• বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল ২০২৪

একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত সেই কুয়াকাটায় পর্যটক ভোগান্তি


প্রকাশিত: ১:৫১ পিএম, ৪ অক্টোবর ১৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৭৭ বার

Kuakataনীপা খন্দকার:   একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় কুয়াকাটা থেকে। সারাবিশ্বের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বিশেষ কদর রয়েছে এ এলাকার। কিন্তু বেড়াতে এসে মুগ্ধতার চেয়ে ভোগান্তি বেশি পোহাতে হয় পর্যটকদের। এসএম জাকির নামে এক পর্যটক বলেন, পৌর শহরে এখনও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ হয় না। সাগরের লবণ পানি একমাত্র ভরসা। অধিকাংশ সড়ক এখনও কাঁচা, নেই সড়ক বাতিও। বিস্ময়কর হলেও সত্য কুয়াকাটায় এখন পর্যন্ত নির্মিত হয়নি বাস টার্মিনাল বা যাত্রীবাহী মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌর এলাকাধীন খালসহ খাস জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। যে সাগরসৈকত নিয়ে হৈচৈ সারা দুনিয়ায়, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার অভাবে সেখানেও জমে থাকে ময়লা। কুয়াকাটার ঐতিহ্যবাহী রাখাইন সম্প্রদায়ের জন্য একটি কালচারাল একাডেমি নির্মাণ করা হলেও সেখানে নেই কোনো সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। একাডেমি ভবনটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে একটি ব্যাংকের কাছে।

kuakata-bd=৫ বছর আগে পৌরসভায় উন্নীত হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সাগরসৈকত কুয়াকাটার বাসিন্দারা পাচ্ছেন না নূ্যনতম পৌরসেবা। যদিও পৌরসভা হওয়ার পর থেকেই তারা পরিশোধ করছেন অতিরিক্ত পৌরকর। কিন্তু এখনও নির্মিত হয়নি অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা। সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় পৌর শহরের অধিকাংশ স্থানে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মতো ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বছরজুড়ে প্রকৃতির এই লীলাভূমিতে বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটক।

পর্যটন শিল্প সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে লতাচাপলী ইউনিয়নের ৩৪ নম্বর মৌজার ১১৪০ দশমিক ৫৫ একর জায়গা নিয়ে কুয়াকাটা পৌরসভা গঠন করা হয়, এর মধ্যে ২৪৩ দশমিক ৬৬ একর খাস জমি। পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর থেকেই কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশাসক হিসেবে পালন করছেন অতিরিক্ত দায়িত্ব।

পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশাসককে সহায়তার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ২০১১ সালের ৩১ মে গঠন করা হয় ১৯ সদস্যের পৌর পরিষদ পরিচালনা কমিটি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিদর্শন বাংলোর নিচতলায় স্থাপন করা হয় কুয়াকাটা পৌরসভার অস্থায়ী কার্যালয়। ২০১২ সালে কুয়াকাটা পৌরসভার নিজস্ব ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ অবধি ভবনটির নির্মাণ কাজে নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি। কুয়াকাটা পৌর শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ৫ বছর ধরে বিভিন্ন খাতে বাড়তি পৌরকর দিচ্ছেন তারা। কিন্তু নির্বাচিত পৌর পরিষদ না থাকায় আসছে না উন্নয়ন বরাদ্দ। প্রাপ্য নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী।

প্রায় সাত হাজার ভোটারের কুয়াকাটা পৌর এলাকায় নির্মিত হয়েছে অর্ধশতাধিক আধুনিক আবাসিক হোটেল ও শতাধিক খাবার হোটেল। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কয়েকশ’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে অধিকাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সময়ই নেওয়া হয়নি পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি। ফলে কুয়াকাটা পৌর শহর গড়ে উঠছে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই।

আবাসিক ও অনাবাসিক এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়ে গেছে গ্রামের মতোই। পৌর এলাকার শতকরা ৮০ ভাগ সড়ক এখনও কাঁচা। একটু বৃষ্টিতেই অধিকাংশ স্থানে জমে হাঁটু পানি। সঙ্গে আছে কর্দমাক্ত কাঁচা সড়কের ধকল। কুয়াকাটা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, যথাযথ পৌরসেবা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন। কুয়াকাটায় এর কোনোটিই নেই।

অবশ্য কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফের দাবি, এই পৌরসভার উন্নয়নে বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তিনি জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য নৌ-পুলিশের পাশাপাশি শুরু হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম। তবে পরিকল্পিত অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে দুর্ভোগ কাটছে না পৌরবাসীর।

পৌরবাসী ও পর্যটকদের দাবি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিকে পরিকল্পিত মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলা হোক। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ আবুবকর সিদ্দিক সমকালকে জানান, আগামী নভেম্বরে কুয়াকাটা পৌরসভায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভার কয়েকটি সড়ক পাকা করা হয়েছে। সৈকত সংলগ্ন সড়কে সড়ক বাতিও দেওয়া হয়েছে। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।