একটানা ডিউটি করেছি। আমাদের রাত সাড়ে তিনটা থেকে দেড় ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ ছিল।

চুরির বর্ণনা দিয়ে শহীদুল ইসলাম বলেন, আমার সঙ্গে যে সিকিউরিটি গার্ড ছিল, সে ঘুমাচ্ছিল। তার নাম রফিক। আর কন্ট্রোলার ছিলেন রবিউল। তিনিও ঘুমাচ্ছিলেন। এই সুযোগে কন্ট্রোলারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে আমি ভল্টে যাওয়ার প্রথম দরজা খুলি। এরপর দ্বিতীয় দরজা খোলার চাবি নিই। তারপর ভল্টে ঢুকি। ভল্টে ঢোকার আগে কালো মুখোশ পরে নিই। ভল্টে অ্যালার্মিং সুইচ ছিল। সুইচের তার নষ্ট করি। এরপর সকাল সাতটার দিকে তিন কোটি টাকা নিয়ে বের হয়ে যাই। রাত তিনটা ৫৭ মিনিট থেকে আমি কাজ শুরু করি। ভোর ছয়টা ৫০ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ হয়।

শহীদুল টাকাগুলো নিয়ে সিটি কলেজের মুয়াজ্জিন বশিরুল ইসলামের কাছে চলে যান বলে সাংবাদিকদের জানান। বশিরুল ইসলাম তাঁর পূর্বপরিচিত। সেখানে টাকা রেখে শহীদুল চট্টগ্রাম নগরে এক দিন অবস্থান করে রাঙামাটি চলে যান বলে জানান।

র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহমেদ গ্রেপ্তার অভিযানের বর্ণনা দিয়ে বলেন, শহীদুল ইসলাম টাকা চুরি করে মুয়াজ্জিনের কাছে রেখে যান। এক দিন চট্টগ্রাম শহরে ঘোরাফেরা করে তিনি রাঙামাটি চলে যান। সেখানে কলেজ থেকে সার্টিফিকেট তুলে তাঁর নতুন চাকরি খোঁজার পরিকল্পনা ছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের একটি দল আগের দিন মঙ্গলবার রাঙামাটি চলে যায়। বুধবার সকালে আমরা রাঙামাটি শহর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করি।
মিফতা উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘চুরির কোনো টাকা আমরা শহীদুলের কাছ থেকে পাইনি। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তাঁর কাছে ২৫৭ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন আমরা জব্দ করি।

গতকাল র‌্যাব কার্যালয়ে জিফোরের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) এস এম তারিকুল ইসলামও ছিলেন। শহীদুলের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিককের বলেন, ‘সব মিথ্যা কথা। ঈদের আগে শুধু বেতন নয়, বোনাসও দেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট খুরশিদ ইফতেজার চৌধুরী বলেন, নিয়ম মেনে যথাসময়ে সব কর্মীর বেতন আমরা পরিশোধ করেছি।’ তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠানটির এক হাজার ৮০০ জন কর্মী রয়েছে। ২০১৩ সালের জুনে নিয়োগ পান শহীদুল। দিনে ১২ ঘণ্টা কাজের ভিত্তিতে তাঁর মাসিক বেতন সাড়ে সাত হাজার টাকা।

তবে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, যাঁদের চাকরির বয়স এক বছর পার হয়নি, তাঁদের বোনাস দেওয়া হয়নি। শহীদুলের চাকরির বয়সও এক বছর হয়নি। এ জন্য তাঁকে বোনাস দেওয়া হয়নি।
এদিকে খুলশীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভল্টে একসঙ্গে ৬০ কোটি টাকার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে খুরশিদ ইফতেজার কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।