• শনিবার , ২০ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের মেয়র নির্বাচনে মহাগ্যাঞ্জাম!


প্রকাশিত: ৫:০৬ এএম, ১৭ ডিসেম্বর ১৭ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৩ বার

এস রহমান  :  উত্তরের মেয়র নির্বাচনে মহাগ্যাঞ্জাম!! এ আশংকা খোদ নির্বাচন কমিশন (ইসি’)র। মূল ঝামেলা uuuuহচ্ছে,৩৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিদ্যমান আইন ও বিধিমালায় নির্বাচন? আর এই ঝামেলায় নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করা হয়েছে।

৩০ নভেম্বর চিকিত্সাধীন অবস্থায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। পহেলা ডিসেম্বর থেকে পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আইন অনুযায়ী শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে ওই পদে উপনির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কিন্তু ঢাকার দুই সিটিতে যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিদ্যমান আইন ও বিধিমালায় নির্বাচন করতে নারাজ ইসি।কারণ নতুন এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মেয়াদকালের বিষয়ে আইনে স্পষ্ট বিধান না থাকা এবং নতুন ভোটারদের ভোটাধিকার নিয়ে জটিলতা হতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসির মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে আইনি দুর্বলতা উল্লেখ করে আদালতে মামলা দায়ের হতে পারে। সেক্ষেত্রে স্থগিত হয়ে যেতে পারে নির্বাচন। এসব জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের আয়োজন করা দুরূহ হবে বলেও ধারণা তাদের।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, উপনির্বাচনে নির্বাচিত একজন এমপি যেমন ওই সংসদের মেয়াদকাল পর্যন্ত এমপি থাকতে পারেন, তেমনি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচনে যিনি নির্বাচিত মেয়র হবেন, সেও মরহুম আনিসুল হকের যে বাকি মেয়াদ আছে, নির্বাচিত নতুন মেয়র সেই মেয়াদ পর্যন্ত থাকতে পারবেন।

এর সঙ্গে কোনোভাবেই নতুন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনের বিষয়টি মেলানোর সুযোগ নেই। যদি মেয়র উপনির্বাচনের সঙ্গে নতুন ৩৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন করতে হয়, তাহলে তাদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। আর যারা মেয়র উপনির্বাচনের সঙ্গে নতুন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনকে যুক্ত করে জটিলতার কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ।

তারা কোনোভাবেই মেয়র পদের উপনির্বাচন চান না। তারা চান, বাকি সময়টুকু প্যানেল মেয়র দিয়ে পার করতে। কিন্তু এটি কোনোভাবেই মানতে নারাজ উত্তর সিটির সাধারণ ভোটাররা।তাদের দাবি, কোনো জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে মেয়র পদের উপনির্বাচন বানচাল করা চলবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মেয়র পদে উপনির্বাচন চান তারা।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য জটিলতা নিরসনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করার চিন্তা করছে ইসি।  কারণ নতুন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মেয়াদকালের বিষয়টি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নির্ধারণ করার এখতিয়ার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সদ্ধিান্ত নিতে আজ রোববার বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী জানান, ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনের রোববারের বৈঠকে আলোচনা হবে।

তিনি আরও বলেন, যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন, তাদের মেয়াদকাল কতদিন হবে, সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচন করা যাবে না, সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। এছাড়া দুটি সিটি কর্পোরেশনের এলাকা সম্প্রসারণের কারণে ভোটারও স্থানান্তর হয়েছে।

এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবেন। ওই সভায় আইনি জটিলতা হতে পারে কিনা, আইন সংশোধনের প্রয়োজন আছে কী- তা নিয়ে আলোচনা হবে। যদি আইনি জটিলতা থাকে তখন স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।

ইসি কর্মকর্তা জানান, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইনে নতুন যুক্ত হওয়া এলাকার নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট বিধান থাকলেও সিটি কর্পোরেশন আইনে তা উলে্লখ নেই।আর এ কারণেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর কমিশনারদের মেয়াদ কতদিন হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার যদি এ নির্বাচনে আগ্রহী হয়, তাহলে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কাউন্সিলরদের মেয়াদ নির্ধারণ করে দিতে পারে অথবা সিটি কর্পোরেশন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারে।আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া ঝুলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।

আইনের ৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো এলাকা সিটি কর্পোরেশনভুক্ত হলে, এ আইনের সব আদেশ-নির্দেশ ও ক্ষমতা উক্ত এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, কাউন্সিলরদের মেয়াদ নির্ধারণ না করা এবং হালনাগাদ ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া নতুন ভোটারদের এ নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া না হলে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক জানান, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে জুলাই মাসে।

এরপর সেপ্টেম্বরে এসব ওয়ার্ডে নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে। এতদিন নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কিছু জানতে চায়নি। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।