• শনিবার , ২০ এপ্রিল ২০২৪

কান্দিরপাড়ে তনুদের কান্না কেউ শুনেনা..


প্রকাশিত: ৭:৩৫ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২১৯ বার

কুমিল্লা প্রতিনিধি :  কান্দিরপাড়ে তনুদের কান্না কেউ শুনেনা..। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের 66শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে গানে গানে প্রতিবাদী সমাবেশ করেছেন বাউলশিল্পীরা। সমাবেশে কাঁদলেন ও কাঁদালেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম। এ সময় সেখানে এক বেদনাবিধুর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরে কান্দিরপাড় থেকে নগর উদ্যানে পদযাত্রা করেন বাউলশিল্পীরা। এতে নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।

33তনু হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস উপলক্ষে গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার উদ্যোগে বাউলদের নিয়ে গানে গানে ওই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশে ডিএনএ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বেলা সাড়ে ১১টায় কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে কুমিল্লার অচিন পাখি বাউলগোষ্ঠীর অন্তত ৪০ জন শিল্পী জড়ো হন। এরপর সমাবেশে যোগ দেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম ও তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে রুবেল।

7সমাবেশে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কিছু বলার আগেই তনুর মা অঝোরে কাঁদলেন। এ সময় পুরো সমাবেশ স্থল স্তব্ধ। কিছুক্ষণ পর আবার মাইক্রোফোন হাতে নিলেন। এবারও কাঁদলেন। তাঁর সঙ্গে কাঁদল উপস্থিত প্রতিবাদী জনতা।

সেখানে আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মেয়ে গেল, ছয় মাস অইল। কই, কিছুই তো অইল না। ওরা (সিআইডি) দেখতাছি, খালি দেখতাছি কইতেছে, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) পাল্টায়। মামলার কিনারা হয় না। নাজমুল করিম (সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার) আমাদের সাহস দিয়েছে। বিচার অইব কইছে। এরা সাহসও দেয় না, বিচারও করে না।’

তনুর মা আরও বলেন, ‘এত কষ্ট করে মেয়েকে মানুষ করলাম। কী হইল? মেয়েকে হারালাম। মেয়েটা পাইতাম না, বিচার চাই। এখন মনে হয় ছেলে দুইটাকে নিয়ে বাঁচতে পারব না। বাসা থেকে বের হলে এফআইয়ের লোকজন ছবি তুলে রাখে। আমি বাইর হতে পারি না। তনুর বাবা অসুস্থ, হার্টের রোগী। মেয়ের কথা যদি খুলে বলতে পারত, তাহলে মনটা শান্তি পেত। আমরারে চাপের ওপর রাহে ওরা। আমি দেশবাসীর কাছে বিচার চাই।’

1তনুর মা সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা (সিআইডি) বারবার তদন্ত করছে। বিচারটা কি আসলে করব? সবারই ছেলেমেয়ে আছে। ছয় মাস অইল বিচার পাইলাম না।’

তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখনো হত্যাকারীদের বিচার নিয়ে আমাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

সমাবেশে সমাপনী বক্তব্যে গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার অন্যতম সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, ‘বিভ্রান্তিকর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুলকে বদলি কিসের আলামত। আমরা ডিএনএ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার দাবি জানাচ্ছি। তনুর হত্যাকারীদের ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানাই। ছয় মাস পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ আমরা। বিচার না হলে গণজাগরণ মঞ্চের ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

সমাবেশে কুমিল্লার অচিন পাখি বাউলগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা বজলুর বাবুলের নেতৃত্বে ৪০ জন শিল্পী প্রতিবাদী গান করেন। এতে তাঁরা ‘আমরা কি বাংলাদেশের মানুষ না, মানুষ হয়ে তনুর বিচার কেন হবে না’, ‘আকাশ কান্দে বাতাস কান্দে, কান্দে তনুর মা’ এবং ‘তনু হত্যার বিচার আমরা আজও পাইলাম না’ শীর্ষক তিনটি প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন।

পরে কড়া পুলিশি পাহারায় কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর থেকে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বাউল পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি নগরের কান্দিরপাড়, বাদুড়তলা, ধর্মসাগরপাড়, জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশ দিয়ে নগর উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়। পদযাত্রায় অংশ নেন তনুর মা, ছোট ভাই, গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা ও সাধারণ জনগণ। বেলা তিনটায় নগর উদ্যানের জামতলায় তনু হত্যার বিচারের দাবিতে বাউলসংগীত পরিবেশন করা হয়।

অচিন পাখি বাউলগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা বজলুর বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মনের গহিন থেকে তানপুরা ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সমাবেশে এসেছি। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে মা জাতির কলঙ্ক থেকে যাবে। বাউলরা মা জাতির কষ্ট মেনে নিতে পারে না।’

গত ২০ মার্চ কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের কালভার্টের পশ্চিম পাশের ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২১ মার্চ বিকেলে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। বর্তমানে ওই মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।