• শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চীনের ছোঁয়ায় শেয়ারবাজার গরম


প্রকাশিত: ৭:৪৬ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ১৮ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪১ বার

 

D
স্টাফ রিপোর্টার :  এবার চীনের ছোঁয়ায় বদলে গেছে শেয়ারবাজার। চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অংশীদার হওয়ার খবরে বেশ চাঙাভাবে ফিরেছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি নিয়ে টানা কয়েক দিন মন্দা কাটানোর পর সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার দুই বাজারেই মূল্যসূচক বেড়েছে পাল্লা দিয়ে, সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেন।

প্রধান বাজার ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১২৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪০০ পয়েন্টের মতো।রোববারের বাজার বিশ্লেষণ করে ডিএসইর সাবেক সভাপতি এবং ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান জাতিরকন্ঠকে বলেন, শনিবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামকেই অংশীদার হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আর্থিক ও কারিগরি দিক বিবেচনা করে শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবকেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। আমরা সর্বসম্মতিক্রমে তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।আর এই খবরেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বলে মনে করছেন এই বাজার বিশ্লেষক।এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাবে এবং প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। আর স্বাভাবিকভাবেই বিদেমি বিনিয়োগ বাড়লে স্থানীয় বিনিয়োগও বাড়বে।

সব মিলিয়ে বাজার আরও ভালোর দিকে যাবে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিক মানের একটি শক্তিশালী বাজারে পরিণত হবে। এমন আভাস পেয়েই বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখি হয়েছেন, বাজার চাঙা হচ্ছে।নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের পর শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে ডিএসইর চূড়ান্ত চুক্তি হবে বলে রকিবুর রহমান জানান।

আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে এ সব প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।কৌশলগত অংশীদার পেতে তিন মাস আগে ডিএসই আহ্বানের বিপরীতে যেসব দরপত্র জমা পড়েছিল, মঙ্গলবার ডিএসইর পর্ষদ সভায় ওই সেগুলো খোলা হয়। চীনের এই কনসোর্টিয়ামের পাশাপাশি ভারত, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি কনসোর্টিয়ামও প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে রয়েছে- ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্ট্রিয়ার ফান্ড বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক।

চীনা কনসোর্টিয়াম ৯৯০ কোটি টাকায় ডিএসইর ৪৫ কোটি বা ২৫ শতাংশ শেয়ার (প্রতিটি ২২ টাকা দরে) কিনে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। সেসঙ্গে ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) খরচ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে তারা।তিন দেশি কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর ২৫ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ার প্রতিটি ১৫ টাকা দরে কিনতে প্রস্তাব দেয়। কারিগরি সহায়তারও প্রস্তাব দেয়, কিন্তু কত টাকার তা স্পষ্ট করেনি।

এদের মধ্যে শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকেই গ্রহণ করেছে ডিএসই।রকিবুর রহমান বলেন, শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাবই আমাদের কাছে যুগোপযোগী মনে হয়েছে। তাদেরকে কৌশলগত অংশীদার করতে পারলে ঢাকার পুঁজিবাজারে চেহারা পাল্টে যাবে বলে আমরা মনে করি।ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে মালিকানায় আসার পর এ কনসোর্টিয়াম তাদের প্রতিনিধিকেও ডিএসইর পর্ষদে বসাবে।

“তখন ডিএসইর চেহারা আমূল পাল্টে যাবে,”বলেন এক পরিচালক। চীনের প্রধান তিনটি স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে সাংহাই ও শেনচেন রয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে। বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ১০টি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাতেও রয়েছে তারা।সাংহাই স্টক একচেঞ্জের বাজার মূলধন সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। শেনচেন স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন দুই দশমিক দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।অপরদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ৫১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

বড় এ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হলে দেশি-বিদেশি কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আরও আস্থাশীল হয়ে উঠবে বলে মনে করেন ডিএসইর এই পরিচালক।এছাড়া কৌশলগত অংশীদাররা এলে ঢাকার বাজারে পণ্যের ভিন্নতাও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

২০১৩ সালের ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ১৮০ কোটি শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ কৌশলগত অংশীদারদের কাছে বিক্রি করা যাবে। ৩৫ শতাংশ বিক্রি করতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। বাকী ৪০ শতাংশ থাকবে ট্রেক হোল্ডার বা মালিকদের কাছে।

উন্নত প্রযুক্তি সুবিধা, ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসা উন্নয়নে পরামর্শক সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে কৌশলগত অংশীদার নিতে চায় ডিএসই।এর আগেও একবার কৌশলগত অংশীদারের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএসই কর্তৃপক্ষ। তখন দেশি-বিদেশি কয়েকটি কোম্পানি দরপত্র জমা দিলেও ডিএসইর কাছে ওইসব প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, রোববার ডিএসইতে ৪৫৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার‌্যদিবসের চেয়ে প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা বেশি।গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৩০০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।রোববার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৩৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৯৩টির, কমেছে  মাত্র ২৭টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টি কোম্পানির দর।

ডিএসইএক্স বা প্রধান মূল্য সূচক ১২৮ দশমিক ৩২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৯৩ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ৪১২ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২ হাজার ২৫৫ পয়েন্টে।

অন্যদিকে সিএসইতে ২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৯৫ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৮২৪ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে।লেনদেন হয়েছে ২৪৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৪৬টির, কমেছে ১৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টির দর।